ডা. দেবদুলাল রায়
রেসিডেন্ট, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমান পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি অর্থ। অর্থই নিয়ন্ত্রণ করছে সমাজ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ। অর্থই বর্তমান সমাজে ক্ষমতা আর সম্মানের মানদণ্ডে পরিণত হয়েছে। একই সাথে অর্থ নিয়ন্ত্রণ মানুষের সম্পর্ক, মানুষের ব্যক্তিত্ব। দেশ থেকে দেশে অর্থের নাম ভিন্ন কিন্তু দাপট সমান। আবার যেসব দেশ তাদের অর্থের মূল্য উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে পেরেছে, বিশ্ব সমাজে তারাই মুরুব্বীর ভূমিকা পালন করছেন।
আধুনিক বিশ্বে অর্থের এই যোগান, সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই কর্পোরেট জগতের হাতে। কখনো কখনো কর্পোরেট কোম্পানি বিত্তের প্রভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতাকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসতে পারে। কর্পোরেট কোম্পানি কতখানি শক্তিধর হতে পারে তা আমরা উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটেছিল তৎকালীন কর্পোরেট জায়ান্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসন চলে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। নামে মাত্র নবাব থাকলেও, নবাব হয়ে পড়েন কোম্পানির হাতের পুতুল।
বর্তমান বিশ্বেও বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানি সমগ্র বিশ্বের তথ্য, প্রযুক্তি তথা অর্থনৈতিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে চলছে সদর্পে। যেকোনো রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা তার মানচিত্র বর্ডার অতিক্রম করে কিছু করা রাষ্ট্রের এখতিয়ারভুক্ত নয়। কিন্তু কর্পোরেট কোম্পানি এমন কোনো সীমারেখায় বাঁধা যায় না। সকল সীমানা অতিক্রম করে, আন্তর্জাতিকতার তকমা লাগিয়ে কর্পোরেট কোম্পানি প্রভাবিত করে উত্তর—দক্ষিণ—পূর্ব—পশ্চিমের জীবন।
তবে কোনো উত্থানই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কোনো কোনো কোম্পানি অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক কোম্পানি ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করলেও কালক্রমে তা মহীরূহের রূপ লাভ করে। প্রতিযোগিতার বাজারে কোন কোম্পানি টিকবে আর কোন কোম্পানি বিলীন হয়ে যাবে তা মূলত নির্ভর করে কার্পোরেট লিডারের উপর।
কর্পোরেট লিডার যদি প্রকৃত সমঝদার হন, মানুষের চাহিদাকে যথাযথভাবে পড়তে পারেন, তার দলের আস্থা অর্জন করতে পারেন এবং একই সাথে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে তাদের সেরাটা বের করে আনতে পারেন, তখনই সেই কর্পোরেট কোম্পানি উন্নতির চূড়ায় উঠতে থাকে।
কিন্তু চূড়ায় উঠতে শুরু করলেই শুরু হয় আরেক বিপত্তি। যারা ইতিমধ্যে চূড়া দখল করে আছেন তারাই—বা ছাড় দেবেন কেন? চূড়ায় ওঠার এই দুর্গম যাত্রায় কেউই লাল গোলাপ নিয়ে অভিনন্দন জানানোর জন্য তৈরি থাকেন না। চেষ্টা করেন যে যার মতো ল্যাং মেরে ফেলে দিতে। কারণ সবাই চায় সাফল্য। ‘‘এভরিথিং ইজ ফেয়ার, ইন লাভ এন্ড ওয়ার’’। কর্পোরেট যুদ্ধে এই প্রবাদটুকু বড্ড বেশি যুতসই। তাই কর্পোরেট লিডারকে একদিকে যেমন হতে হয় দূরদর্শী তেমনই হতে হয় সাবধানী। তাকে মনে রাখতে হয় তার প্রতিটা পদক্ষেপের হিসেব। হিসেবে ভুল করলে কিংবা গৃহীত পদক্ষেপ সঠিকভাবে মনে রাখতে না পারলে প্রতিযোগী কোম্পানির কাছে ছোবল খাবার সম্ভাবনা প্রবল।
আবার কর্পোরেট জগতে ষড়যন্ত্র ও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন সুস্থ প্রতিযোগিতার দ্বারা প্রতিযোগীকে ঘায়েল করা যায় না, তখন কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের পথ ধরেন। উন্নয়নশীল কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ কাউকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে, ফাঁদে ফেলে কিংবা হুমকি দিয়ে হলেও কোম্পানির গোপন তথ্য ও কর্মপন্থা জানার চেষ্টা করে। এই তথ্য সেই কোম্পানির বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে কোম্পানীকে বিপদগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। তাই কর্পোরেট লিডারের চোখ ও স্মরণশক্তি হতে হয় গোয়েন্দার মতো।
কোনো কর্মচারীর আচরণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হয়। আর পরিবর্তন বুঝার জন্য প্রকৃত অবস্থা স্মৃতিতে রাখা জরুরি। কে কেমন, কে কী করতে পারে তা যদি কর্পোরেট লিডারের স্মৃতিতে ধারণ করতে না পারেন তাহলে তার চারপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনও বুঝতে পারবেন না। ফলে ধরাশায়ী হবার সম্ভাবনা ব্যাপক।
কর্পোরেট কোম্পানি মূলত একটি টিম ওয়ার্ক। কোম্পানির উত্থানে দলের প্রতিটি সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এমন নয় যে, প্রত্যেক সদস্যই সমান সক্ষমতা সম্পূর্ণ হবে, কেউ হয়ত কিছুটা দুর্বল হবে আবার কেউ হবে সবল আবার কেউ হবে গড়পড়তা। এই সবল, দুর্বল আর গড়পড়তার মাঝে সেতু বন্ধন রচনা করে দলটিকে সুষম গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেন কর্পোরেট লিডার। কিন্তু এই সেতুবন্ধন হতে হলে কর্পোরেট লিডারকে কর্মীদের সক্ষমতা, অক্ষমতা সঠিকভাবে জানতে হবে। যে কর্পোরেট লিডার কর্মীদের সক্ষমতা, অক্ষমতা যত সঠিকভাবে মাথায় রাখতে পারেন, তিনি তত মসৃণভাবে কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে পারেন।
কর্মক্ষেত্র কর্মজীবীদের দ্বিতীয় আবাসের মতো।
দিনের বেশিরভাগ সময় থাকা হয় এই কর্মক্ষেত্রেই। তাই কর্মক্ষেত্রই হয়ে ওঠে মানুষের দ্বিতীয় পরিবারের মতো। কোনো মানুষের সেরা পারফরমেন্স তখনই বেরিয়ে আসে যখন যে কর্মক্ষেত্রটিকে আপন করে নিতে পারে, কাজের সাথে হৃদয়ের সংযোগ ঘটাতে পারে। আর তা তখনই সম্ভব যখন কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী, তথা টিম লিডারের সাথে আস্থার সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
কাজের স্বীকৃতি মানুষকে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়। তাই কার কাজ ভালো হচ্ছে সেটি মাথায় রেখে তাকে পুরস্কৃত করা একজন আদর্শ টিম লিডারের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই ব্যাপারগুলি মাথায় না রাখলে কর্মীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। তখন শুধু শাস্তি বিধান, ভীতি প্রদর্শন কিংবা চিৎকার চেঁচামেচি করে কাক্সিক্ষত কাজ আদায় করা সম্ভব হয় না।
কর্পোরেট কোম্পানিতে লিডারই মূল চালিকা শক্তি। ভালো চালক হতে গেলে তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বাজার, চাহিদা, কর্মীদের প্রয়োজন, আকুলতা। ঘুণে ধরা মস্তিষ্ক নিয়ে লিডার হতে গেলে সে কোম্পানির বরং মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
- এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
- চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০ - আরো পড়ুন- কর্তারা কি রাখেন কর্মীদের মনের খোঁজ?