চা, কফি বা গরম পানি খেয়ে কী করোনাভাইরাস দূর করা যায়?

করোনাভাইরাস থেকে কীভাবে নিরাপদে থাকা যায়, তা নিয়ে অনেক ধরণের পরামর্শ ভেসে বেড়াচ্ছে ইন্টারনেটে। আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিস তাদেরিএক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে তারা, উচার যাচাই করে দেখেছে, এসব পরামর্শের পেছনে আসলেই কোন বাস্তবতা রয়েছে কিনা! পাঠকদের জন্য বিসিবির সেই প্রতিবেদন তুলে ধরা হল:

এক কাপ গরম পানীয় হয়তো কিছুটা স্বস্তি বা আরামবোধ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা একটা দিনে। হয়তো বিক্ষিপ্ত মনকে কিছুটা ঠাণ্ডা করতে পারে, অন্য মানুষজনের কাছাকাছি অনুভব করার বোধ তৈরি করতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর মতো কঠিন সময়ে কি এটি কোন সহায়তা করতে পারে?
সামাজিক মাধ্যম এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ বার্তাগুলোয় এখন এ ধরণের অনেক দাবি, পরামর্শ ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেসব ভুয়া বার্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে এগুলো তারই অন্যতম।
একটিতে দাবি করা হয় যে, গরম পান পান করলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। এই বার্তা এতোটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করতে বাধ্য হয় যে, এরকম কোন ঘোষণা তারা দেয়নি।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রন একেলিস বলেছেন, ‘’গরম পানীয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, এমন কোন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।‘’
ঠাণ্ডা এবং ফ্লুতে ভোগার সময় ঠাণ্ডা পানি খেলে কি ঘটে, তা নিয়ে অতীতে গবেষণা করেছেন একেলিস। তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, ঠাণ্ডা লাগলে গরম পানীয় হয়তো খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। এর কারণ হয়তো গরম পানীয় মুখ ও নাকের লালা এবং শ্লেষ্মা এর নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রদাহ কমিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু তিনি এটাও তবে তিনি এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছেছিলেন যে এর মধ্যে হয়তো রোগী গ্রহণ করা কিছু ওষুধের মানসিক প্রভাবও থাকতে পারে। কিন্তু যেসব কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেই ভাইরাস মুক্ত করতে পারে না গরম কোন পানীয়।
সার্স-কোভ-২, যে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ রোগের জন্ম দিয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে বিবিসি ফিউচার পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে যে, নতুন ধরণের এই করোনাভাইরাসের বিপক্ষে কোন ধরণের প্রতিরক্ষাই দিতে পারে না খাবার পানি। পানি খেলে বা গার্গল করলেও এই ভাইরাস ধুয়ে যায় না।
অন্য ব্যক্তিদের কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে এটি নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর মানুষজনকে সংক্রমিত করে থাকে। প্রথমত এটি মানুষের ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। সেখানকার কোষগুলো এমন একটি এনজাইম ব্যবহার করে, যা ব্যবহার করে ভাইরাস ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোঁটা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে যায়- যেখান মুখ থেকে যাওয়া যেকোনো তরল পৌঁছানো সম্ভব।
গরম পানির গার্গলে গলার ভেতরের ভাইরাস মেরে ফেলা যায় না
একবার শরীরে প্রবেশ করার পর ভাইরাস খুব দ্রুত মানব শরীরের কোষের ভেতরে চলে গিয়ে নিজের অনেকগুলো কপি করতে তৈরি করে। ফলে এটিকে মুছে বা ধুয়ে ফেলার যেকোনো চেষ্টা থেকেই সেটা নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রথমদিকের কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রথম কোষটি সংক্রমিত করার পরে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়তে ভাইরাসের প্রায় ৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। একইভাবে, আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করার পর বাইরের যেকোনো রকম তাপমাত্রা থেকে ভাইরাসটি নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
মানবশরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ও বিস্তারের জন্য আদর্শ। ফলে গলার মধ্যে গরম পানির গড়গড়া করো কোষের ভেতরে থাকা ভাইরাস হত্যা করা যায় না। এজন্য ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অথবা তার বেশি তাপমাত্রা দরকার, যা সার্সের মতো করোনাভাইরাস হত্যা করতে পারে।
অবশ্য কিছু পরীক্ষায় বলা হয়েছে যে, এই তাপমাত্রা হওয়া উচিত ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। তবে যে ভাইরাসের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছে, সেই ভাইরাসটি কত ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে, তা নিয়ে এখনো কোন গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। ধারণা করা হয়, এটি অন্য করোনাভাইরাসগুলোর মতোই হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
 

Previous articleঘরবন্দি শিশুর সঙ্গী স্রেফ টিভি আর মোবাইল,ক্ষতি হবে না তো?
Next articleহোম কোয়ারেন্টাইনঃ আকস্মিক বেকারত্ব উদ্বেগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here