কিছুতেই আমার ভয় কাটাতে পারছি না

0
100

সমস্যা: স্যার আমি তামিম হাসান। বয়স ২৭ বছর। আমি ছোটবেলা থেকেই রাতের বেলা কোথাও একা যেতে খব ভয় পেতাম। মনে হতো আমাকে কেউ ফলো করছে, আমার পেছন পেছন কেউ হাঁটছে, কার যেন ছায়া দেখতে পেতাম। বুকের ভেতরটা ধক ধক করে কেঁপে উঠত আর আমি ভয়ে চিৎকার দিতাম। এমনকি কারেন্ট চলে গেলে আমি ঘরের ভেতরেও একা থাকতে চাইতাম না। কেউ না কেউ আমার সঙ্গে থাকতে হতো। বাথরুমে গেলেও আমি একা যেতে পারতাম না। কাউকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতাম। ভেবেছিলাম বড় হলে সমস্যাগুলো এমনিতেই কমে যাবে; কিন্তু কমেনি। এখনো আমি রাতে একা একা বাইরে যেতে পারি না। এমনকি কারেন্ট চলে গেলে জানালা খোলা থাকলে কেউ সাথে থাকলেও ঘুমাতে পারি না। জানালার কাছে ঘুমাতে ভয় লাগে। মনে হয় কেউ হঠাৎ সামনে এসে ভয় দেখাবে। আমার এই ভয় নিয়ে আমি খুব অস্বস্তিতে ভুগছি। কিছুতেই আমার ভয় কাটাতে পারছি না। তাই মনের খবর’র মাধ্যমে আপনার কাছে পরামর্শ চাই। এটা কি কোনো মানসিক সমস্যা? আমি কেন এমন ভয় পাই আর এই ভয় থেকে কীভাবে মুক্তি পাব দয়া করে জানাবেন।
পরামর্শ: প্রিয় তামিম, তোমার ‘ভয়’ বিষয়ক ভয় নিয়ে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, এটি এক প্রকার মানসিক সমস্যাই বটে; তবে আমি অবশ্যই চাইব, তুমি দ্রুত ভয়মুক্ত হও। তোমার বর্তমান প্রশ্নে তোমার কষ্ট, অস্বস্তির একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে বটে, কিন্তু মনোবিদ হিসেবে আমাদের আরো কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে, যা এখানে স্পষ্ট নয়, যেমন: তোমার শৈশব-কৈশোর, তোমার জন্মবৃত্তান্ত, পারিবারিক বন্ধন, অপর সদস্যের সঙ্গে সংযুক্তি, বাবা-মা, স্কুল, যুব-সন্ধিক্ষণ এসবের কোনো উল্লেখ নেই।
আমাদের বেড়ে ওঠার কালে, অনেক সময় বড় দর্যোগ, বড় বিপর্যয় ঘটে কখনো। কখনো শরীর বা যৌন বিষয়ে অনাকাঙ্খিত আচরণের সম্মুখীন হই, যা সারাজীবনের ক্ষত ও ভয় আকারে থেকে যায়। কখনো প্রিয়জনদের মৃত্যু, আত্মহনন ঘটে অথবা প্রিয়জনদের গুরুতর শারীরিক ও মনোরোগ আমাদের হতচকিত করে। এমনকি সমাজের-রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো ঘটনাপ্রবাহ আমাদেরকে আক্রান্ত করে থাকে যা অবচেতনে ভয় ও নৈরাশ্য ছড়ায় লাগাতার।
আমরা প্রায়শই বলি, ‘জ্বর’ কোনো রোগ নয়, এটি অপরাপর রোগের উপসর্গমাত্র। একই আলোকে বলা যায় ‘ভয়’ নিজে কোনো পৃথক ব্যাধি নয়, অপরাপর রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশমাত্র।
এখন ভয়ের জগৎ ব্যবচ্ছেদ করেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। ভয়জনিত রোগ বই-পুস্তকে মোটা দাগে তিন প্রকারের হলেও, ভয়ের উৎস-যা কখনও ‘স্পেসিফিক ফোবিয়া’ নামে আলোচিত, তার তালিকা দীর্ঘতর; তোমার ‘আঁধার’ সম্পর্কিত ভয়কে ইউরোপের বই পুস্তকে বলে, নিকটোফোবিয়া বা স্কটোফোবিয়া। আর সকল বিষয়ে ভয় হলে আমরা বলি, প্যানোফোবিয়া। যাহোক ভয়ের এই নির্ঘণ্ট আমি বিস্তৃত করে তোমাকে অবশ্যই আরো অধিক ভয়তাড়িত করতে চাই না। মনোগবেষকেরা বলছেন কিছু কিছু ভয় যেমন : আঁধার, বিস্তীর্ণ- জলরাশি, সর্প, নিঃসঙ্গতা ইত্যাদি সকল দেশের, সকল মানব প্রজাতির একটি অন্যতম প্রধান উদ্বেগের উৎস; এই ব্যাখ্যা ইয়ং করেছেন তার ‘যৌথ অবচেতনা’র ধারণা দিয়ে।
চিঠির জবাবে, সব কথা নিশ্চয়ই গুছিয়ে বলা গেল না, এজন্য আমি দুঃখিত। আমার পরামর্শ হবে, নিকটস্থ কোনো মনোবিদরে সঙ্গে কথা বলো; তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করো। ভয় তাড়ানোর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং উপায় আছে; আমার ধারণা তুমি দ্রুত তোমার সমস্যা থেকে মুক্ত হবে। তোমার জন্য আবারো শুভেচ্ছা-জীবন নামক ‘আশীর্বাদ’ তোমার জন্য বয়ে আনুক  অনন্ত কল্যাণ ও আনন্দ।
 
 
পরামর্শ দিয়েছেনঃ
অধ্যাপক মামুন হোসাইন
কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ,
বিভাগীয় প্রধান, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ

Previous articleমেন্টাল হেলথ ফোরাম এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
Next articleমনের রোগে ঘুমের সমস্যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here