ফারজানা ফাতেমা (রুমী)
মনোবিজ্ঞানী
প্রতিষ্ঠাতা, সোনার তরী
খেলাধুলা বিনোদনের অংশ হলেও খেলায় জয় সবসময় মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে আর হেরে যাবার ব্যাথার সাথে থাকে নিজেকে ঢেলে সাজাবার নতুন অঙ্গীকার। এ যেন শরীরের শক্তি আর মনকে কেন্দ্রীভূত করে জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার মরণপণ লড়াই। প্রকৃতপক্ষেই খেলাধুলা মানসিক স্বাস্থ্যে নানাভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যায়াম এবং মেজাজের মধ্যে যোগসূত্র অন্বেষণ করছেন। ফলস্বরূপ, তারা খেলাধুলা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্রসহ শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গবেষণার একটি বড়ো অংশ তৈরি করেছেন। এখানে গবেষণার দ্বারা যাচাইকৃত খেলাধুলার কিছু ইতিবাচক দিক দেয়া হলো:
১। ব্যায়াম সেরোটোনিনের মাত্রাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, এটা এমন একটি রাসায়নিক যা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং নিউরোট্রান্সমিটার নরপাইনফ্রাইনকে উদ্দীপিত করে, যা মন মেজাজ ভালো রাখে।
২। শারীরিক কার্যকলাপ শরীরের প্রাকৃতিক সুখী রাসায়নিক পদার্থ এন্ডোরফিন নির্গত করে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমায়।
৩। স্ট্রেস, উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং আত্মহত্যামূলক আচরণের নিম্নহারের সাথে খেলাধুলা ইতিবাচকভাবে জড়িত।
৪। দলগত খেলায় অংশগ্রহণ কিশোরদের নেশা এবং অন্যান্য বেপরোয়া আচরণের ঝুঁকি কমায়। কিশোর—কিশোরীরা যখন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে তখন ঘুমের উন্নতি ঘটে। ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত রাখার জন্য অপরিহার্য।
৫। দলগত খেলা স্থিতিস্থাপকতা, সহানুভূতি, আত্মবিশ্বাস এবং ক্ষমতায়ন বাড়ায়। কার্যনির্বাহী কার্যকারিতা (executive Function), সৃজনশীলতা, জ্ঞানীয় বিকাশ এবং স্ব—নিয়ন্ত্রণ বাড়তেও দেখা যায়।
৬। দলীয় আচরণ, নেতাকে অনুসরণ এবং খেলায় দলকে জেতানোর মনোভাব থেকে সামাজিক দায়িত্ববোধ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
৭। খেলাধুলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করা গেলে, একজন কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কম সময় পায়, যা কিশোর—কিশোরীদের সুস্থতাকে প্রভাবিত করে বলে প্রমাণিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে, গবেষণায় দেখা যায় যে, খেলাধুলা এবং অন্যান্য ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলো মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখের স্তরের উন্নতিতে ওষুধের মতো সমানভাবে কার্যকর হতে পারে। আমরা খেলতে খেলতেই শিখি ‘হার-জিত চিরদিন থাকবেই’ তাই এই অভিজ্ঞতা থেকে জীবনকেও সাজিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে কিনা ভাবতে হবে। খেলাধুলা বিনোদনেরই একটা অংশ। যেকোনো ধরনের বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে শিশুদের মন-মানসিকতা ছোট থেকেই যেমন নির্মল হয়ে গড়ে ওঠে তেমনই বড়োদেরও মানসিক প্রফুল্লতা আনয়ন করবে। অর্থাৎ খেলাধুলা ও বিনোদন সর্বদাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলাতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।