ক্রীড়াবিদের মানসিক গঠন ও খেলায় তার প্রভাব

খেলাধুলা এমন একটা প্রক্রিয়া যাতে কিছু টেনশন বা দুশ্চিন্তা থাকেবেই। খেলা মানেই প্রতিযোগিতা, আর যেখানে প্রতিযোগিতা সেখানেই থাকবে ভালো করার তীব্র বাসনা এবং সেখান থেকে উদ্ভূত নানা প্রকারের মানসিক চাপ। খেলার আগে এবং খেলার সময়টাতে একজন ক্রীড়াবিদ এই মানসিক চাপ কতটুকু সামলে নিতে পারবেন তা মূলত সেই খেলোয়াড়ের মানসিক গঠন বা সাইকোলজিক্যাল মেকআপের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আজ আমরা দেখবো ঠিক কি কি বিষয় একজন খেলোয়াড়ের মানসিক গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে।

মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে একজন খেলোয়াড়ের মানসিক গঠন-

ট্রেইট এনজাইটি (trait anxiety) :
একই পরিস্থিতিতে অনেক খেলোয়াড়কে আমরা দেখতে পাই অন্যদের চাইতে অধিক পরিমাণ মানসিক চাপে ভুগতে। মুলত বংশগত কারণে এ ধরনের তারতম্য হয়ে থাকে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তার নিকট আত্মীয়ের মাঝেও কেউ কেউ হয়ত অধিক দুশ্চিন্তা করে থাকেন। তবে সোশাল লার্নিং থিওরি আমাদের বলে যে বংশীয় কারণের পাশাপাশি এরকম অধিক দুশ্চিন্তা করার প্রবনতা একজন মানুষ শিখে তার ছোটবেলায়, একান্ত আপন জনের কাছ থেকেই। কেউ যদি পারিবারিক অশান্তি এবং কলহের মাঝে বড় হয় , অথবা ছোট বয়সে কোনো বড় মানসিক আঘাত পেয়ে থাকে তাহলে তার এধরনের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । ১৯৯৮ সালে গলফ খেলোয়াড়দের মাঝে গবেষণা করে দেখা গেছে যে এই ট্রেইট এনজাইটি খেলার ফলাফলে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে ।

ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা (performance concerns) :
ভাল খেলার দৃঢ় ইচ্ছা একজন খেলোয়াড় এর জন্য অত্যাবশ্যক হলেও অতিরিক্ত ভাল করতে চাওয়াটা অনেক সময় মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে আমরা বলে থাকি পারফেকসনিসম (perfectionism)। ১৯৯৯ সালে প্রফেশনাল দৌড়বিদদের উপর গবেষণায় পারফেকসনিসমের সাথে মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং ফলাফল খারাপ হওয়ার সুনিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে।

লোকাস অফ কন্ট্রোল ( locus of control ) :
নিজের এবং চারপাশের পরিবেশের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ কতখানি সেই নিয়ন্ত্রণকে বলে লোকাস অফ কন্ট্রোল। এ ধারনার প্রথম ব্যাখ্যা করেন Rotter ১৯৬৬ সালে। এরপর কিছু গবেষণায় দেখা গেল যে যাদের লোকাস অফ কন্ট্রোল দুর্বল অর্থাৎ যারা মনে করেন আমার চারপাশকে আমি ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা তাদের খেলার সময়ে মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনা বেশি সৃষ্টি হয় । লোকাস অফ কন্ট্রোল পরিমাপ করার জন্য বেশ কিছু psychometric টেস্ট রয়েছে । SCAT এবং CSAI-2 এমনই দুটি প্রক্রিয়া ।

monon-600

একজন ক্রীড়াবিদ খেলায় কেমন পারফর্ম করবেন তার অনেকাংশ নির্ভর করবে তার মানসিক গঠনের উপর। যারা ছোট থেকেই দুশ্চিন্তার মাঝে বড় হয়েছে এবং নিজের অজান্তেই তা নিজের মাঝে ধারন করছে, যাদের কাজ কর্মে নিখুঁত হওয়ার প্রবনতা বেশি এবং যারা মনে করেন তাদের নিজের এবং পরিবেশের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ তুলনামুলক কম তারা অন্য ক্রীড়াবিদদের তুলনায় অধিক মানসিক চাপে ভোগেন।

সুতরাং একজন খেলোয়াড়কে ভাল ফলাফল করতে হলে, উপরের তিনটি দিকেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে । আর সেজন্য শুরুতেই বিষয়গুলো সম্বন্ধে ভাল করে জেনে নিতে হবে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য সংকটে মধ্যপ্রাচ্য ও উ: আফ্রিকার অধিবাসীরা
Next articleআমি বিগ ড্রিমার : হাবিবুল বাশার সুমন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here