‘Facilitator Masterclass: Rebuilding Minds After the July Uprising’ শীর্ষক এক বিশেষ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাই বিদ্রোহের পর উদ্ভূত জাতিগত মানসিক ক্ষত নিরাময়ে নেতৃত্বদানের মতো ফ্যাসিলিটেটর গড়ে তোলা, যারা ট্রমা-সচেতনতা ও সহানুভূতিশীল সহায়তার মাধ্যমে কমিউনিটিতে কাজ করতে পারবেন। এই মাস্টারক্লাসটি অনুষ্ঠিত হয় ১০ জুলাই ২০২৫, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চার ঘণ্টাব্যাপী। প্রশিক্ষণটি আয়োজন করা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক আন্দোলনের পর বহু মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে সেই ট্রমা মোকাবিলা এবং মানসিক পুনর্গঠনের প্রয়াসে, এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এটি ছিল এক সাংগঠনিক এবং বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা যাতে করে মনোস্বাস্থ্য সচেতন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয় এবং তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে পারেন।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) -এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন। HopeWave এর প্রতিষ্ঠাতা মুনিমাহ মাহরীন সহ শের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কমিউনিটি লিডার ও তরুণ নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা অংশ নেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে জাতির সম্মিলিত মনোজগৎকে। সহিংসতা, অনিশ্চয়তা ও শোকের অভিঘাত অনেক মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান সূচনা বক্তব্যে বলেন, জুলাইয়ের ঘটনার পর বহু মানুষ গভীর মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেছেন। এক বছর পেরিয়ে আজকের এই প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা আশাবাদী, অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সুস্থ রাখার পাশাপাশি অন্যদের মানসিক সহায়তায় এগিয়ে আসবেন।
বিএপি-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, মনই সকল শক্তির উৎস। জুলাইয়ে অংশ নেয়া ছাত্র জনতার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। আমাদের মূল্যবোধ ও মানবিকতা জাগিয়ে তুলে জাতিগতভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান না হলে, টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
হোপ ওয়েভ-এর প্রতিষ্ঠাতা মুনিমাহ মাহরীন বলেন, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য এখনো অবহেলিত। অথচ এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত সফলতার সঙ্গে জড়িত। তরুণদের মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে এ ধরনের কর্মশালা অত্যন্ত কার্যকর। আমরা চাই এই উদ্যোগ আরো সম্প্রসারিত হোক।
এই কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ট্রমা-সচেতন আচরণ, সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব এবং মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেন। ফলে তারা ভবিষ্যতে সমাজে কার্যকর মানসিক সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হবেন। এটি দেশে ট্রমা-সচেতন ফ্যাসিলিটেটর তৈরির পথ খুলে দেয়।
এই মাস্টারক্লাসটি একটি সময়োপযোগী ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। জাতীয় সংকট-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাজে নতুন নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা প্রশংসনীয়। HopeWave, BAP ও NIMH-এর এই উদ্যোগ সমাজে মানসিক পুনর্গঠনের নতুন পথ তৈরি করেছে।
আরও দেখুন-