প্রিয়জনের মৃত্যু বা বিচ্ছেদের সম্মুখীন হওয়া

মানুষ অনেক প্রকার প্রতীকী বিচ্ছেদে তীব্র শোকাবিষ্ট হয় যেমন বিবাহ–বিচ্ছেদ, অপরিণত ভালবাসা, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি। গভীর দুঃখের সঙ্গে যথাযথভাবে মানিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া।

প্রিয়জনের মৃত্যু বা বিচ্ছেদের সম্মুখীন হওয়া
মর্মযন্ত্রণা বা তীব্র শোক কি এবং কিভাবে একজন তার সম্মুখীণ হবে?
যখন আমরা কোনও ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ শুনি, আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয় দুঃখ বা নিরানন্দ অনুভব করা। মানুষ অনেক প্রকার প্রতীকী বিচ্ছেদে তীব্র শোকাবিষ্ট হয় যেমন
বিবাহ–বিচ্ছেদ, অপরিণত ভালবাসা, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া বা প্রিয়জনের মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে পারা। এই ধরনের দুঃখ জটিল আবেগের সৃষ্টি করে যেটি সেই বিচ্ছেদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। গভীর দুঃখের সম্মুখীন হয়ে তার সঙ্গে যথাযথভাবে মানিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন কিন্তু এটি একটি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। যাইহোক, একজন কীভাবে বা কতক্ষণ মর্মযন্ত্রণাহত হয়ে থাকবে তার তেমন কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
গভীর শোকের সময়ে যে অনুভূতিসমূহের অভিজ্ঞতা হয়
  • দুঃখ, বিষণ্নতা বা নিরানন্দ
  • আকস্মিক মানসিক আঘাত – যখন মৃত্যু বা বিচ্ছেদ আকস্মিক বা অস্বাভাবিক হয় তখন এই অসহ্য আঘাত অনুভূত হয়।
  • অপরাধবোধ – যখন জীবিত বন্ধু বা আত্মীয় অনুভব করে যে তারা সেই পরিস্থিতিটিকে এড়ানোর জন্য হয়ত কিছু করতে পারত।
  • একাকীত্ব – কোনও অন্তরঙ্গ বা ঘনিষ্ঠ বা সুপরিচিত জনকে হারিয়েছে বন্ধু বা আত্মীয়  এইরকম অনুভব করে। এইরকম সেইসব ক্ষেত্রে ঘটে যেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিটি মৃত বা সম্প্রতি মৃত ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং তাঁকে অবলম্বন করবার মত তাঁর সঙ্গে কিছু সম্পর্ক ছিল।
  • রাগ বা হতাশা – কিছু জন মৃত ব্যক্তির ওপর রাগ অনুভব করতে পারেন, এই ভেবে যে তিনি তাদের প্রতারিত করেছেন বা হঠাৎ পরিত্যক্ত হয়ে হতাশাবোধ করতে পারে।
শোকের সম্মুখীন হওয়া
শোক যন্ত্রণাদায়ক কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করতে এটি দরকারী। সাংস্কৃতিক বা রীতিনীতিগত প্রথা অনুশীলন এবং অনুষ্ঠান সমূহও মানুষকে শোক প্রকাশ করবার ও কষ্টের সমাপ্তির একটা সুযোগ দেয়। প্রত্যেক মানুষ অনন্য এবং তার শোকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ধরণও আলাদা। যে মানুষ শোকের সম্মুখীন তাকে তিনটি বিবিধ প্রকারের দৃষ্টিকোণের সম্মুখীন হতে হয় –
  • মৃত ব্যক্তিটি আর আশেপাশে নেই। ব্যক্তিটি শোকের অঙ্গ হিসাবে সেই মৃতের সঙ্গলাভ করবার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।
  • জীবিত ব্যক্তির মিশ্র অনুভূতি হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির শোকের স্বতন্ত্র অনুভূতি বিবিধ প্রকারে অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
  • যে পরিস্থিতিতে মৃত্যু ঘটেছিল – সেটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক।
কখনও কখনও পরিশেষে আমরা তাদের অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করি বা কৈফিয়তের দ্বারা দোষ-ত্রুটিকে প্রশমিত করে কথা শেষ করে দি এবং এমনকি খুব হাল্কাভাবে সেইসব ঘটনাসমূহের সম্পর্কে কথা বলি। যখন একজনের জীবনপথে এগিয়ে চলা অত্যাবশ্যক হয়, তখন তাকে শোক করবার জন্য কিছু সময় দেওয়া সমানভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। যখন স্পষ্টভাবে শোক প্রকাশিত হয় না, তা শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণার রূপ নেয়। উদাহরণস্বরূপ –
  • যখন রাগ এবং বিপরীতধর্মী ভাবনার প্রসঙ্গ স্বীকৃত বা প্রকাশিত না হয় তখন তা শোকের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় পরিণত হয় যেখানে জীবিত ব্যক্তি তীব্রভাবে মৃত ব্যক্তিকে আগ্রহসহকারে আকাঙ্ক্ষা করে বা মৃত্যুটিকে স্বীকার করতে সমস্যাবোধ করে। সেই একই ক্রোধ যখন অন্তর্মুখী হয় তখন তা হতাশার সৃষ্টি করে।
  • যে সকল লোকেরা আগাগোড়াই মর্মাহত তারা শোকের দ্বারা অভিভূত হতে পারে যা মানসিক অসুস্থতা বিশেষত অবসাদকে বাড়িয়ে দেয়।
  • কেউ কেউ শোকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নেশার দ্রব্যাদির ব্যবহার করে।
  • অন্যের মৃত্যু নিজের সামনে ঘটতে দেখে অনেকেরই নিজেদের মরণশীলতা সম্পর্কে আকস্মিক সচেতনতা বেড়ে যেতে পারে যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ ঘটাতে পারে। যখন উদ্বেগের অনুভূতি এত বেশী মাত্রায় এবং সময় ধরে হয় তখন ডাক্তারি সাহায্য নেওয়া উচিৎ।
মানুষের পক্ষে এটি জরুরী যে শোকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি করা, সেটিকে অস্বীকার বা অপ্রকাশিত না করা। শোকবিষয়ক পরামর্শ বা উপদেশ শোকপ্রক্রিয়াকে সহজতর করতে সাহায্য করে। এতে আবেগকে সনাক্ত করা সহজ হয়ে যায়, সেই আবেগকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর ও গ্রহণযোগ্য আচরণ করতে সাহায্য করে।
প্রিয়জনের মৃত্যুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার কিছু পথ বা উপায়
  • সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে সম্পর্কিত সংগৃহীত ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তার অতীত জীবনের ভাল মুহূর্তগুলো ফিরে দেখুন। এগুলি সেই ব্যক্তির স্মৃতিচারণায় সাহায্য করে এবং সেই ব্যক্তি সম্পর্কিত আবেগ আর অনুভূতিকে প্রকট করতেও সাহায্য করে।
  • ব্যক্তিগত জিনিষপত্র এবং স্মরণীয় ঘটনা বা জিনিষ বাছাই করতে করতে কোনটা সে রাখতে চায় আর কোনটাকে রাখতে চায় না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং এমন একজনের সঙ্গে কথা বলা যাকে শোক ও বিচ্ছেদ সম্পর্কে বলা যায়।
  • ডায়রিতে মনের কথা লিখে ব্যক্ত করলে তা সাহায্যকারী হয়।
  • তৎক্ষণাৎই নিত্য জীবনযাত্রায় ফিরতে হয়ত ইচ্ছা করবে না – কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ যে দৈনিক কাজের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে যাওয়া।
  • সাংস্কৃতিক আচারবিধির অনুসরণ করে সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে এবং একজনের মানসিক স্বাস্থ্যে তার ইতিবাচক প্রভাব হয়।
  • একজন ব্যক্তি সেই রকম বিচ্ছেদের আধ্যাত্মিক অর্থও ভাল করে উপলব্ধি করতে পারে। কখনও কখনও আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে একজন ক্ষতিমূলক ঘটনার বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে সমর্থ হয়।
Previous articleলজ্জা দূর করার উপায়
Next articleঅবসাদগ্রস্ত মানুষকে যেসব কথা বলা উচিত নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here