কোন রঙের আলো ঘুমের জন্য সবচেয়ে ভালো?

0
30

স্ক্রিন বা যন্ত্রের পর্দা থেকে আসা কৃত্রিম আলো মানুষকে জাগিয়ে রাখে বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তাতে ভুল আছে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। তারা গবেষণা করছেন যে, কী ধরণের আলো আসলে মানুষের চোখে ঘুম আনতে পারে।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, যন্ত্র থেকে আসা নীল আলো আসলে এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা নয়। নানা ধরণের আলোর প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ইঁদুরকে নানা রঙের আলোর সংস্পর্শে এনেছেন তারা।কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এই বিতর্কিত গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, আসল উত্তরটি আসলে লুকিয়ে রয়েছে আলো কতটা উষ্ণ এবং উজ্জ্বল, তার ওপরে।

গবেষণার উদ্দেশ্য কী?

প্রত্যেকের মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে প্রতিদিন ঘুম ও জেগে ওঠার নিয়মিত চক্র আছে। শরীর ঘড়ি আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয় এবং সেই অনুযায়ী দিনের বেলায় জেগে ওঠা আর রাতের বেলায় ঘুমানোর জন্য শরীরকে সংকেত দেয়। কিন্তু গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করে আসছেন যে, কৃত্রিম আলো শরীরের এই ছন্দের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় ধারণা আছে যে, নীল আলো- যা কম্পিউটার এবং মোবাইলের পর্দা থেকে সাধারণত আসে- বিশেষ প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় কী জানা গেছে?

গবেষণা দলটি ইঁদুরের ওপর আলোর উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে-কমিয়ে দিয়ে এবং নীল আলো থেকে হলুদ আলোয় পরিবর্তন করে পরীক্ষা করে দেখেছে। দুই রঙের উজ্জ্বল আলোই প্রশান্তি আনার পরিবতে বরং ধারণা অনুযায়ী, উদ্দীপনা তৈরি করেছে। কিন্তু আলোর উজ্জ্বলতা যখন কমিয়ে দেয়া হয়েছে, হলুদ আলোর তুলনায় নীল আলো অনেক বেশি প্রশান্তি বা স্নিগ্ধতা তৈরি করেছে।
প্রধান গবেষক ড. টিম ব্রাউন বলেছেন, উজ্জ্বল উষ্ণ দিনের আলোয় প্রকৃতি জগতে যা ঘটে, তাদের গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে সেটাই মিলে গেছে। ”দিনের বেলায় আমাদের কাছে যে সাদা বা হলুদ রঙের আলো আসে, তা শরীরের ওপর শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করে। আর গোধূলিতে যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে, তখন নীলচে আলো আসতে শুরু করে।” তিনি বলছেন। ”সুতরাং আপনি যদি শক্তি সঞ্চারকারী আলো থেকে দূরে থাকতে চান, হালকা নীল আলোই হবে সবচেয়ে ভালো।” বিপরীতভাবে, জেগে থাকতে চাইলে উজ্জ্বল সাদা বা হলুদ আলো সহায়ক হবে।

তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে?

ঘুমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে ফোন এবং ল্যাপটপে নাইট-মুড বা রাতের অবস্থা নির্ধারণ করে দিয়ে সেটি নীল আলোর নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। ”এখন মানুষজন যা করে, তা হলো পর্দার আলোর রঙ পরিবর্তন করে এবং যন্ত্রের পর্দাগুলো আরো হলুদাভ করে তোলে,” ড. ব্রাউন বলছেন। ”কিন্তু আমাদের বক্তব্য হলো, আলোর রঙ পরিবর্তন আসলে ভুল প্রভাব তৈরি করছে। বরং স্ক্রিন বা পর্দায় উজ্জ্বলতা কমালে যে সুবিধা পাওয়া যেতো, এটা সেটার ক্ষেত্রে একটা উল্টো বাধা তৈরি করে।”

ইঁদুর কী রাতের বেলায় আরো বেশি সক্রিয় থাকে না?

ইঁদুর অবশ্যই নিশাচর প্রাণী। তবে গবেষকরা বলছেন, সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে আলোর মূল বিষয়গুলো একই ভাবে কাজ করে, যেমনটা করে মানুষের ক্ষেত্রে। তার অর্থ হলো, এই গবেষণার ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
ফলাফল পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ নিয়ে আরো গবেষণার সুপারিশ করেছেন এই গবেষকরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ম্যানুয়েল স্পিটসচান বলেছেন, ” এটি বেশ আগ্রহ উদ্দীপক গবেষণা কিন্তু আমরা এখনো জানি না, একই ব্যাপার মানুষের ক্ষেত্রে ঘটবে কিনা। প্রাণীর ওপর চালানোর গবেষণার ফলাফলের একাই একটি কঠিন দিক।”” এ ব্যাপার নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভবিষ্যতে মানুষের ওপরেও পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চয়ই দেখা হবে।” তিনি বলছেন।
সূত্র: বিবিসি

Previous articleওল্ড এইজ সাইকিয়াট্রি কোর্স করতে ডা. শফিউল খালেদ অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন
Next articleআত্মহত্যা চেষ্টা ঠেকাতে চীনে দূর নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here