পিটিএসডি বা দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক সমস্যা শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না বরং এটি তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলোর উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উভয় ক্ষেত্রেই ফলাফল বেশ পীড়াদায়ক এবং এর সমাধান প্রয়োজন।
পিটিএসডি বা দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক সমস্যাগুলো সম্পর্ককে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। ভীতি এবং মানসিক চাপ আমাদের চার পাশের জগতটাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিকেই বদলে দেয়। এই পরিবর্তিত মানসিক স্থিতি আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোকেও প্রভাবিত করে।
যদি আপনি বা আপনার কাছের মানুষটি পিটিএসডি জনিত মানসিক সমস্যার শিকার হয়ে থাকেন তাহলে এটা জেনে রাখুন যে, আপনারা ছাড়াও এমন অনেক মানুষই এই সমস্যায় ভুগছেন। তাই এই সমস্যা এবং এর ফলে সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি হওয়া নানা সমস্যা নিয়ে ভেঙ্গে না পড়ে আসুন এটি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। কিভাবে পিটিএসডি আপনার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ক্ষতি সাধন করছে এবং বোঝার চেষ্টা করি কিভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় এটি স্পষ্ট যে পিটিএসডি দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। সাধারণত একজন পিটিএসডি আক্রান্ত ব্যক্তির আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অযথা রাগ পিটিএসডির একটি অতি সাধারণ সমস্যা, যা অধিকাংশ সময়ে সম্পর্কের বোঝাপড়া নষ্ট করে।
এছাড়াও বড় কোন দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে একজন ব্যক্তি, যিনি পিটিএসডিতে ভুগছেন তিনি সেসব বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যে বিষয়গুলো হয়তো আগে তাকে অনেক আনন্দিত করত। তিনি অনেকের মাঝ থেকেও নিজেকে একাকী অনুভব করতে পারেন এবং অন্যদের সাথে আগের মত প্রাঞ্জল ভাবে মেলামেশা বন্ধ করে দিতে পারেন।
একজন পিটিএসডি আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে অনেক বেশি নেতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে তিনি তার কাছের মানুষদেরকেও নেতিবাচক ভাবেই বিচার করতে শুরু করেন। এর সাথে সাথে বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, দুঃস্বপ্ন দেখা, ভীতি, হতাশা ইত্যাদি মানসিক সমস্যাও দেখা যায়।
এই ধরণের মানসিক সমস্যাগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সাথে সাথে সম্পর্কে, বিশেষত অন্তরঙ্গ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা অধিকাংশ সময়ে বিচ্ছেদে রূপ নেয়।
যদি আপনি এবং আপনার সঙ্গী ঠিক এই একই সমস্যার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে এই সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নিচে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণে কিছু করণীয় তুলে ধরা হল।
কাউন্সেলিং করানো
পিটিএসডিতে আক্রান্ত বা এ ধরণের মানসিক সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগী ব্যক্তি এবং তার সঙ্গীর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং কাউন্সেলিং সব থেকে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হয়।
দোষারোপ করা বন্ধ করা
সম্পর্কে বিভিন্ন জতিলতা নিরসনে সঙ্গী হিসেবে আপনার সর্ব প্রথম কর্তব্য হবে পিটিএসডি আক্রান্ত ব্যক্তিকে দোষারোপ না করা। অর্থাৎ, তার মানসিক সমস্যা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তাকে দোষারোপ না করা। এ সময়ে তার আরও বেশি যত্ন এবং অবশ্যই যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন। তাহলেই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।
ধৈর্য ও সহমর্মিতা
ধৈর্য ধারণ ও সহমর্মিতা প্রদর্শন একজন মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি সর্বোত্তম সহায়ক মনোভাব হিসেবে ভূমিকা পালন করে। উপদেশ বা নির্দেশনা প্রদান না করে আপনার সঙ্গীকে মানসিক ভাবে অনুপ্রেরণা প্রদান করুন ও মনোবল বাড়ানোর প্রচেষ্টা করুন। তার বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে ধৈর্য ধারণ করুন এবং সহচরী হয়ে সেসব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখুন।
পিটিএসডি এমন একটি সমস্যা যেটি মোকাবেলা করতে ভুক্তভোগী ব্যক্তির তার কাছের মানুষের সহায়তা ও ভূমিকা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। তাই সঙ্গী হিসেবে তার সমস্যা ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করে তাকে একটি সুস্থ জীবন প্রদান এবং একই সাথে সম্পর্কে সৃষ্টি হওয়া সমস্যাগুলো দূর করতে আপনাকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে