ঘরের কোণে মন খারাপের উপশম!

0
75
ঘরের কোণে মন খারাপের উপশম!

মনে আছে, ছোটবেলায় খাটের তলার একলা কাটানো দুপুরের কথা? বা সবাইকে লুকিয়ে চিলেকোঠায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকার সময়গুলো? চরম পছন্দের জিনিসটা কোথায় লুকিয়ে রাখতেন? পুরনো বাড়ির দেওয়ালের কুলুঙ্গিতেই কি? এখনও ভুলতে পারেননি সে সব কথা? কেন বলুন তো! মনের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে কেন ঘুপচি কোণই বারবার পছন্দ হয়েছে আমাদের। ব্যাপারটা স্রেফ লুকিয়ে থাকা বা লুকিয়ে রাখাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে একটা নিশ্চিন্তে থাকার মনস্তত্ত্বও কাজ করে এই ‘ঘুপচি’ প্রেমের নেপথ্যে। তেমনটাই বলছে গবেষণা।

চিন্তামুক্ত নিজস্ব কোণ
মহামারীতে যখন আমরা সবাই একটু স্ট্রেসড আউট, নিত্যদিনের নানা মানসিক চাপের সঙ্গে জুড়ছে একটু বাড়তি ভাবনা, তখন ঘরের এক কোণের একটা নিজস্ব ‘ঘুপচি’ এনে দিতে পারে ক্ষণিকের স্বাচ্ছন্দ্য। একটু নিশ্চিন্ত বোধ। নিজের মতো করে একলা আর ভাল থাকার সুযোগ।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে পরিবেশ মনস্তাত্ত্বিকরা দাবি করেছেন, নিজের বাড়িতে যে জায়গায় আপনি সবচেয়ে বেশি চাপমুক্ত থাকবেন, সেটা একটা নির্দিষ্ট ঘর না-ও হতে পারে। হতে পারে একটা ছোট্ট কোণ। বা একটা দেওয়াল, যেখানে হেলান দিয়ে গোটা পৃথিবীটাকে দেখা যায়। অবশ্য এখানে ‘গোটা পৃথিবী’ ব্যাপারটা আক্ষরিক নয় একেবারেই। সোজা কথায়, যেখানে বসে আপনার নিজস্ব পৃথিবীর অনেকটা আপনি দেখতে পান, সেই জায়গাই আপনার মনে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করে। এমনটাই বলছেন পরিবেশ মনস্তত্ত্ববিদ স্যালি অগাস্টিন।

মাতৃগর্ভের অনুভব
এই ‘ঘুপচি’তে ঢুকে বসার প্রবণতাটা আমাদের জন্মগত। মাতৃগর্ভে হাঁটু মুড়ে গুটিসুটি শুয়ে থাকার যে অনুভূতি আর নিরাপত্তা বোধ, তা আর কোথাও নেই। ঘরের ঘুপচি কোণ সেই অনুভূতিই কিছুটা ফিরিয়ে আনে। তাই ছোটরা খেলতে খেলতে ঢুকে যায় চেয়ার কিংবা টেবলের তলায়। দুঃখ পেলে বড়রাও মাথা গুঁজে ঠাই নেয় বন্ধ ঘরে।

নিজের সঙ্গে সময়
এই বোধটা খুব সহজাত। শীতকালে লেপ কম্বলের তলা থেকে আমাদের বের হতে অসুবিধা হয়। যে কোনও ‘কোজি’ জায়গা আমাদের সেই আরামবোধ দেয়। ঘরেও যদি এমন একটা কোণ রাখা যায় নিজের একান্ত অবসরের জন্য, তবে তা ভালই। ‘‘ব্যস্ত জীবনে রোজ আমাদের এত চাপ আর চিন্তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, হাতে এতটাই সময় কম, যে নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। সেই অভাববোধ কিছুটা কমিয়ে দিত পারে এই ধরনের মনকে চাপমুক্ত রাখার কোণ।

কী কী দরকার
• একান্ত নিজের কোণ সাজিয়ে তুলতে খুব বেশি কিছু দরকার নেই। ঘরের কোণে ছোট্ট জায়গা বা একটা দেওয়াল হলেই চলবে। ছোট্ট ঘর থাকলে তো ভালই। সেটা সিঁড়ির তলার ঘর হলেও অসুবিধা নেই। তবে যদি না থাকে, তা হলে হেলান দেওয়ার একটা দেওয়াল-ই যথেষ্ট। বলেছেন উর্বশী বসু। তবে একটু সূর্যের আলো পড়লে ভাল। কারণ আলো মনের জন্য ভাল। ঘুপচি হলেও আলোবাতাসহীন জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়।

• নিজস্ব কোণের জন্য হালকা রঙের দেওয়াল বেছে নেওয়াই ভাল। তবে রং ভাল লাগলে পর্দা বা কুশনে রং ব্যবহার করা যেতে পারে। বসার জন্য যে কোনও আরামদায়ক জায়গা বেছে নিতে পারেন। সেটা একটা ডিভান, বা একটা আরামদায়ক ম্যাট্রেসও হতে পারে। পাশে হালকা আলোর ব্যবস্থা থাকুক। যা প্রয়োজনে বাড়িয়ে নেওয়াও যেতে পারে। বই পড়া বা চোখ বুজে গান শোনার প্রযোজন অনুযায়ী। আর থাক মেঝে থেকে সামান্য বেশি উচ্চতার ঘর সাজানোর জিনিস। যেমন বাঁকুড়ার ঘোঁড়া বা লম্বা টেবল ল্যাম্প। এগুলো চারপাশেও দেওয়ালের মতো একটা নিরাপদ অনুভূতি পেতে সাহায্য করবে।

সূত্র:ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleমানসিক রোগের সাথে সৃষ্টিশীলতার সম্পর্ক আছে?
Next articleপাবনায় বিষণ্ণতা বিষয়ক সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here