প্যানিক ডিজঅর্ডার একটি মানসিক রোগ। সঠিকভাবে এর বাংলা অর্থ করা একটু মুশকিল। তবে বলা যায়, এটি একটি আতঙ্কজনিত বা উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ। আমরা প্রতিনিয়তই এ ধরনের রোগী দেখে থাকি। তবে বেশিরভাগ রোগী অসুখের একেবারে শুরুতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন না। এর অবশ্য বিশেষ কারণ রয়েছে আর তা হলো, প্যানিক ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলো মানসিকের চেয়ে বেশি শারীরিক হয়ে থাকে। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এ রোগের লক্ষণগুলো এমন যেন মনে হয় রোগী কোনো হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন। রোগের লক্ষণগুলো যদি এক নজরে আমরা একটু দেখে নিই তাহলে বুঝবো কেন রোগীরা নিজেদেরকে হৃদরোগে আক্রান্ত মনে করেন।
লক্ষণগুলো হলো-হঠাৎ মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে পড়া, বুক ধড়ফড় করা, শরীর কাপতে থাকা, হঠাৎ হাত পা অবশ হয়ে আসা, হঠাৎ করে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া, হঠাৎ করে অনেক ঠান্ডা বা গরম অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।
এই লক্ষণগুলোর কারণে অনেক সময় রোগীরা মনে করেন যে, তার বুঝি হার্ট অ্যাটাক বা গুরুতর কোনো হৃদরোগ হয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন ‘আমার হার্ট দুর্বল’। ফলে তারা বারবার বিভিন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে থাকেন। এর মাঝে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় (যদিও সেগুলো যৌক্তিক) কিন্তু সকল পরীক্ষার রিপোর্ট নরমাল পাওয়া যায়। ফলে রোগীরা আরো বেশি উদ্বিগ্নতায় পড়ে যান কেননা তিনি অসুখে কষ্ট পাচ্ছেন। অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার কোন রোগ ধরা পড়ছে না। বিষয়টি অবশ্যই একট চিন্তার বৈকি। মজার বিষয় হলো, যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া যায় তখন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বুঝে যান যে রোগী সম্ভবত প্যানিক ডিজঅর্ডার বা এই ধরনের অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা হয়ত রোগীকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন কোনো একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করতে কিন্তু রোগীরা বিষয়টিকে সহজভাবে নেন না। এর কারণ হলো মানসিক রোগ নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। আমরা মনে করি মানসিক রোগ মানেই বুঝি বদ্ধ উন্মাদ বা খুব খারাপ কিছু যদিও বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। আর এই ভুল ধারণা থেকেই আমরা সঠিক চিকিৎসা থেকে অনেকদিন দূরে থাকি আর কষ্ট পেতে থাকি।
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, প্যানিক ডিজঅর্ডার কেন হয়? আসলে নির্দিষ্ট করে এর কোনো কারণ বলা খুব কঠিন। অনেকগুলো বিষয় এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। প্রথম বিষয়টি হলো জেনেটিক বা বংশগত। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আসে সেটি হচ্ছে বড়ো রকমের কোনো উদ্বেগজনক ঘটনা, হতে পারে সেটি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না করা, ব্যবসায় লোকসান, কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু, শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, বিচ্ছেদ কিংবা জীবনের কোনো বড় ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তন। এছাড়া অনেক সময় অতিরিক্ত ধূমপান, চা-কফি বা ক্যাফেইন সেবন প্যানিক ডিজঅর্ডারের কারণ হতে পারে।
প্যানিক ডিজঅর্ডার কোনো নিরাময়যোগ্য অসুখ কিনা সে বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। তবে একটি কথা পরিষ্কার যে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসা পদ্ধতি বলতে গেলে ঔষধ এবং সাইকোথেরাপি-এই দুইয়ের সমন্বয়ে প্যানিক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করতে হয়। শুধু ঔষধ কিংবা শুধু সাইকোথেরাপি বা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা যথেষ্ট নাও হতে পারে। কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা থেকে দুরে থেকে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে প্যানিক ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডা. শাহরিয়ার ফারুক অনিক
এমবিবিএস, এমসিপিএস, এমডি
রেজিস্ট্রার, মনোরোগ বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে