যখন কোনো শিশুর জন্ম হতে যাচ্ছে অথবা ইতোমধ্যে জন্ম হয়ে গিয়েছে, তখন অধিকাংশ মানুষ আশা করে যে শিশুর মা খুশি এবং আনন্দিত হবে। তবে এসময়ে তা না হয়ে বরং অনেক নারীর জন্য শিশুর জন্ম এক অবাঞ্ছিত মেজাজের সূত্রপাত ঘটায়- বিষণ্ণতা। এরূপ দুঃখবোধের ঘটনাকে মূলত ‘প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা’ বলা হয়ে থাকে। মায়েরা এই প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার সম্মুখীন বেশিরভাগ সময়ই শিশুজন্মের পূর্বে কিংবা পরবর্তী সময়ে হয়ে থাকে (এমনকি এটি শিশুর বাবার উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।)
যদি শিশুজন্মের ২ সপ্তাহের মধ্যে একজন মায়ের ‘বেবি ব্লু’ নিজে থেকে সমাধান না হয়, তবে খুব সম্ভবত এটি স্বাভাবিক বিষণ্ণতার চেয়েও আরো বেশি গুরুতর হতে পারে। প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা একটি গুরুতর অসুস্থতা, যা মাকে দুর্বল করে ফেলে, যার উপর মায়ের কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অন্যান্য বিষণ্ণতার মতো এটি মায়ের কোনোরূপ চরিত্রগত ত্রুটি অথবা দুর্বলতার ফল নয়, বরং এটি গুরুতর একটি মানসিক ব্যাধি, যার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং এর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দরকার।
কীভাবে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা নির্ণয় করা যায়
প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতাDSM – 5 এর Bipolar Disorder or Depression with Peripartum onset এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রধানত বিষণ্ণতার ঘটনার লক্ষণগুলোর সম্মুখীণ হয়ে থাকেন। প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে যখন বিষণ্ণতার ঘটনাগুলো শিশুজন্মের পূর্বে কিংবা পরে ঘটে থাকে।
মাঝেমাঝে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি শিশুজন্মের পর এটি বিশ্বাস করেন যে তিনি স্বাভাবিক ‘বেবি ব্লু’ তে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার (postpartum) লক্ষণগুলো ‘বেবি ব্লু’ এর লক্ষণগুলোর তুলনায় আরো দীর্ঘ এবং আরো গুরুতর।
বিষণ্ণতা ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ করার সামর্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং নতুন মাকে শিশুর যত্ন নেয়া থেকে বিরত রাখে। সাধারণ প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার (postpartum) লক্ষণগুলো শিশুজন্মের কয়েক সপ্তাহ থেকে দেখা দিতে পারে এবং শিশুজন্মের প্রায় ৬ মাস পরেও শুরু হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
– বিষণ্ণভাব অথবা গুরুতর মেজাজের পরিবর্তন।
– অতিরিক্ত ক্রন্দন।
– শিশুর সাথে সম্পর্ক গঠনে সমস্যা।
– “আমি একজন ভালো মা নই” এরূপ বোধ করা।
– অতিরিক্ত অবসাদ এবং শক্তির অভাব অনুভব করা।
– পরিবার এবং বন্ধুদের এড়িয়ে চলা।
– ক্ষুধার সমস্যা (ক্ষুধা কমে যাওয়া অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করা)।
– ঘুমের সমস্যা (স্বাভাবিকের চেয়ে কম অথবা বেশি ঘুম অনুভব করা)।
– নিজের পছন্দের কাজগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
– সহজেই বিরক্ত হওয়া অথবা অথবা অযৌক্তিক রাগ।
– অকর্মণ্যতা, অপরাধবোধ অথবা লজ্জা অনুভব করা।
– সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কোনো কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখা, পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার ক্ষেত্রে সমস্যা অনুভব করা।
– অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা অথবা প্যানিক অ্যাটাক হওয়া।
– নিজের এবং শিশুর ক্ষতি করার কথা চিন্তা করা।
– মৃত্যু অথবা আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা।
গর্ভাবস্থায় এবং শিশুজন্মের পরের কয়েক সপ্তাহ অথবা মাসে প্রায় ৩–৬% নারী অতিরিক্ত বিষণ্ণতার লক্ষণগুলোর সম্মুখীন হয় বলে মনে করা হয়। যেসব নারীর মধ্যে পূর্বে বাইপোলার ডিজঅর্ডার অথবা বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা গেছে তাদের গর্ভকালীন সময়ে গুরুতর মেজাজ পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার প্রায় ৫০% ঘটনা মূলত শুরু হয় ডেলিভারির পূর্ববর্তী সময়ে। এই লক্ষণগুলোকে DSM- 5 এ ‘পেরিপার্টাম’ বলা হয়েছে।
Peripartum major depressive episode –এ আক্রান্ত নারীদের প্রায়শই অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং প্যানিক অ্যাটাকের সম্মুখীন হতে হয়। অধিকন্তু, শিশুজন্মের পূর্ব থেকে পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় উদ্বেগ অথবা ‘বেবি ব্লু’ প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে