ক্ষমা চাওয়া লজ্জার কিছু নয়

0
232
ক্ষমা চাওয়া লজ্জার কিছু নয়
ভুল বোঝাবুঝি কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে কষ্ট দিলে সেক্ষেত্রে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার মাঝে লজ্জার কিছু নেই। বরং এতে নিজের ও অপর জনের মানসিক শান্তি বজায় থাকে এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

কোন বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন এলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের প্রতিক্রিয়া কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়। ক্ষমা চাওয়ার কাজটিকে আমরা অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক, অতি রঞ্জিত আবার অনেক সময় নিজেদের প্রতি হওয়া অন্যায় ও মনে করি। আমরা স্বভাবতই নিজেদের দোষী মনে করতে নারাজ এবং অন্য কারও কাছে  নতি স্বীকার করাকে অসম্মান বলেও মনে করি বটে। এ সময় আমরা ক্ষমা চাওয়া এড়াতে নিজেদের যুক্তি আরও পাকাপোক্ত ভাবে উপস্থাপন করতে শুরু করি এবং বোঝাতে চেষ্টা করি যে আমরা ভুল নই।

এসব কিছু করতে গিয়ে যেটি শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় সেটি হল, আমরা আরও একবার সেই ব্যক্তির প্রতি অন্যায় করে বসি এবং তার মনে আঘাত করি। যদি ভুক্তভোগীর দৃষ্টি কোণ থেকে আমরা এই সম্পূর্ণ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব, যখন কেউ অন্যায়ের শিকার হয় এবং কষ্ট পায়, তখন সেটি দুভাবে ব্যক্তির মনে আঘাত করে। প্রথমটি, হল মূল আঘাত যা ব্যক্তির সাথে ঘটা মূল অন্যায় বা অবিচারের ফলে হয়। আর দ্বিতীয় আঘাতটি আসে যখন অভিযুক্ত ব্যক্তি সেটিকে অস্বীকার করে, তার কাছে ক্ষমা না চেয়ে, নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় না ভুগে এমন মানসিকতা প্রদর্শন করে যে সে একেবারেই এর জন্য দায়ী নয়, তখন দ্বিতীয় বারের মত ভুক্তভোগীর হৃদয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, একটি উৎকৃষ্ট ক্ষমা চাওয়ার কাজ শুধু ব্যক্তির মনের উপর ঐ প্রথম আঘাতকেই দূর করে তা নয়, বরং সেটি তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।  আর একইভাবে এই ব্যত্যয় ঘটলে, ঐ প্রথম আঘাতের তুলনায় আরও বেশী আঘাত তাকে প্রদান করা হয়। কারণ এতে তাদের মাঝে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব আরও অনেকটা বৃদ্ধি পায়। এতে শুধু আপনি ক্ষমা চাইতেই অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তা নয়, বরং আপনি বর্তমান প্রেক্ষাপটকে, বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করছেন এবং মানবিক গুণাবলী ভুলে গিয়ে মানসিক অসন্তোষের সৃষ্টি করছেন। তাই ক্ষমা চাওয়া যেমন আপনার মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্বকে প্রদর্শন করে তেমনি ভুক্তভোগীর মানসিক শান্তি বিধান করে।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ  যে বিষয়টি রয়েছে যেটি ব্যক্তিকে ক্ষমা চাইতে অনুৎসাহিত করে সেটি হল ব্যক্তির অহম। কেউ এটি সহজে মেনে নিতে পারেনা যে সে ভুল। ব্যক্তির এই অহম বোধ দূর হলেই সে বাস্তবকে স্বীকার করে নিতে পারে এবং তার যে ভুল হয়েছে সেটি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া ভুল স্বীকার কখনোই ব্যক্তিকে অসম্মানের মাঝে ফেলেনা। বরং ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে মানুষ সেই ব্যক্তিকে হীন নজরে দেখে এবং ভুক্তভোগী সহ সমাজের অন্যদের কাছে তার সম্মানহানী ঘটে।

এটা সঠিক যে, অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনা কিভাবে সব কিছু সামলে উঠবে বা কিভাবে কারও প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার করে ভুল শুধরে নিয়ে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু, যদি সত্যি মন থেকে কেউ অপরাধ বোধে ভোগে এবং ভুল শুধরে নিয়ে ক্ষমা চাইতে চায় তাহলে বিভিন্ন ভাবে এটি সে করার প্রয়াস করতে পারে। মূলত ক্ষমা চাওয়া শুধু মুখের দুটি শব্দ নয়, বরং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন। মন থেকে নিজের ভুল স্বীকার করতে পারা এবং অন্যের কষ্ট অনুধাবন করাটাই সব থেকে বড় বিষয়। ক্ষমা চাইলে সেটি যেমন আপনার মনকে গ্লানি মুক্ত করবে, তেমনি ভুক্তভোগীকেও পরবর্তী মানসিক আঘাত পাওয়া থেকে বিরত রাখতে সয়াহতা করবে।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসম্পর্কে স্বচ্ছতার গুরুত্ব অপরিসীম
Next articleস্নেহ নাকি ভালোবাসার অপব্যবহার ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here