চা ও ভেষজ ওষুধ করোনাভাইরাস ঠেকাতে পারে?

0
33

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের আরোপ করা বিধিনিষেধের মধ্যেই এই ভাইরাস সম্পর্কে ভারত ও বাংলাদেশে  ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এগুলো একদিকে যেমন ছড়াচ্ছে সোশাল মিডিয়াতে, তেমনি ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমেও। সম্প্রতি এসব গুজব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেই প্রতিবেদনটি মনের খবর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

ভেষজ ও করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেসব কৌশল গ্রহণ করেছেন তার একটি হচ্ছে লোকজনকে বহু বহু বছর ধরে প্রচলিত বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া।মি. মোদি বলেছেন, জনগণের উচিত বিশেষ একটি ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করা। এর নাম কাধা। এটি তৈরি করা হয় তুলসি পাতা, শুকনো আদা, দারুচিনি, গোল মরিচ, কিশমিশ ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে। সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া খবরে দাবি করা হচ্ছে যে এই ভেষজ ওষুধ করোনাভাইরাস ঠেকাতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তবে চিকিৎসা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভেষজ গ্রহণ করলে করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তার পক্ষে কোন প্রমাণ নেই।
“সমস্যা হচ্ছে এরকম বহু দাবির পেছনে বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই,” বলেন আকিকো ইওয়াসাকি, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমিওনোলজিস্ট।
ভারতে আয়ুর্বেদী, ইয়োগা এন্ড ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানী, সিদ্ধা এন্ড হোমিওপ্যাথি মন্ত্রণালয় এধরনের প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসার ব্যাপারে লোকজনকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির তালিকা তুলে ধরে তারা দাবি করছে যে এগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মন্ত্রণালয় এরকম কিছু পরিত্রাণের কথা উল্লেখ করেছে। তবে এসব যে কার্যকর তার পক্ষে বৈজ্ঞানিকে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। খোদ ভারতীয় সরকারের একটি বিভাগ ইতোমধ্যে এধরনের ভুয়া সংবাদের সত্যতা যাচাই করে সেগুলোর অসারতা তুলে ধরেছে।
এরকম দাবির মধ্যে ছিল যে গরম পানি পান করলে অথবা ভিনিগার ও লবণ মেশানে পানি দিয়ে গড়গড়া করলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ভুয়া তথ্য

জনপ্রিয় একটি হিন্দি টিভি চ্যানেল এবিপি নিউজ রিপোর্ট করেছে যে এক গবেষণায় দেখা গেছে সারাদেশে লকডাউন জারি করা না হলে ভারতে ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে আট লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো।
চিকিৎসা সংক্রান্ত শীর্ষস্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআরের বরাত দিয়ে টিভি চ্যানেলটি এই রিপোর্ট প্রচার করে।
ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান অমিত মালভিয়া এই রিপোর্টটি টুইট করেন। তাতে হাজার হাজার মানুষ মতামত দেন। আরো বহু মানুষ এই ‍টুইটটি আবার টুইট বা শেয়ার করেছে।
কিন্তু ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে এধরনের কোন গবেষণাই হয়নি। আইসিএমআরও একই কথা বলেছে। সংস্থাটির গবেষণা শাখার আঞ্চলিক প্রধান ড. রজনীকান্ত বিবিসিকে বলেছেন, “আইসিএমআর কখনো এমন গবেষণা করেনি যাতে এধরনের প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।” কিন্তু তা সত্ত্বেও এবিপি নিউজ তাদের এই খবরটি প্রত্যাহার করেনি।
তবে মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে সংক্রমণের সংখ্যা কতো হতে পারে সেবিষয়ে তারা কিছু “অভ্যন্তরীণ গবেষণা” চালিয়েছে কিন্তু সেগুলো কখনো প্রকাশ করা হয়নি। লকডাউন না হলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কতো হতো সেটা জানা সম্ভব নয়। ভারতে ২৫শে মার্চ থেকেই লোকজনের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

চা পান

ভারতে ছড়িয়ে পড়া এরকম একটি খবর হচ্ছে, বেশি বেশি চা খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যায়। এই গুজবের উৎপত্তি চীনে।
ভুয়া পোস্টের স্লোগান ছিল: “এক কাপ চা যে করোনাভাইরাসের সমাধান এটা কে জানতো।” এই ভুয়া দাবিটি সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তাতে জড়ানো হয়েছে চীনা ডাক্তার লী ওয়েনিলিয়াং-এর নামও।
উহান শহরে এই ভাইরাসের ব্যাপারে তিনিই প্রথম সবাইকে সতর্ক করেছিলেন এবং পরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ওই পোস্টে দাবি করা হয় যে ডাক্তার লী চায়ের মধ্যে এমন একটি উপাদান মেথিলজেনথিন্স পেয়েছেন যা ভাইরাসের প্রভাব কমাতে পারে।ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ওই পোস্টে দাবি করা হয় যে চীনে কোভিড-১৯ রোগীদের দিনে তিন বেলা চা খেতে দেওয়া হতো।
এটা সত্য যে চা, কফি ‍ও চকোলেটের মধ্যে মেথিলজেনথিন্স আছে। কিন্তু ডাক্তার লী যে এর প্রভাব নিয়ে কোন গবেষণা করেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। তিনি ভাইরাসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও চীনে কোভিড-১৯ রোগীদের চা খাইয়েও চিকিৎসা করা হয়নি।

Previous articleলকডাউনে মনখারাপ থেকে যা খুশি খাচ্ছেন? ওজন বাড়লেই বিপদ!
Next articleর্দীঘ লকডাউনে বেড়ে চলা দুশ্চিন্তা কমাতে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here