কোয়ারেন্টাইন হতে পারে পারিবারিক সৌহার্দপূর্ণ মানসিকতা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ

সমস্ত পৃথিবী এখন করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসের শিকার। গৃহবন্দী এই জীবন যাপন আজ বিশ্ববাসীর জন্য ঠিক যেন গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে। ক্রম বর্ধমান মানসিক চাপ ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং পারিবারিক জীবনের উপর সব থেকে বেশী প্রভাব ফেলছে। মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা এবং এই অস্বাভাবিক জীবন যাপন পারিবারিক সম্পর্কের উপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তবে এই গৃহবন্দী জীবন যাপনকে আমরা ইচ্ছা করলে ইতিবাচক ভাবেও কাজে লাগাতে পারি। যেহেতু আমাদের হাতে এখন অফুরন্ত সময়, আমরা এই সময়কে পরিবারের অন্যান্যদের সাথে আরও বেশী সময় কাটিয়ে একে কাজে লাগাতে পারি। এতে যেমন মানসিক চাপ কমবে তেমনি আমাদের পারিবারিক জীবন আরও সুন্দর হবে এবং পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৌহার্দপূর্ণ মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য আমাদের সবাইকেই ঘরে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। দিন দিন সময়টা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বড়দের কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়ার তাড়া নেই। ছোটদের স্কুল নেই। সবার এক অলস সময় কাটছে। চারিদিকে অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার ঘন মেঘ জমাট বেধে আছে। এমন সময়ে কোন কাজে মনোনিবেশ করা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ দুরূহ। কিন্তু আমরা এই নেতিবাচক সময়টাকে একটু চেষ্টা করলে ইতিবাচকভাবে নিজেদের কাজে লাগাতে পারি। কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারিনা। সময়ের স্বল্পতায় নিজেদের সম্পর্কের মাঝে পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দের ঘাটতি দেখা দেয়।
হোম কোয়ারেন্টাইনের এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রয়াস করতে পারি। একে অপরের মানসিকতা বোঝার প্রয়াস করতে পারি এবং মনস্তাত্বিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারি। নিচে এমনই কিছু কৌশল উল্লেখ করা হল যেগুলো আমাদের পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করবে।
১) ইতিবাচক মানসিকতার চর্চা বাড়ানঃ একে অপরের ইতিবাচক দিক গুলোর প্রশংসা করুন। ভুল না ধরে একে অপরের প্রতি স্নেহশীল এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন কাজে অন্যদের সহায়তা করুন। হতে পারে সেটি রান্নার কাজ কিংবা ঘর গৃহস্থালির অন্য কোন কাজ। পরিবারের সবার মাঝে যখন এমন সহানুভূতিশীল মানসিকতার চর্চা বাড়বে তখন সবার মাঝে পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।
২) একসাথে প্রার্থনা করুনঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে প্রার্থনা করুন। এই মহামারী থেকে বাঁচতে সৃষ্টিকর্তার নিকট যার যার স্থান থেকে প্রার্থনা করলে মনে শান্তি স্থাপিত হবে এবং পরিবারের সবাই মিলে একসাথে কাজটি করলে সবার মাঝে মানসিক প্রশান্তিও বৃদ্ধি পাবে।
৩) একসাথে গল্প করুনঃ পরিবারের সবাই মিলে দিনের একটি সময়ে যেমন সন্ধ্যায় একসাথে বসে গল্প করতে পারেন। পুরনো দিনের ছবি দেখে, পুরনো দিনের গল্প করে বা একে অপরের সাথে সারা দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। একসাথে বসে এই হালকা খাওয়াদাওয়া, গল্প গুজব সবাইকেই আনন্দ দেবে।
৪) একসাথে মুভি দেখুনঃ গৃহবন্দী এই সময়টায় মুভি দেখা সময় কাটানোর একটি অত্যন্ত মনোরঞ্জক মাধ্যম হতে পারে। পরিবারের সবাই মিলে পছন্দের সব মুভি গুলো দেখতে পারেন। এতে সময়টা বেশ ভাল কাটবে।
৫) অসহায়দের সাহায্য করুনঃ এই মহামারী সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সব থেকে কঠিন সময় পার করছে।  সবাই একসাথে এলাকার কোন দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করতে পারেন। তাদের খাদ্য কিংবা অর্থ সহায়তা প্রদান করতে পারেন। এতে পরিবারের সবার মাঝে উদার মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।
করোনা আতঙ্ক সবার মনের উপরে এক গভীর ছাপ ফেলেছে। আমরা সবাইই মানসিক পীড়ার মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করছি। এ সময়ে যদি আমরা শুধু নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করি তাহলে কখনোই করোনার বিরুদ্ধে মানসিক বিজয় অর্জন করতে পারবনা। সময়টাকে ইতিবাচক ভাবে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে এই দুঃসময়কে জয় করে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে লড়াই করে জিততে হবে।

Previous articleকোভিড ১৯ এর কারণে উদ্বিগ্নতায় চাকরীপ্রার্থীরা!
Next articleনিজের সম্বন্ধে ধারণাই প্রকাশ করবে আপনার ব্যক্তিত্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here