কাজের সময়সীমা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব রাখতে পারে

আমাদের রিসার্চ দেখাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় যারা ব্যবসা করে সেসব শ্রমিকদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন দৈনিক একটি স্বাস্থ্যসম্মত কার্যঘন্টা এবং নারীরা গৃহে যে পরিমাণ কাজ করে সে পরিমাণ কাজ করা উচিত।
১৮০ বছর আগে বেতনভুক্ত চাকরী গুলো পুরুষদের করতে হত, আইএলও (ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবার অর্গানাইজেশন- আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা) সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কার্যসীমা ঠিক করে দিয়েছিল। বেশি সময় ধরে কাজ করা কিংবা সাপ্তাহিক কার্যঘন্টা বেশি হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটি তারই প্রমাণ। তখন থেকে শ্রম বাজারের পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রায় অর্ধেক কার্যভার মহিলাদের উপর নিযুক্ত হয় আর দুই পঞ্চমাংশ প্রাপ্তবয়স্করা চাকরী করার পাশাপাশি বাচ্চাদের দেখাশুনা করা এবং বৃদ্ধ বাবা মায়ের দেখাশুনা করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘ন্যাশনাল ইমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস’ সাপ্তাহিক ৩৮ ঘন্টা কার্যসীমা নির্ধারণ মানা উচিত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় শতকরা ৪০ ভাগের বেশি মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে থাকে।
‘হাউজহোল্ড, ইনকাম এন্ড ল্যাবার ডায়নামিক্স ইন অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ার গৃহস্থালি, আয় এবং শ্রমিক গতিবিদ্যা)’ ২৪ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে ৩৮২৮ জন পুরুষ এবং ৪০৬২ জন মহিলার অংশগ্রহণে একটি জরিপ করে। এখানে কার্যঘন্টার হিসেব কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তার একটি আদল তৈরী করা হয়েছে। আমাদের পাওয়া তথ্যমতে দেখা যায় যে, একটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা শুরু করার আগে সর্বোচ্চ ৩৯ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। আদলটি তৈরী করা হয়েছিল কার্যঘন্টা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং মজুরি এই ৩ টি বিষয়ের পারষ্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। এই ৩৯ ঘন্টার কার্যসীমা আইএলও এর তৈরী করা ৪৮ ঘন্টার কার্যসীমার চাইতে ৯ ঘন্টা কম। যাই হোক এই সাপ্তাহিক কার্যঘন্টা গুরত্বপুর্ণ লিংগ বৈষম্য লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
পুরুষ ও মহিলাদের কাজের সময়ের মধ্যে পার্থক্য
মহিলারা সাধারণত কাজে বেশি যত্ন পেয়ে থাকে এবং তাদের কাজের অভিজ্ঞতা পুরুষদের তুলনায় আলাদা হয়। কারণ তাদের বেতন কম হয়ে থাকে এবং ছুটির সময় তারা বেতন কম পায়। নারীরা এখনও এমন একটি শ্রম বাজারে কাজ করে যেখানে তারা বেতন, শর্ত এবং পুরষ্কার এসব বিষয়ে পুরুষদের তুলনায় কম সুবিধা পায়। নারীদের পুরুষদের তুলনায় কম স্বায়ত্তশাসন করতে পারে এবং তারা সপ্তাহে শতকরা ১৭ ভাগ অথাবা ২৭৭.০৭ ডলার কম আয় করে। ঘণ্টা হিসেবে নারীরা বেতন কম পায়। এসব পার্থক্য নারী পুরুষের মধ্যে কোন প্রাকৃতিক পার্থক্য প্রতিফলিত করে না। আমরা জানি নারীরা পুরুষদের মতই শিক্ষিত এবং দক্ষ।
ধারণা করা হয়ে থাকে নারীদের সাপ্তাহিক কার্যঘন্টা যখন ৪৮ এর উপর চলে যায় তখন তারা ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা শুরু করে। অতিরিক্ত কাজের চাপ তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। যেখানে পুরুষরা ৪৭ ঘন্টা কাজ করে সেখানে সমান বেতনে নারীদের ৩৪ ঘন্টা কাজ করা উচিত। যাই হোক কেউ যেখানে অধিকাংশ সময় অন্যের যত্ন নেয়া, গৃহস্থালি কাজ করায় ব্যয় করে তার শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নয় শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ও ভুগতে হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার উচিত তাদের নারীদের প্রতি বিশ্বাসের মাত্রা কে প্রশস্ত করা এবং কার্যঘন্টা কে লিংগ দিয়ে বিবেচনা না করে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য দিয়ে বিবেচনা করা।
তথ্যসূত্র-
(http://theconversation.com/work-hour-limits-need-to-change-for-better-mental-health-and-gender-equality-71999)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleপ্রসব পরবর্তী মানসিক সমস্যা
Next articleপ্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here