করোনা নমুনা পরীক্ষা স্বল্পতা এবং করণীয়

0
51
ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা কেন বেশি মারা যাচ্ছে?
ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা কেন বেশি মারা যাচ্ছে?

বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আশানুরুপ নয় এটা বলতে দ্বিধা নেই। কোরবানী ঈদ লাগোয়া সময়ে নমুনা সংখ্যা অনেকখানি কমে গিয়েছিলো এখন আবার ধীরে ধীরে পনের হাজার ছুইছুই। নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার অনেক ধরনের কারনের কথা আপনারা ইতিমধ্যেই শুনেছেন। যেমনঃ

  • স্বল্প আয়ের মানুষ নমুনা পরীক্ষা করতে চায়না কারন সে কোয়ারেন্টাইনে চলে গেলে পরিবার বিপদে পরবে। জীবন এবং জীবিকার টানাপোড়েন এ জীবিকা বাঁচাতে সে পরীক্ষা বিমুখ হয়।
  • সংস্কার গুজব এর কারনে মানুষ নিজেকে করোনা রোগী বা তার বাড়ী করোনা বাড়ী এসব শুনতে চায় না।
    সামাজিক বা পারিবারিক নিগ্রহ তাকে এই পরীক্ষা থেকে বিরত রাখে
  • পরীক্ষার ফল পেতে দেরী।
  • আস্থাহীনতা (জেকেজি, রিজেন্ট সংক্রান্ত ঘটনাসমূহ)।
  • ফি নির্ধারণ।
  • উপসর্গহীন সংক্রমণ।
  • পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তবান্ধব।
  •  তথ্য ও প্রচার দূর্বলতা।
  • বন্যা ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যে দুটি মূল কারনে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে সেগুলো হলো:
১. নমুনা সংগ্রহ কম হওয়া (lack of sample collection)
২. নমুনা পরীক্ষা স্বক্ষমতা (lack of capacity of the existing laboratories)
আমি তাদের সাথে একমত পোষণ করি। তাহলে এ থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে?

নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোঃ
নমুনা সংগ্রহ বাড়াতে এই মুহুর্তেই তিনটি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। এতে বাড়তি ব্যয় এর অবকাশ নেই বাড়তি লোকবল এর প্রয়োজন পরবে না।

ক) কমিউনিটি মবিলাইজেশন
মানুষকে মাস্ক পড়া, জীবানুনাশক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এই বার্তাগুলো দেয়ার পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার গুরুত্ত্ব এবং নমুনা দেয়া এবং ফলাফল পাওয়ার প্রক্রিয়া, নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের অবস্থান, তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ পদ্ধতি এই বার্তাগুলো সহজ ভাষায় এবং বারংবার প্রচার করা। স্বাস্থ্যকর্মী, সিএইচসিপি, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, মাল্টিপারপাস ভলান্টিয়ার সহ অন্যান্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের একাজে সম্পৃক্ত করলে অবশ্যই নমুনা সংখ্যা বাড়বে।

খ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সরাসরি সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের উপসর্গ থাকুক না থাকুক পরীক্ষার আওতায় আনা এবং এ সংক্রান্ত বার্তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা।

গ) মোবাইল বুথ এর মাধ্যমে হার্ড টু রিচ এলাকাগুলোতে নমুনা সংগ্রহ সহজলভ্য করা। কোন কোন বুথে এখন পাচটি নমুনাও পরীক্ষা হচ্ছে না অথচ বস্তি বা শহরতলীতে সপ্তাহে দুই বা তিনদিন এই বুথগুলো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে নিয়ে গেলে নমুনা সংগ্রহ বাড়বে।
বিভাগ, জেলা, উপজেলা, এমনকি গ্রাম বা চরাঞ্চলেও এরকম মোবাইল বুথ এর মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।

এবার আসি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
ক) নতুন নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের আগে যে কেন্দ্রগুলো চালু হয়েছে বিশেষ করে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো। কোথাও হয়তো দক্ষ জনবল রয়েছে একটা বা দুটো অতিরিক্ত মেশিন দিলেই সক্ষমতা তিনগুন হয়ে যেতে পারে। কোথাও এক্সট্রাক্টার মেশিন, কোথাও বায়োসেফটি কেবিনেট, কোথাও হুড সরবরাহ করলে এই ল্যাবগুলোর কাজের মান এবং ব্যাপ্তি দুটোই বাড়বে। এই পরীক্ষাগারগুলো দ্রুত ফলাফল দিতে পারবে, ব্যাকলক দূর হবে, এবং নমুনা পরীক্ষার প্রতি সাধারন মানুষ এর আস্থা বাড়বে।
দ্রুত ফল পেলে করোনা চিকিৎসা ও রোগী ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে।

খ) ল্যাবরেটরী স্থাপন, অনুমোদন ও সম্প্রসারন এর সময় খেয়াল রাখতে হবে সারাদেশে যেন এর বিস্তৃতিটা সুষম হয়। এক জায়গায় বেশীরভাগ নমুনা পরীক্ষাগার থাকলে এর সংখ্যা অনুপাতে কখনোই কাংখিত নমুনা পরীক্ষা হবে না। সাধারন মানুষের কাছে পরীক্ষাটি সহজলভ্যও হবে না।

গ) এন্টিজেন এন্টিবডিভিত্তিক RDT রেপিড টেস্ট চালু করা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত মাস খানেক আগে চালু করেছে। আমাদের দেশে এই প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছে। আগামী ১৮ আগষ্ট, ২০২০ ইং তারিখে এবিষয়ে একটি জরুরী সভা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে গুরুত্ত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘ) সকল নমুনা পরীক্ষাগার এর নিয়মিত ও সার্বকক্ষনিক ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল, অনুমোদন, তদারকি ও পরীবীক্ষণ নিশ্চিতকরণ। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সহযোগীতার বিষয়টিও গুরুত্ত্বপূর্ণ।

ঙ) তথ্য সংগ্রহ, তথ্য যাচাই, গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ সর্বোপরি রোগতত্ত্ব বিষয়ক তথ্যবিশ্লেষণ করে নীতি নির্ধারন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন।
আমাদের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য এবং এর প্রয়োগ নিয়ে কতটুকু কাজ হয়েছে বা আমরা কতটুকু সন্তুষ্ট তা সংশ্লিষ্টরা ভালো জানেন, খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ কিছু, দৃশ্যমান কিছু আমার অন্তত চোখে পরেনি। একটা উদাহরণ হলো জোনিং সিস্টেম।

অপ্রাসংগিক হলেও একটা কথা বলা খুব জরুরী এখানে। আপনারা হয়ত ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন BPRP BANGLADESH PANDEMIC RESPONSE PLAN জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এটি একটি অর্জনযোগ্য, সুন্দর এবং সহজবোধ্য নথি। এত এত কমিটি এত এত এসব কমিটির সভ্য। একবার একটু হাত তুলবেন দয়া করে কজন এটা পড়েছেন? কাজ করতে বললে আমরা বলি কোন পরিকল্পনা নাই, পরিকল্পনা থাকলে আমরা সেটা খুলেও দেখি না এটা হতাশার। এই বিপআরপি অনুসরণ করেই সামনের দিনে স্বাস্থ্য তার করোনা বিষয়ক কর্মকান্ড সাজাবে, করোনা যুদ্ধে শত অভিযোগের পরও কে জানে একদিন বাংলাদেশই হয়তো ইতিহাস হবে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো উন্নত সমৃদ্ধ হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই আশাতেই বুক বাধি।

লেখক: ডা. মো. রিজওয়ানুল করীম শামীম।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দিনচর্যা!
Next articleযুক্তরাষ্ট্রে ৪ তরুণের একজনের মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা:সিডিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here