নাক-গলা থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহে কি মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়?

নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা মানুষের শরীরের ক্ষতি করে, এমন দাবি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এ রকম কয়েকটি দাবি যাচাই করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

নাকের ভেতর থেকে সোয়াব বা নমুনা নেওয়ার একটি ছবি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। ছবির সঙ্গে দাবি করা হয়েছে নমুনা নেওয়া হচ্ছে ‘ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার’ থেকে। রক্ত থেকে কোনোরকম বিষাক্ত পদার্থ বা জীবাণু যাতে মস্তিষ্কে ঢুকতে না পারে, সে কাজ করে এ ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার। অর্থাৎ এটি মস্তিষ্কের জন্য একটি সুরক্ষা দেয়াল। নাকের ভেতর থেকে নমুনা নেওয়ার সময় ওই দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছানো একেবারেই অসম্ভব।

মস্তিষ্ককে রক্ষা করার জন্য ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্তর। প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত সুরক্ষা স্তর হলো মাথার খুলি। এ খুলির ভেতরেও মগজ বা মস্তিষ্ককে রক্ষা করছে সুরক্ষা ঝিল্লি এবং কিছু জলীয় পদার্থের আস্তরণ।

মস্তিষ্কের দেয়ালে যে রক্তনালিগুলো আছে, সেটার মধ্যে থাকা ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার হলো শক্তভাবে ঠাসা কোষের স্তর। এ সুরক্ষা স্তরের কাজ হলো রক্ত থেকে ক্ষুদ্র অণুকে মস্তিষ্কে ঢুকতে বাধা দেওয়া। কিন্তু রক্ত থেকে অক্সিজেন ও পুষ্টি এ স্তর ভেদ করে মস্তিষ্কে ঢুকতে পারে।

কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, নাকের ভেতর দিয়ে সোয়াব নেওয়ার জন্য কাঠি ভেতরে ঢোকানো হলে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে তাকে প্রথমে অনেকগুলো কোষের স্তর ভেদ করতে হবে, তারপর খুলির হাড়ের মধ্য দিয়ে ঢুকতে হবে মস্তিষ্কের দেয়ালে রক্তনালির ভেতর। সেখানে পাহারা দিচ্ছে ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার। তাকে ডিঙিয়ে তবেই মস্তিষ্ককে জখম করার জায়গায় পৌঁছাতে পারবে সোয়াব স্টিক।

ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের ড. লিজ কোলথার্ড বলেন, ‘নাক থেকে নমুনা নেওয়ার পদ্ধতিতে যে সোয়াব স্টিক ঢোকানো হয়, তা ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার বা রক্তনালির সুরক্ষা দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে যথেষ্ট জোরে সেটা ঢোকাতে হবে। এতটা জোরে যাতে কয়েক স্তর কোষ, কলা ও হাড় ভেঙে সেটা ঢুকতে পারে। কোভিড সোয়াব নেওয়ার সময় এ ধরনের কোনো জটিলতার কোনো ঘটনা আমরা দেখিনি। নাক ও শ্বাসনালির ভেতর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় শ্বাসনালির মধ্যে জীবাণুর উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়।’

যুক্তরাজ্যসহ সারা দুনিয়ায় নাক ও গলা থেকে নমুনা নিয়ে নিয়মিতভাবে কোভিড-১৯ রোগের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

লিভারপুলের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ড. টম উইংফিল্ড বলেন, ‘আমি হাসপাতালে বহু রোগীর নমুনা নিয়েছি। আমি একটা ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছি, ফলে নিজের নমুনাও আমি প্রতি সপ্তাহে এভাবে নিচ্ছি। নাকের ভেতর দিয়ে সোয়াব নেওয়ার সময় মাথার অত কাছে পৌঁছানো অস্বাভাবিক। এভাবে নমুনা নেওয়ার সময় আপনার সুড়সুড়ি লাগার মতো বা চুলকানির মতো অনুভূতি হতে পারে, কিন্তু ব্যথা কখনোই লাগবে না।’

এ ছাড়া করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে, এমন ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে। আসলে করোনাভাইরাস মূলত ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাশির সঙ্গে বাতাসের মধ্যে বেরিয়ে আসা ক্ষুদ্র শ্লেষ্মাকণা ভাইরাসে ভরা থাকে।

নমুনা নেওয়া হচ্ছে যে কাঠির মাধ্যমে, তার ওপর শুধু শ্বাস ফেললে, তাতে ল্যাবে পরীক্ষা করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ শ্লেষ্মাকণা সংগ্রহ করা যাবে না। যেহেতু নমুনা নেওয়া হয় যে সোয়াব স্টিকের মাধ্যমে, তার মাথার অংশটা খুবই সরু।

কাঠিটি নাক বা গলার মধ্যে ঢুকিয়ে সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নমুনা নেওয়া হয়, তাই সংক্রমণ হয়ে থাকলে কাঠির আগায় যথেষ্ট জীবাণু ধরা পড়ে। এবং একমাত্র এভাবেই সংক্রমণ সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।

সূত্র: বিবিসি।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleবডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার
Next articleআপনার সঙ্গী কি মানসিক অবসাদ বা উদ্বেগের সমস্যায় ভুগছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here