টিপিক্যাল টিনেজার

0
26

যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো মূলত ভরসা এবং শ্রদ্ধা। শৈশবেই মা বাবার প্রতি জন্মানো ভরসাকে কৈশোর অবস্থা অবধি বজায় রাখতে পারাটাই প্রধান কাজ। গায়ের জোরে সমস্যার সমাধান না করে যুক্তির আশ্রয় নিলে শ্রদ্ধা ও ভরসার সম্পর্ককে বজায় রাখা সম্ভব।
‘টিপিক্যাল টিনেজার’ কারা?
এই কথাটি শুধুমাত্র আমি অবাধ্য ছেলেমেয়ের মা বাবার কাছ থেকে শুনে থাকি। এখানে আমি সেই সমস্ত মা-বাবার কথা বলছি যারা তাঁদের ছেলেমেয়ের অনেক রাত অবধি বাইরে থাকা, অত্যাধিক মদ্যপান, অনেক বেলা অব্ধি ঘুমানো, কোনোরকমে পরীক্ষায় পাস করা নিয়ে চিন্তিত। তাঁরা বলেন যে তাঁদের ছেলেমেয়ে বাড়িটাকে ভাবে হোটেল আর তাঁদেরকে এটিএম। এটা আমি নিছকই উদ্ধৃত করলাম। সব জেনেশুনেও অনেক সময়ই তাঁরা হাসিমুখে ছেলেমেয়ের তীব্র মেজাজ আর অশ্লীল ভাষা সহ্য করেন, যাতে আমার সামনে বসে থাকা সেই উদাসীন অবোধরা রেগে না যায়।
অদ্ভুত শোনালেও অভিভাবকরা অনেক সময় বলেন ও খুব ভাল ‘বাচ্চা’, টিপিক্যাল টিনেজার না। এটা বলে তাঁরা বোঝাতে চান যে তাঁদের ছেলেমেয়ে পড়াশুনোয় ভাল, তাঁদের অজান্তে কারও সাথে মেশে না, এবং কোনরকম দুশ্চিন্তা শুরু হবার আগেই বাড়ি ফিরে আসে, বিশেষ করে মেয়েরা। যদিও বা তারা অনেক রাত অবধি বাইরে থাকে, তাহলে মা-বাবাকে কে সব সময় ফোন করে জানিয়ে দেয় যে কোথায় আছে এবং একজন ভরসাযোগ্য বন্ধুর সাথে বাড়ি ফেরার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আমার দেখা বেশীর ভাগ কিশোর-কিশোরীরাই আজকাল নিজেদের পড়াশোনা, শিক্ষা নিয়ে ভীষণভাবে সচেতন। তারা হয়ত নিখুঁত নয়, মাঝে মধ্যে হয়ত তাঁদের রেজাল্ট খারাপ হতে পারে, বা দুই-একদিন ক্লাসে নাই যেতে পারে, মা-বাবাকেও হয়ত একটু মিথ্যাকথা বলে, এগুলো সবই কিন্তু স্বাভাবিক। একেই বলে বড় হওয়া, নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শেখা। সব সময় ছেলেমেয়েরা বাবা মা এর মত নাও হতে পারে। কিন্তু তারা বড়দের সম্মান করে এবং ছোটদের ভালোবাসে।
আসলে ‘টিপিক্যাল টিনেজার’ বলে কিছু হয় না। যেটা হয়, তা হল এক স্বাধীন প্রাপ্তম্নস্ক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা। এরই নাম জীবন। কৈশোর হল নতুন এক জগৎ কে চেনার সমস্যো, তাই নিয়ে অহেতুক উত্তেজনার কোনও কারণ নেই।
কিন্তু এর কারণ কী? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা সমস্যাগ্রস্থ হয়। তাঁরা নিজেদেরকে কোনভাবেই নিরাপদ বা নিশ্চিন্ত বোধ করে না। অহেতুক মেজাজ দেখিয়ে তাঁর আড়ালে নিজেকে লোকাতে চায়। তাঁদের পারিপার্শিক পরিস্থিতিই এর জন্যে দায়ী।
একটি সমস্যা জড়িত কিশোর রেগে থাকতে পারে বা তাঁর মন খারাপ থাকতে পারে। তার হয়ত সব ছেড়ে দূরে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। এরকম কঠিন সময় তাঁর সাহায্য প্রয়োজন। সবারই জীবনে কখনো না কখনো একটু সাহায্যের দরকার হয়। কিন্তু সেই প্রথম পদক্ষেপ নেওয়াটাই হল আসল লড়াই। অচেনা একটি লোকের সাথে টেলিফোনে এইসব আলোচনা করা অতটা সহজও নয়। তাই অনেক সময় তারা অন্যের গলা করেও কথা বলে।
প্রথমবার তাদের মনে হয় যে কেউ কিছু বুঝবে না। কিন্তু অনেকই আমায় বলেছে যে প্রথমবার সব মনের কথা বলতে পেরে তাঁদের ভয় কেটে গেছে। তাঁরা আরও পরিষ্কার ভাবে ভাবতে পেরেছে এবং জীবনে নতুন আশার আলো দেখতে পেয়েছে।
অনেক সময় চিকিৎসকের প্রামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খেলেও খুব কাজ দেয়। নানান মানসিক ঘাত-প্রতিঘাতের ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খুবই কার্যকরী। এবং এতে কোনও রকমের নেশাও হয় না। বরঞ্চ ওষুধ খেলে থেরাপি দেওয়া আরও অনেক বেশী সহজ হয়ে ওঠে।
মূল লেখক: ডাঃ শ্যামলা বৎসা, সাইকিয়াট্রিস্ট, বেঙ্গালরু, ভারত।

Previous articleআত্মহত্যা প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলির সক্ষমতা বাড়াতে ঢাকায় বিশেষজ্ঞদের কর্মশালা
Next articleডিজিটাল যুগের মোহ কেমন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here