‘ভালো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে গেলে হাতে কলমে শেখানোটা জরুরি। এই বইটি হাতে কলমে শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপ বলছে বাংলাদেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ১৭ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। এসব ব্যক্তির ৯২ শতাংশ চিকিৎসা নেয় না। ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই হার ১৪ শতাংশ। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা এসব কিশোর-কিশোরীর ৯৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা নেয় না। চিকিৎসা না নেওয়ার পেছনে সচেতনতার অভাব যেমনি রয়েছে, তেমনি রয়েছে দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশষজ্ঞদের ঘাটতিও। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের ঘাটতি মেটাতে কাজ করে যাচ্ছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এবার দেশের চিকিৎসকের লেখা পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পাঠ্য সহায়ক মানসিক রোগ বিষয়ক বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি)।
“Case Based Learning Exercise in Psychiatry” শিরোনামের বইটি লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক। বইটির সহ লেখক তারই ছাত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এর মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ানা হোসেন।
চিকিৎসা জীবনের বিভিন্ন কেস হিস্ট্রি থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে বইটি লিখেছেন দেশের এই দেশের খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন বইটি মানসিক রোগ বিষয়ক গ্রন্থ হিসেবে সাইকিয়াট্রির শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক হবে।
বইটি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক জানান, আমাদের দেশের সাইকিয়াট্রি রেসিডেন্টদের যেসব বই পড়ানো হয় তা বিদেশি লেখকদের। তাই এদেশের প্রেক্ষাপটে মানুষ যে সমস্ত মানসিক রোগে বেশি ভুগে থাকে সে সম্পর্কে সুপষ্ট ধারণা পেতে একটু কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই বইটি তিনি তার চিকিৎসা জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন তাই বইটিতে দেশের মানসিক রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বেশ ভালো ধারণা পাবে মনে করেন অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “আমার পেশাগত জীবনে সবচেয়ে পছন্দের কাজ ছিল শিক্ষকতা। আমি ক্লাশ নিতে ভালোবাসি। আমি ঠিক যেভাবে ক্লাশ নিতাম, ঠিক সেইভাবে এই বইটি লিখেছি। তাই এই বইটি পড়লে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান সহজ হবে। ভালো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে গেলে হাতে কলমে শেখানোটা জরুরি। এই বইটি হাতে কলমে শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এর আগে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বই লিখলেও একাডেমিক বই লেখা বিষয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেনস্ট সাইকিয়াট্রিস্ট বলেন, “এই বইটির লেখার অনুভূতি সবকিছুর চাইতে আলাদা। আমার এলপিআর চলছে, কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি অবসরে চলে যাব। আমার সবচেয় পছন্দের বিষয় ‘ক্লাশে পাঠদান’ করতে পারবো না। তবে আমি ক্লাশে না থাকলেও আমার লেখা বই ক্লাশে থাকবে এটি আমার জন্য পরম আনন্দের।”
বইটি লেখায় সহায়তার জন্য সহ-লেখক ডা. রেদওয়ানা হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “রেদওয়ানা অনেক মেধাবী একজন চিকিৎসক। সে ভবিষ্যতে দেশের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় অনেক অবদান রাখবে। আমার নেওয়া ক্লাশ গুলিকে লিপিবদ্ধ করা, বইটি সম্পাদনা করাসহ বিভিন্ন বিষয় লেখাতে তার অবদান অসামান্য। নিজের ছাত্রীকে সহ-লেখক হিসেবে পাওয়াটাও একজন চিকিৎসকের জন্য গর্বের।”
বইটি প্রকাশের জন্য তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসকে (বিএপি) ধন্যবাদ জানান। সংগনটির সাধারণ সম্পাদক ডা. তারিকুল আলম বইটি লেখা শেষ করার জন্য সবসময়ে লেগে ছিলেন উল্লেখ করে তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিনয়ী এই বরেণ্য চিকিৎসক।
আগামীকাল শনিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটি অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বইটির মোড়ক উন্মোচনের আগেই দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক।
এ প্রসঙ্গে তার সহকর্মী বিএসএমএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও মনের খবর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, “এটি আমাদের দেশের মানসিক স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের দেশে এ ধরনের বই ছিল না। এই বইটির মাধ্যমে সাইকিয়াট্রির রেসেডিন্টদের পাশাপাশি চিকিৎসকরাও উপকৃত হবে। বইটি বাংলাদেশের মানসিক রোগ চিকিৎসায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
ডা. এম এস আই মল্লিক এবং ডা. রিদওয়ানা হোসেনের দীর্ঘ সুস্থায়ুও কামনা করেন বিএপি এর সহ-সভাপতি পদে থাকা অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন:করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে