বর্তমান সময়টা প্রযুক্তি নির্ভর। তাই, ইন্টারনেট আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে। ছোট কিংবা বড়, আমরা সবাই পা দিয়েছি এই অন্তরজালের ফাঁদে। অতীতে আমরা যে সময়টাকে ‘অবসর’ হিসেবে মেনে নিতাম, বর্তমানে কিন্তু সেই সময়টা আমাদের নেই। ইন্টারনেটে আসক্তি আমাদের কাজ থেকে সময়কে কেড়ে নিচ্ছে। নিজেকে বঞ্চিত করছে সামাজিক পরিবেশ থেকেও। ইন্টারনেটে কোন কিছু অসম্ভব মনে না হলেও সবকিছুই কিন্তু ভার্চুয়াল এবং বাহ্যিকতার বাইরে।
শুনে আপনার মনে হতে পারে, আমরা তো অর্ন্তজালের মাধ্যমে অন্যজনের সঙ্গে সংযুক্ত আছিই। কিন্তু বাহ্যিকতার বাইরের পৃথিবী আর বাহ্যিকতার ভেতরের পৃথিবী কখনোই এক নয়। এই সত্য মেনেই গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ইতিহাসের সবচেয়ে কানেক্টেড প্রজন্ম যাকে বলা হচ্ছে, তারা সবচেয়ে বেশি একাকীত্বতায় ভোগে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা আমাদের মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার সাথেও সম্পর্কিত। একজন মানুষ যদি ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে তাহলে তার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ২৯% বেড়ে যায়। খারাপ সামাজিক সম্পর্কও শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।
একাকীত্ব অনেকাংশে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা আত্মহত্যার সমন। যখন আমাদের মনে হতে থাকে যে, কারো কাছে আমাদের কোনো মূল্য নেই এবং আমাদের অস্তিস্ত্ব হারিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা নিজেদের প্রতি যত্ন কমিয়ে নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেই। অনেক ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্নতা আমাদের অসহায়ত্বতাকে বাড়িয়ে আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যান্য গবেষণা থেকে জানা যায়, একাকীত্বতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং আমাদের ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এটি আমাদের ঘুমের চক্রকে নষ্ট করে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার যে চাহিদা, তার ফল অনেকটা সুদূরপ্রসারী। আমরা অনেকেই দেখি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে। কিন্তু ক’জনকেই বা দেখি এর বাইরে সময় কাটাতে। তাই, তরুণ প্রজন্মের এই একাকীত্ব বা বিচ্ছিনতায় ভার্চুয়াল জগতের মোহ অনেকটাই দ্বায়ী।
অনুবাদক: মাঈশা তাহসিন অর্থী
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে।