ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia): পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে শিশুরা

0
137

ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) এমন একটি রোগ যে ক্ষেত্রে শিশুর পড়া পড়তে সমস্যা হয়। পর্যাপ্ত বুদ্ধিমত্তা থাকা সত্ত্বেও তারা পড়া পড়তে, বুঝতে বা লেখতে সমস্যার মুখে পড়ে। তারা পড়ার অক্ষরগুলো এলোমেলো ভাবে নড়তে বা উল্টো করে দেখে। এর কারণ হল আমরা যা শুনি বা দেখি তার একটা স্থায়ী আকার আমাদের মস্তিষ্ককে থেকে যায়। যার ফলে তা বুঝতে বা মনে রাখতে সহজতর হয়। কিন্তু এই রোগে আক্রান্তদের সেই ক্ষমতা থাকে না। ফলে তারা সঠিকভাবে অক্ষরগুলো চিনতে পারে না। আর এই কারণেই তারা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়।

অনেকসময় ক্লাসে টিচারদের কথা বুঝতেও তাদের সমস্যা হয়। তাদেরকে এক সাথে অনেক প্রশ্ন করা হলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে কিছু বুঝতে পারে না। এরা অনেকটা লাজুক এবং কাজকর্মে আনাড়ি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় আত্মমগ্ন হয়ে থাকে এবং অন্যের সাথে সেভাবে মিশতে পারে না। এমনকি ঠিকভাবে গুছিয়ে মনের ভাবও প্রকাশ করতে পারে না। আর তাইতো স্কুলে এরা বুলিংয়ের শিকার হয় এবং এদের ভিতর প্রচণ্ড স্কুলভীতি জন্মে।

ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) রোগের লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কে কোন ধরনের সমস্যা থাকে না। এমনকি তারা মানসিকভাবেও সুস্থ স্বাভাবিক থাকে। এরা চারপাশের জগতকে অনেক কৌতূহলের সাথে বিভোর হয়ে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু গতানুগতিক পড়ালেখার সাথে সামঞ্জস্য করে চলতে পারে না। আর এইসব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তা হলঃ

১। এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চা অনেক দেরিতে কথা বলা শেখে। ডান-বাম, দিকনির্দেশনা নির্ণয়ে ভুল করে থাকে।
২। এরা বিভিন্ন কাজকর্মে অপটু হয়ে থাকে। সামান্য জামার বোতাম, টাই, জুতার ফিতে বাঁধতেও এদের সমস্যা হয়ে থাকে।
৩। বইয়ের লেখা তারা নড়তে বা উল্টো দেখে। ফলে এরা সঠিক উচ্চারণ করে পড়তে পারে না।
৪। বাচ্চা বইয়ের অক্ষরগুলো সঠিকভাবে বানান করে পড়তে পারে না। এমনকি অনেকসময় স্কুলের ব্যাকবোর্ডের লেখাও তার বোধগম্য হয় না।
৫। শিশু বুদ্ধিমত্তা ও কানে শোনার ক্ষমতা থাকলেও এরা শোনা কথা সেভাবে মনে রাখতে পারে না।
৬। এরা একা থাকতে পছন্দ করে এবং তাদের মধ্যে অতিরিক্ত লজ্জা কাজ করে।
৭। সাধারণত এরা অনেকবেশি কল্পনাবিলাসী হয়ে দিবাস্বপ্নে বিভোর থাকে।

যেসব কারণে  ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) রোগটি হয় 
সাধারণত জেনেটিক্সের কারণেই এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা প্রধান তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। আর তা হলঃ

১। প্রাথমিক ডিসলেক্সিয়া (Primary Dyslexia)
অনেকেই বংশগত ভাবে এই রোগে ভুগে থাকে। অনেক সময়  মস্তিষ্কের বাম পাশের একটি অংশ কোন কারণ ছাড়াই কাজ করে না। বড় হওয়ার পরেও এই সমস্যা থাকে। এবং যার ফলে এরা পড়ালেখার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যায় পড়ে।

২। সেকেন্ডারি বা জন্মগত ডিসলেক্সিয়া (Secondary or Developmental Dyslexia)
বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন হরমোনের তারতম্য হলে এই রোগ দেখা দেয়। বাচ্চা বড় হতে হতে তা সেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

৩। আঘাতজনিত ডিসলেক্সিয়া (Trauma Dyslexia)
আমাদের মাথার যে অংশে পড়াশুনা নিয়ন্ত্রিত হয়, যদি সেই স্থানে কেউ কোন ভাবে আঘাত পায় তবে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবং তা শিশু জন্মের সময় কিংবা পরবর্তী যেকোন সময়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে হতে পারে।

ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) রোগের প্রতিকার ও সমাধান
এটা এমন একটি রোগ যার কোন ওষুধ নেই। তবে চাইল্ড সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ সমস্যা আয়ত্তে নিয়ে চলা যায়। কিছু বিশেষ পদ্ধতি মেনে চললে শিশু সহজেই পড়ালেখা শিখতে সক্ষম হয়। সেক্ষেত্রে তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। এসব শিশু অনেক বেশী চারপাশের জগত সম্পর্কে কৌতূহলী হয় বলে, এদেরকে ভালভাবে যত্ন নিলে এরা তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারে।

ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) আক্রান্ত বিখ্যাত ব্যক্তিগণ
অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যারা ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তারা হতাশায় মুষড়ে পড়েন নাই। বরং এই সমস্যা থেকে বের হয়ে নিজ যোগ্যতা আর প্রতিভার গুণে বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেনঃ

পাবলো পিকাসো
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো ডিসলেক্সিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন। প্রাথমিক জীবনে তিনি একাডেমিক লেখাপড়ায় অনেক সমস্যায় পড়েন। পরবর্তীতে তার বাবা এবং আর্ট টিচার এর অনুপ্রেরণায় তিনি একজন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন।

টম ক্রুজ
মিশন ইম্পসিবলে খ্যাত বিখ্যাত অভিনেতা টম ক্রুজেরও ডিসলেক্সিয়া ছিল। তারপরও তিনি ডিসলেক্সিয়াকে ছাপিয়ে সাফল্যের চূড়ায় উঠেন তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে!

ওয়ার্ল্ড ডিজনী
ওয়ার্ল্ড ডিজনীর ডিসলেক্সিয়া থাকা সত্ত্বেও তার অসাধারণ সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটে। তিনি তার ভাইকে নিয়ে গড়ে তোলেন ডিজনী এম্প্যায়ার।
এছাড়াও পৃথিবীতে এইরকম আরও অনেক বিখ্যাত মানুষ আছেন। যারা ডিসলেক্সিয়া থাকা সত্ত্বেও নিজ প্রতিভার গুণে স্বরণীয় হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, মোহাম্মদ আলী, অ্যান ব্যানক্রফট, বব মে প্রভৃতিজন।

ডিসলেক্সিয়ায় (Dyslexia) আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকলের সচেতনতা অনেক বেশী দরকারী। কারণ আজকের শিশুরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনের পৃথিবী। আর তাইতো সাবলীল হোক তাদের বিকাশের পথটা। তারা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আপন আলোয় উদ্ভাসিত করুক এই বর্ণিল জগতটাকে!

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleযৌনজীবন: নানান দেশে নানান ভাবে
Next articleউচ্চতাকে কেন কিছু মানুষ ভয় পায়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here