একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বয়সে তরুণ অনেক নারীরই ধারণা, তারা পরিপূর্ণ না বা অন্যদের কাছে প্রত্যাশিত না। অনেকেই হয়তো তাকে বলে, ‘তোমার অমন হওয়া উচিত, তুমি যেমন আছো তার চেয়ে ভালো করতে পারতে, বা তোমার চেহারা আরো ভালো হতে পারতো!’ অনুমান করা হয়, প্রতি ৪ জনে ১ জন তরুণী দুশ্চিন্তা, হতাশা, আতঙ্ক ও অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে (ওসিডি) ভোগে। অন্যদের চাহিদা ও প্রত্যাশা মতো না হতে পারাটাই মানসিক চাপ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করে।
বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুনীরা পূর্বের প্রজন্মের তুলনায় বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও অনেক ক্ষেত্রে এর কারণ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। অন্যদের চমৎকার জীবনাচরণ দেখে সেসবের জন্য চাহিদা তৈরি করে, আসলে যা কাল্পনিক গল্পের মতো, বাস্তব জীবনের সাথে যার কোনো মিলই নেই। তবে সামাজিক মাধ্যমগুলো আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বস্তি ও সমর্থনের উৎসও বটে।
আধুনিক জীবন সত্যিই কঠিন ও চাপযুক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবন জুড়ে একটাই বার্তা, তা হলো সেরা এবং শুধুই সেরা হওয়া। সেরা আর নিখুঁত হওয়ার জন্য তরুণীরা যখন লক্ষ্য ঠিক করে আদতে যা অসাধ্য, তখনই তারা নিজেকে ব্যর্থ মনে করে। সেরাদের দৌড়ে নিজেকে পেছনে দেখতে পাওয়াটাই তাদের হতাশা আর আতংকের মাঝে ফেলে দেয়।
আবার ভবিষ্যতের জন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগের অভাবও এই ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। যখন মানুষ বুঝতে পারে যে, সমাজে তাদের শক্ত কোনো ভিত নেই, বা তারা এমন কিছু কাজ করতে যাচ্ছে যা আসলে প্রায় অসাধ্য, তখন ভবিষ্যত তাদের কাছে নিরানন্দ মনে হবে। এরকম অনেক কিছুই মানুষকে অবাস্তব প্রত্যাশার দিকে ঠেলে দেয়। সমাজেও এখন সাশ্রয়ী গৃহায়নের অভাব, ন্যায্য মজুরির অভাব, চাকরিতে সন্তুষ্টি এবং নিশ্চিন্ত নিরাপদ সুখী সম্পর্কের অভাব। এ পরিস্থিতিগুলোই একজন তরুণীকে হীনম্মন্যতায় ভুগতে বাধ্য করে।
পুরুষদেরকে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করার সুযোগ দেয়া হয়। যার ফলে ৪০ এর কাছাকাছি বয়সের পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা কমছে। নারীদের ক্ষেত্রেও এটা সমান গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা নিজেদের অনুভূতিগুলো নিয়ে কথা বলতে শিখুক। কথা বলার মতো জায়গা পাক। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরাও হতাশায়, অনিশ্চয়তায় ভোগে। তাই আমাদের সবারই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নিরাপদ জায়গা প্রয়োজন। এতে করে হয়তো সমাজে আত্মহত্যার হার কমতে থাকবে।
তথ্যসূত্র: ওয়েলডয়িং ডট অরগে প্রকাশিত Lyn Reed এর রচনা থেকে অনুবাদ করেছেন সাদিয়া আফরোজ শামস।
লিংক: https://welldoing.org/article/young-women-perfectionism-suicide-connection