করোনা রোগীর নীরব ঘাতক "সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া" কি?

0
155
করোনা রোগীর নীরব ঘাতক "হ্যাপি হাইপোক্সিয়া" বা "সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া" কি?
করোনা রোগীর নীরব ঘাতক "হ্যাপি হাইপোক্সিয়া" বা "সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া" কি?

ফারহান (ছদ্মনাম) কান্না জড়িত কন্ঠে ফোন দিলে আমি বুঝে নেই নিকটাত্মীয় কেউ অসুস্থ। আর এখন যেহেতু করোনাভাইরাস এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, চারিদিকেই আক্রান্তের খবর, সুতরাং খানিকটা অনুমান করলাম সম্ভবত করোনা।
অনুমান মিছে হয়নি, এমনটিই হয়েছে। তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওর বাবা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা করোনা উপসর্গ নিয়ে বাসায় ছিলেন। গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসাও চলছিলো। কিন্তু উন্নতি খুব একটা হচ্ছিলোনা। শেষদিকে আবার দেখা দিলো হালকা কাশি। ধীরে ধীরে দূর্বল হওয়ায় বন্ধুর পরামর্শে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে যাবার পর চিকিৎসক অক্সিজেন দিলেন, পালস অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখলেন। রক্তে অক্সিজেনের মারাত্মক স্বল্পতা….।
সেই থেকে ফারহানের বাবা হাসপাতালের আইসিইউতে…। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সে ফুপিয়ে কাদছিলো ঘটনাটা বলতে যেয়ে, তারা টের পায়নি এভাবে রক্তের অক্সিজেন কমে যাওয়া।” রক্তে অক্সিজেনের পরিমান কমলে মারাত্মক কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু ফারহানের বাবার তেমনই ন কেনো উপসর্গ ছিলোনা। কেনো এমন হলো?!
আমাদের দেহে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন এর স্বাভাবিক মাত্রা ৯৫ থেকে ১০০%। অক্সিজেনের মাত্রা এর চেয়ে কমে যাওয়াকে বলে হাইপোক্সিয়া। মানব দেহের রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন যখন ৮০% এর নীচে নামে তখনই শুরু হয় অস্বাভাবিক দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, সেই সাথে শ্বাসকষ্ট, দম বন্ধ হয়ে যাবার অনুভূতি। নীলাভ বর্ণ ধারন করে মুখ, হাতের তালু, জিহবা, চোখ। দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা তখন সবার কিছুটা ভয় পেয়ে বসে সবার। এসব উপসর্গ দেখে বোঝা যায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে, তখন প্রধান কাজ হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া।
কাশি শ্বাসকষ্ট বা উপসর্গ ছাড়া রক্তে অক্সিজেন নামতে পারে? ইদানীং কিছু কিছু কোভিড-১৯ রোগীর অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। আইসোলেশন এ রোগী হয়তো খানিকটা স্বাভাবিক আছেন, খুব একটা কাশি শ্বাসকষ্ট নেই, কথাবার্তা বলছেন, পত্রিকা পড়ছেন, মোবাইলে সময় কাটাচ্ছেন কিন্তু পালস-অক্সিমিটার দিয়ে দেখা গেলো তার রক্তে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন অস্বাভাবিক রকমের কম। ৭০%,৬০% এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে ৫০%! রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা আশংকাজনক কম, অথচ রোগী টের পাচ্ছেন না। মেডিকেলের ভাষায় এই বিরল ঘটনাকে বলে হ্যাপি হাইপোক্সিয়া (Happy Hypoxia) বা সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া (Silent Hypoxia), নীরবে অক্সিজেন স্বল্পতা। ভয়ের কারন হলো অক্সিজেন এর মাত্রা ৮০% এর নীচে নামলে দেহেত বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। (মাল্টি ওর্গান ফেইলর)। তখন রোগীকে বাঁচানোই কঠিন হয়ে পড়ে।
ব্যাক্তিগত আমি ভাবে নিজেও এমন কিছু রোগীর কথা জেনেছি যারা বাসায় আইসোলেশন এ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কিন্তু কৌতুহল বশত পালস অক্সিমিটার দিয়ে তাদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন পরীক্ষা করে এমন রহস্যময় ঘটনা দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে হসপিটালাইজড করতে হয়েছে। দিতে হয়েছে হাই ফ্লো অক্সিজেন। কারো অক্সিজেন স্যাচুরেশন হয়তো বেড়েছে, কারো বাড়েনি। অবস্থা খারাপের দিকে গিয়েছে৷ এভাবে নীরবে অক্সিজেন কমে গিয়ে জীবন ঝুঁকিপূর্ন হয়ে যায় অনেকের।
কেনো এমন হয়?
ঠিক কি কারনে এমনটি হয় সুনির্দিষ্ট করে এখোনও ব্যাখ্যা করা যায়নি তবে বলা হয়ে থাকে অক্সিজেন এর মাত্রা কমে যাওয়াটা অনেকটা স্লো ডিল্কাইনিং প্রসেস এ৷ অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে কম মাত্রায় অক্সিজেন দেহ কিছুটা মানিয়ে নেয়। কোভিড-১৯ রোগীর রক্তে অতি ধীরে ধীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে থাকে, দেহ টেরই পায় না। ফুসফুসে মাইক্রোভাসকুলার ব্লকেজ এর কারনে এমন হয়। তাছাড়া যে অনুপাতে রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর মাত্রাও বাড়ার কথা সে অনুপাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড খুব একটা বাড়েনা, ফলে অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস তেমন একটা হয়না।
করোনা প্রতিরোধে আসুন সচেতন হই। মেনে চলি শারীরিক দুরত্ব। বাহিরে চলতে ফিরতে ব্যবহার করি মাস্ক।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায়  সর্ম্পূণই লেখকের।

Previous articleতরুণরা অন্যদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে?
Next articleকরোনার আঘাতে পরিবর্তিত সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ
ডা. সাঈদ এনাম
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ। মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট ইংল্যান্ড । মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here