ওসিডি বা খুঁতখুঁতে রোগ কী? : (প্রথম পর্ব)

0
161

আমাদের মাঝে অনেকেই আছে এমন যারা একই বিষয় নিয়ে বারবার ভাবতে থাকেন এবং পুনরায় করেন। কেউ রান্না করছেন তো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে লবন হলো কি হলো না, কাপড় ধুচ্ছেন তো চিন্তা হচ্ছে পরিস্কার হলো কি হলো না এজন্য বারবার বা ধুচ্ছেন। কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করার পরও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা যাতে কোনো খুঁত রয়ে গেলো কিনা।

এমন লোকদেরকে আমরা সাধারণত খুঁতখুঁতে স্বাভাবের বলে চিহ্নিত করি। এটাকে শুচিবাই বলা হয়। অনেকে এটাকে সন্দেহ বাতিকও বলে থাকেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগটির নাম ‘অবসেসিভ কম্পালশিভ ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘ওসিডি’ (‘Obsessive Compulsive Disorder’ or ‘OCD’.)

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি একশো জনের মধ্যে দু’জন এই রোগের শিকার। মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় দেড় গুণ বেশি। আর দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়সের আগেই ‘ওসিডি’-র সমস্যা শুরু হয়।

ওসিডি বা শুচিবাই অথবা প্রচলিত কথায় সন্দেহ বাতিক রোগ নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদনটি আমরা চার পর্বে সাজিয়েছি। যাতে করে প্রত্যেক পাঠক বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারে। যাতে ওসিডি সম্পর্কে জানতে গিয়ে এই পাঠভ্রমণে পাঠক বিরক্ত বা ক্লান্ত হয়ে না পড়েন। প্রথম পর্বে আমরা ওসিডি কী জিনিস বা এর পরিচয় কী তা জানার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক…..

ওসিডি কি? :

ওসিডি একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ। এর দুটি পর্যায় রয়েছে। এক. অবসেশন, দুই. কমপালশন। অবসেশন হলো এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়। এখান থেকেই মূলত পরবর্তী চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ ওসিডিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যার চূড়ান্ত রুপ হলো কমপালশন।

অবসেসিভ (Obsessive) বা অবসেশন
‘অবসেসিভ’ শব্দের অর্থ হলো অত্যধিক, বারবার। অর্থাৎ একই চিন্তা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাওয়া। কারো এই অবস্থায় পতিত হওয়াতে অবসেশন বলা হয়। কেউ অবসেশনের এই প্রাথমিক থাকলে বুঝতে পারে যে, এই ভাবনা অমূলক, অর্থহীন, প্রয়োজনাতিরিক্ত। কিন্তু তিনি তা আটকাতে পারেন না। চিন্তাটা আসতেই থাকে। যেমন, শুরুতে যে উদাহরণ দিয়েছিলাম সেটাই নিতে পারি আমরা। অর্থাৎ তরকারিতে লবন দেয়া হলো কি হলো না, ধোয়া কাপড় পরিস্কার হলো কি হলো না। এছাড়াও বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মনে হলো দরোজায় তালা দেওয়া হলো কি হলো না। এ অবস্থায় বিষয়টা নিশ্চিতভাবে মনে পড়ছে না। কিন্তু চিন্তাটা বারবার মাথায় ঘুরঘুর করছে। এতে করে মনের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরী হয়।

কমপালসিভ (Compulsive) বা কমপালশন 
‘কমপালসিভ’ শব্দের অর্থ বাধ্য করা। অবসেশন অবস্থায় ব্যক্তি তার অস্থিরতা দূর করতে চিন্তিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে একই কাজ আবার করে। অর্থাৎ তার সন্দেহিত ভাবনাগুলো তাকে একই কাজ আবার করতে বাধ্য করে। এই অবস্থাকে কমপালশন বলা হয়। এই সামগ্রিক অবস্থার নাম ‘অবসেসিভ কম্পালশিভ ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘ওসিডি’। যেমন, বারবার তরকারি স্বাদ নিয়ে বুঝার চেষ্টা করে লবন হলো কিনা, ঘরের তালা মারা হলো কিনা সেটার জন্য পুনরায় বাড়ি ফিরে আসে কিংবা কারো মাধ্যমে খবর নেয়।

‘অবসেসিভ কম্পালশিভ ডিসঅর্ডার’-এ আক্রান্ত রোগীদের ‘অবসেশন’ বা ‘কমপালশন’ আলাদা আলাদা কিংবা দুই অবস্থায় একই সঙ্গে হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তালিকায় এই মেডিকেল ডিজঅ্যাবিলিটির প্রধান ১০টি রোগের মধ্যে এটি একটি। সারা বিশ্বে প্রতি ৫০ জনে ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় এই রোগে ভোগে। সাধারণত শৈশব ও কৈশোরে এই রোগটি শুরু হয়। নারী ও পুরুষ উভয়ই এই রোগে ভুগতে পারেন। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা পাঁচ গুণ বেশি।

ওসিডি কেন ও কাদের হয়? : (পর্ব ২)
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে চোখ রাখুন এই লিংকে

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

/এসএস

Previous articleঅপরিচ্ছন্নতা কিংবা অন্ধকারও হতে পারে মানসিক সমস্যার কারণ
Next articleওসিডি কেন ও কাদের হয়? : (পর্ব ২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here