পুরুষের হরমোন (টেস্টোস্টেরন) ঘাটতি বুঝার উপায়

পুরুষের হরমোন (টেস্টোস্টেরন) ঘাটতি বুঝার উপায়

যৌন দুর্বলতা টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। কখন বুঝবেন আপনি পুরুষ হরমোন (টেস্টোস্টেরন) এর ঘাটতিতে ভুগছেন? টেস্টোস্টেরন ঘাটতি বুঝার কিছু লক্ষণ ও এর করণীয় নিয়েই আজকের আলোচনা।

কর্ম শক্তি লোপ পাওয়া

ক্লান্তি বা অবসাদগ্রস্থতা টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার সাধারণ লক্ষণ। এক্ষেত্রে আপনি স্বাভাবিক কর্মস্প্রিহা হারিয়ে ফেলতে পারেন বা মাত্রাতিরিক্ত অবসাদ অনুভব করতে পারেন। তবে অন্য অনেক কারণও আছে যা আপনার কর্মস্প্লিহা কমিয়ে দিতে পারে।যেমন- বিষণ্ণতা ও বার্ধক্য ।

দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম আপনার কর্মস্প্লিহাকে ফিরিয়ে আনতে পারে । তবে অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

যৌন দুর্বলতা

যৌন স্প্রিহা হ্রাস পাওয়া এবং যৌন দুর্বলতা টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। টেস্টোস্টেরনের অভাবে বীর্য উৎপাদনের পরিমাণও মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। শুধুমাত্র টেস্টেটেরনের ঘাটতিই যৌন স্প্রিহা হ্রাসের একমাত্র কারন নয়। হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসের কারণেও এমনটি হতে পারে।

তবে টেস্টেটেরন যৌন আকাঙ্ক্ষা তৈরি, বীর্য উৎপাদনে এবং এগুলোকে সজিব ও সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পুরুষাঙ্গের উত্থানেকর্মে প্রধান উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এই হরমোনটি মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলোকে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনের জন্য উদ্দীপনা তৈরি করে। নাইট্রিক এসিড হল এক ধরনের অনু, যা পুরুষাঙ্গের উত্থানের জন্য চাপ তৈরি করে।

মূলত টেস্টোস্টেরন যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌনকর্মে প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং টেস্টোস্টেরনের বেশি ঘাটতি হলে বীর্য উৎপাদনে মারাত্মক ঘাটতিসহ যৌন আকাঙ্ক্ষা বেশি মাত্রায় কমে যায় এবং উত্থান সমস্যাসহ নানা ধরনের দুর্বলতা দেখা দেয়।

বিশৃঙ্খল বা এলোমেলো চিন্তা ভাবনা

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি আপনার মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিকে খতিগ্রস্থ করতে পারে। কখনো এমনটি ঘটতে পারে যে আপনি আপনার দৈনন্দিন কর্মপরিকল্পনা ভুলে যাচ্ছেন কিংবা কাজে পর্যাপ্ত মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এগুলো মাত্রাতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ।

এসব ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ মানসিক চাপ আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ম্যাডিটেশন বা ধ্যান, যোগব্যায়াম, শারীরিক ব্যায়াম কিংবা ম্যাসেজ আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে ।

মেজাজ পরিবর্তন

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি আপনাকে অল্পবিস্তর কিংবা মারাত্মক বিষণ্ণতায় ভোগাতে পারে। আপনার ব্যক্তিত্বের বা স্বভাবগত পরিবর্তন আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারেন। যেমন- কোন কিছুই আপনাকে সুখানুভূতি দেবে না কিংবা যেসব কাজ পূর্বে আপনাকে আনন্দিত করত তা করার ব্যাপারে আপনি মোটেই আগ্রহ অনুভব করবেন না। তবে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পূরণ হলেই, কর্মে স্বাভাবিক অনুপ্রেরণা ফেরত আসে।

মাংসপেশীর পরিবর্তন

যেহেতু টেস্টোস্টেরন মাংসপেশী বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তাই এর ঘাটতি হলে আপনার মাংসপেশির গঠন নষ্ট হতে পারে এবং ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এতে আপনার টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা ফেরত আসবে। তবে এমনভাবে ব্যায়াম করুন যেন আপনার শরীরের পেশীগুলোর একটি বড় অংশ এর অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রয়োজনে ভার উত্তোলন এর মতো ব্যায়াম করতে পারেন।

শরীরে চর্বি বৃদ্ধি

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি শুধু মাংসপেশীই কমিয়ে দেয় না শরীরে চর্বিও বৃদ্ধি করে। কারণ খাবার থেকে আপনি যে শক্তির যোগান পান তা যদি মাংসপেশী গঠনে কাজ না করে তবে চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হয়।

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন এবং ব্যায়াম করুন। ডায়েটিং/ডায়েট কন্ট্রোল করুন, এতে আপনার চর্বি এবং ওজন দুটোই কমবে। তবে চর্বি কমার সাথে সাথে আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়তে থাকবে যা আপনার পুরনো মাংশপেশী ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

শরীরে চুল কমে যাওয়া

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুল কমে যেতে পারে। তবে মাথার চুলের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না।

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পুরণে অনেক ক্ষেত্রে আমরা টেস্টোস্টেরন থেরাপি নিয়ে থাকি। জেনে রাখা ভালো যে টেস্টোস্টেরন থেরাপি ও পুরুষত্বের মধ্যে একটা যোগ সূত্র রয়েছে। তাই এ ধরণের চিকিৎসার কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে কি না তা আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হাড় ক্ষয়ের সাথে জড়িত। সবল হাড় ফিরে পেতে ধূমপান ও মদ বর্জন করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করুন।

ঘুমের সমস্যা

শরীরে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি দেখা দিলে আপনি অনিদ্রা ও অস্থিরতায় ভুগতে পারেন। এই সমস্যা সমাধানে ঘুমানোর ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী হন। সর্বদা একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং জেগে ওঠার চেষ্টা করুন। এমনকি ছুটির দিনেও শয়ন কক্ষ সর্বদা সাচ্ছন্দময়, শান্ত এবং অন্ধকারাছন্ন রাখুন। যেন ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যা

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হলে যে সব সমস্যাগুলো দেখা দেয় তার সামস্টিক প্রভাব আপনার কর্মজীবনকে খতিগ্রস্থ করতে পারে। সুতরাং যদি আপনার সাংসারিক ও চাকরিজীবন খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তবে মেডিক্যাল চেক-আপ এর মাধ্যমে এর কারণ খুঁজে পাবার চেষ্টা করুন। ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে জেনে নিন আপনি টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিতে ভুগছেন কি না।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাপ শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তাশক্তি নষ্ট করে?
Next articleভালোবাসা এবং আয়োজিত বিয়ের মধ্যে তুলনা করা উচিত নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here