ফিস্টুলা রোগীরা হয়ে পড়ছেন সমাজ বিচ্ছিন্ন, বাড়ছে মানসিক চাপ

ফিস্টুলা একটি নিরাময়যোগ্য শারীরিক সমস্যা। দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এ সমস্যা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। ফিস্টুলা এমন একটি সমস্যা যা মানুষকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই সকল গাইনি চিকিৎসকের উচিত এসব রোগীদের সেবায় এগিয়ে আসা।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা  কিছুটা কমলেও অস্ত্রোপচারজনিত (অবসটেট্রিক) ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যমতে, দেশে চিকিৎসার বাইরে থাকা অস্ত্রোপচারজনিত ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার। অথচ সচেতনতা বাড়িয়ে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
গতকাল বৃহস্পতিবার মগবাজার ‘মামস ইনস্টিটিউট অফ ফিস্টুলা এন্ড ওমেন্স হেলথ’ এর উদ্যোগে হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টিএ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। দিবসের প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা করেন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। আরো বক্তব্য রাখেন, মামস’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর, ডা. মুরশেদুল আযম, ডা. তাহসিন ইসলাম, ডা. ফাতেমা খাতুন, মি. শফিকুল বারী প্রমুখ।
আলোচনা সভায়  বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবছর ৬শ থেকে ৭শ ফিস্টুুলা রোগী অস্ত্রোপচারে সুস্থ হয়ে উঠলেও, বছরে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এক হাজার নারী। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ফিস্টুুলা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জ হবে যদি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে না আসে।
অবসটেট্রিক ফিস্টুলা বিলম্বিত এবং বাধাগ্রস্ত প্রসবজটিলতার কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। দেশের দরিদ্র নারীগোষ্ঠী মূলত যারা বাল্যবিয়ের শিকার এবং জরুরি প্রসূতি সেবা থেকে বঞ্চিত, তারাই এই রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রশ্রাব বা পায়খানা অথবা দুইই একসঙ্গে ঝরতে থাকে। তাই সমাজে এসব নারীরা হন পরিত্যক্ত। যার ফলে এসব রোগীদের বিষণ্ণতা সহ বড় ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার।  অথচ নিয়মিত গর্ভসেবা এবং জরুরি প্রসূতি সেবার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া অপারেশনের মাধ্যমে বেশিরভাগ ফিস্টুুলা আক্রান্ত রোগীদের সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা নির্মূলে সরকার জাতীয় কৌশলপত্র এবং তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় সাধনই এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। দেশে বর্তমানে দশটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এবং আটটি প্রাইভেট ক্লিনিকে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিত্সা করা হচ্ছে। তবে এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম বলে জানান তারা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগে খোলা হয়েছে ন্যাশনাল ফিস্টুলা সেন্টার। আর মগবাজারে অবস্থিত ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুরা এন্ড ওমেন্স হেলথ’ একটি দাতব্য হাসপাতাল। এখানে ফিস্টুলাসহ সকল প্রসবজনিত জটিলতার চিকিত্সা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
গত ২৩ মে ছিল আন্তর্জাতিক অবসটেট্রিক ফিস্টুলা দিবস ও ২৮ মে ছিল নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ।
আলোচনা সভাটি আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

Previous articleবিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের জুন মাসের বৈকালিক সেবা সময়সূচি
Next articleআপনার আচরণই সন্তানের পথ প্রদর্শক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here