কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য: ভ্রান্ত ধারণা এবং বাস্তবতা

0
138
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য: ভ্রান্ত ধারণা এবং বাস্তবতা

ভ্রান্ত ধারণা: আমার একটা মানসিক অসুখ ধরা পড়েছে। আমি আর কখনোই আমার কাজের জগতে ফিরে যেতে পারব না।
বাস্তব ঘটনা: অসুখের চিকিৎসা বা থেরাপির পর আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নিজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা থেরাপিস্টকে দিয়ে নিজেকে আবার পরীক্ষা করানো। এর ফলে বোঝা যাবে যে চিকিৎসার পরে আপনি কতটা সুস্থ হয়েছেন এবং আপনি আবার আপনার কাজের জগতে ফিরে যেতে পারবেন কিনা। যদি লম্বা ছুটির পরে আপনি ডাক্তারের সুপারিশক্রমে আবার কাজে ফিরে যেতে চান তাহলে আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে যাতে মুক্ত পরিবেশে, সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ওই কর্মক্ষেত্রটি আপনার কাজ করার পক্ষে যথাযথ কিনা তা বুঝতে হবে ও বিবেচনা করে দেখতে হবে।

ভ্রান্ত ধারণা: আমি আমার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার কথা কখনও আমার ম্যানেজার বা সহকর্মীদের বলিনি।
বাস্তব ঘটনা: ইদানীং অনেক কর্মক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধানের জন্য নানারকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কোনও প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে আপনি ভালোভাবে জেনে নিন যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলোর প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের সঠিক সচেতনতা রয়েছে কিনা, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক হবে কিনা তা-ও আপনার জেনে নেওয়া জরুরি। যদিও কর্মী হিসেবে আপনার কোনও মানসিক সমস্যা রয়েছে কিনা তা জানতে প্রতিষ্ঠানগুলো যে একেবারে বাধ্য, তা নয়। তাই নিজের অসুস্থতার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সচেতন করা একান্ত জরুরি, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি আপনার সমস্যাটিকে ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনমতো আপনার প্রতি সমানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে। নিজের বিষয়ে কতখানি তথ্য আপনি প্রতিষ্ঠানকে জানাবেন তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। এটি নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটিকে আপনি কতটা চিনেছেন ও বুঝতে পেরেছেন তার উপর। আপনি কতটা কাজের বোঝা নিতে সক্ষম তা স্থির করার জন্য ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলুন। কাজের সময়গত নমনীয়তা যাতে থাকে তা নিশ্চিত করুন। যার ফলে আপনি এমন পরিকল্পনা করে কাজ করবেন যাতে আপনার উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হবে না।

ভ্রান্ত ধারণা: মানসিক অসুস্থতার কারণে একজন কর্মী তার কাজের জায়গায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং প্রায়শই ভুলভাল কাজ করে।
বাস্তব ঘটনা: মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বেশ কিছু স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সঠিক থেরাপি ও যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ এবং তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তারা অন্য সুস্থ মানুষের মতোই ভালোভাবে কাজ করতে পারবে এবং তাদের উৎপাদনশীলতাও উচ্চমানের হবে। এমনকী নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য তারা তাদের সাধ্যের অতিরিক্তও কাজ করতে সক্ষম। কিন্তু গুরুতর মানসিক অসুখের যদি কোনও চিকিৎসা না হয় তাহলে একজন মানুষের পক্ষে তার কর্মক্ষেত্রে নিজের যথাযথ যোগ্যতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

ভ্রান্ত ধারণা: একটি কর্মক্ষেত্রে নীতির পরিবর্তনই এক্ষেত্রে একমাত্র সাহায্যদায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে।
বাস্তব ঘটনা: প্রত্যেকটি কর্মক্ষেত্রের সাফল্যের জন্য নীতির বদল ঘটানো ও তার বাস্তব প্রয়োগ অত্যন্ত আবশ্যিক একটি বিষয়। এর ফলে একটি কর্মক্ষেত্র অনন্য হয়ে উঠতে পারে। এটা অনেকটা দ্বিপাক্ষিক বন্দোবস্তের মতো, যেখানে কর্মচারী ও পরিচালকমণ্ডলী পারস্পরিক লাভের জন্য সমান অবদান রাখেন। কখনও কখনও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন নীতি চালু থাকে যার ফলে একজন কর্মী হিসেবে আপনি নির্দিষ্ট কয়েকটি আচরণবিধিও মেনে চলতে বাধ্য থাকেন, যা মূলত প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্যই প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু যদি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও নিয়ম-নীতি চালু না থাকে তাহলে কর্মীদের কর্মগত দক্ষতার সঠিক বিচার করা সম্ভব হয় না। প্রতিষ্ঠানের পরিবেশও সাহায্যদায়ক ও সমানুভূতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে না। তাই কর্মক্ষেত্রের কার্যাবলী যথাযথভাবে চালানোর জন্য সঠিক নীতির অন্তর্ভুক্তি যেমন জরুরি, তেমনই চাই কাজের ক্ষেত্রে কর্মী ও পরিচালকমণ্ডলীর যৌথ অংশগ্রহণ।

ভ্রান্ত ধারণা: স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্র কোথাও নেই।
বাস্তব ঘটনা: যদিও আদর্শ কর্মক্ষেত্র নেই বললেই চলে তবু এমন অনেক কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেকার বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করতে হবে, সুনেতৃত্ব দিতে হবে, নিরাপত্তা ও সুস্থতার যথাযথ মাপকাঠি গড়ে তুলতে হবে, সঠিক নীতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, স্পষ্ট ও মুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, ইতিবাচক মানসিকতা, সহযোগীতাপূর্ণ সংস্কৃতি এবং ভালো কাজের প্রশংসা করাও এক্ষেত্রে একান্ত জরুরি।

ভ্রান্ত ধারণা: গঞ্জনা, অভদ্রতা এবং হেনস্থা আমাদের কর্ম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাস্তব ঘটনা: কর্মক্ষেত্রে জবরদস্তি, অভদ্র আচরণ ও হেনস্থা করার মানসিকতাকে একেবারেই বরদাস্ত করা যাবে না এবং এগুলোর প্রভাব যাতে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর না পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে এধরনের আচরণ সহ্য করা উচিত নয়। যদি কর্মী হিসেবে আপনি এসব আচরণের শিকার হন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচালকমণ্ডলীকে তা জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানে বুলিং যাতে বন্ধ করা যায় সেব্যাপারে আপনাকেও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এর ফলে কর্মী ও কর্মক্ষেত্র দু’জনেই উপকৃত হবে।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

 

 

Previous articleইন্টারভিউয়ের আগে মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক টিপস
Next articleবঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যালামনাইয়ের বার্ষিক সভায় দায়িত্ব নিল নতুন কমিটি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here