সমস্যা:
স্যার আমার নাম হাসিব, বয়স ২১ বছর। বর্তমানে আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছি,আমার বাড়ি রাজবাড়ী, আমার মনে হচ্ছে আমি প্রচণ্ড মানসিক সমস্যায় ভুগছি। আমি ছোট বেলায় খুব ভালো ছাত্র ছিলাম কিন্তু বর্তমানে আমি পড়ালেখায় একদম মনোযোগী হতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। যার ফলাফল আমি গতবার পরীক্ষা না দেওয়ার ফলে পুনরায় একই ক্লাসে রয়ে গেছি। পরীক্ষা আসলেই মনে হচ্ছে আমি কিছু পারিনা আমি কি পরীক্ষা দিব। প্রতিদিন ভাবি পড়ালেখায় মনোযোগ দিব কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছুই হয় না। বেশ কিছুদিন যাবত আমি একটি সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি, সে আমায় বারবার পড়ালেখার জন্য চাপ দিচ্ছে এমনকি বাসা থেকেও। যে কেউ পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলি ঠিক মত করছি, আসলে আমি সেটার কাছেও যাচ্ছি না। মিথ্যা বলার কারণে আমি নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে যাচ্ছি। নিজের অপরাধবোধকে দূর করার জন্য অন্য কাজে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করছি কিন্তু কোনোটিই আমি ঠিক মতো করতে পারছি না। যার ফলে আমি আরো সমস্যায় ভুগছি, শুধু মনে হচ্ছে আমি বোধ হয় কারো প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো না, ফলে বাবা মা কে সামাজিক অসম্মান এ পরতে হবে এবং আমি আমার জি, এফ কে হারাবো। যেটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। তাই সবসময় ভাবি যদি আমার বড় কোনো অসুখ হয় তাহলে সেটার দুহাই দিয়ে আমি আমার ব্যর্থতাকে চাপা দিতে পারবো। আমি এই ব্যাপার গুলো থেকে বের হয়ে আসতে চাই স্যার। না হলে আমি প্রতিনিয়ত এই সমস্যা গুলোর মাঝে ডুবে যাচ্ছি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ স্যার আমি কি করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো তার সমাধান দিন।
পরামর্শ:
প্রিয় হাসিব, ধন্যবাদ তোমার প্রশ্নের জন্যে। তুমি যে আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছ সেটা প্রমাণ করে যে তুমি এই situation থেকে বেরিয়ে আসতে চাও।
তুমি প্রবলভাবে হতাশাগ্রস্ত। Hopelessness অর্থাৎ আশাহীনতা তোমার মধ্যে চেপে বসেছে। তোমাকে interview করলে হয়তো বিষণ্নতা রোগের লক্ষণগুলো বেরিয়ে আসবে। তোমার এই অসুস্হতা থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে প্রয়োজন ঔষধ এবং সাইকোথেরাপী (কাউন্সিলিং) সেশন। বিষণ্নতায় মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের (neurotransmitter) কিছু ঘাটতি থাকে। ওষুধের মাধ্যমে সেটা ব্যালান্স করা যায় দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে। সেই সাথে long session যাকে আমরা সাইকোথেরাপী বলি সেটাও প্রয়োজন। সেই লম্বা সেশনে তুমি তোমার মনের কথা খুলে বলতে পারবে। সেই সাথে সমস্যার কথাও। সমস্যা সমাধানের জন্যে (problem solving) তোমার থেরাপিস্ট তোমাকে গাইড করবেন। নানাবিধ option সম্পর্কে আলোচনা করবেন। তোমার মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন যেন তুমি একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দেখা পাও। তোমার বাবা/মা/বান্ধবী যেন তোমার জন্য গর্ব বোধ করতে পারে- চিকিৎসকের পরামর্শে ও নিজের মটিভেশনের জোরে সেটা খুবই সম্ভব।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
প্রফেসর ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার
দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।