করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে যারা অবসাদে ভুগছে না। এক ঘেয়ে জীবনে সবাইই যেন হাপিয়ে উঠেছে। এই মন খারাপ বা অবসাদ কাটিয়ে জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করার জন্য অবশ্যই আমাদের প্রয়াস করতে হবে। তবেই আমরা সুস্থ ও সুন্দর জীবন আশা করতে পারবো।
বর্তমান সময় অধিকাংশ মানুষের জন্যই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। যদি আপনার এটা মনে হয় যে আপনি ই একমাত্র যার মনে বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ভর করেছে, যার প্রতি মুহূর্ত অস্বাভাবিক কাটছে এবং যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত অবসন্ন, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। করোনা নিয়ে অধিকাংশ মানুষই অত্যন্ত মানসিক পীড়ার মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। অনেকেই যারা নিজেদের খুব মানসিক ভাবে দৃঢ় হিসেবে কল্পনা করতেন, যারা ভাবতেন তারা সহজে ভেঙ্গে পড়েন না এবং তাদের সহ্য শক্তি অন্যান্যদের থেকে বেশী, তারাই আজ আগের সকল ধারণা ভুল প্রমাণ করে নিজের মানসিক অবস্থার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন।
তাই নিজেকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা মনে করে নিজের উপর আরও মানসিক চাপ না বাড়িয়ে বরং সার্বিক ভাবে ভালো থাকার উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। খুব সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করলে এই মন ভালো থাকবে, এই অবসন্ন মনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
১) চিন্তাভাবনার ভিন্নতাঃ কোন পরিস্থিতি আমাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে সেটি নির্ভর করে ঐ পরিস্থিতি বা ঘটনার উপর আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং সেটিকে আমরা কতোটা গুরুত্ব দিচ্ছি সেটির উপর। করোনা কালীন এই দুঃসময়ে আমরা যদি আমাদের মনের এই অবসন্নতাকে আরও বেশী গুরুত্ব দেই, যদি এমনটা ভেবে নেই যে আমরা খুব কষ্টে আছি তাহলে আমাদের মনের অবসাদের প্রভাব আরও বহু মাত্রায় পড়বে এবং এই পরিবেশে টিকে থাকা আমাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের এই প্রশ্ন করতে পারি যে, “কেন আমরা খারাপ থাকবো?”, “কেন আমরা এই দুঃসময়কে এতোটা গুরুত্ব দেবো?” তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর মত মানসিক শক্তি অর্জন করার প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করতে পারবো। আমাদের
চিন্তাভাবনাই আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সুন্দর করে। আবার এই চিন্তাভাবনাই তাকে আরও দুঃসহ করে তোলে। আমরা যদি এই দুঃসময়কে গুরুত্ব না দিয়ে বরং একে মেনে নিয়ে ভালো থাকার প্রচেষ্টা করি, ধৈর্য ধারণ করে সেসব কাজের প্রতি মনযোগী হই যা আমাদের আনন্দ দিতে পারে, তাহলে আমাদের মন এই পরিস্থিতিতেও ভালো থাকার মত কারণ এবং উপায় খুঁজে নিতে পারবে।
২) সৃজনশীল কাজকর্মঃ আমরা যত বেশী বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভাববো, আমাদের মন ততোই বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আশঙ্কায় অবসাদে মন জর্জরিত হবে। এসব দিক থেকে নিজের মনোযোগ সরিয়ে নেবার জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল কাজকর্মে সময় অতিবাহিত করুন। সৃজনশীল কাজ আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করে। নতুনের মাঝে আমাদের মন সর্বদা আনন্দ খুঁজে নেয়। এমন অনেক মানুষই আছেন যারা এই দুঃসময়েও নিজের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজকর্ম করে আর্থিক ভাবেও স্বচ্ছল থাকার সুযোগ করে নিচ্ছেন। এতে করে যেমন আর্থিক সমস্যা দূর হচ্ছে তেমনি মনের মাঝেও প্রশান্তি কাজ করছে। এভাবে নিজের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুঃসময়েও মন ভালো রাখা খুব কঠিন কিছু নয়।
৩) আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাঃ দুঃসময়ে যদি মনোবল অটুট থাকে, তাহলে অনেক কঠিন সময় ও খুব সহজে কেটে যায়। আর যদি বিপদে ভেঙ্গে পড়ি এবং সব রকম আশা ছেড়ে দিয়ে বিপদের কাছে মাথা নত করে ফেলি, তাহলে বিপদ আরও বহু গুণে বেড়ে যায়। একইভাবে, মহামারীর এই সময়েও আমরা যদি বিপদ মুক্তির কথা না ভেবে শুধুমাত্র এই বিপদ নিয়েই ভাবি এবং এটা ভেবে নি যে এটাই সব কিছুর শেষ, আমরা আর কখনোই সুন্দর সময়ে ফিরতে পারবোনা, তাহলে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়াও অসম্ভব হয়ে যাবে। একটু একটু করে সেটাই হবে যা আমরা মনে মনে ভাবছি।
আর আমরা যদি এই বিপদে মন খারাপ না করে বরং এটা ভাবতে পারি যে খুব দ্রুতই এই খারাপ সময় কেটে যাবে এবং আমরা খুব দ্রুত এর সমাধানে পৌঁছতে পারবো, তাহলেও সেটাই হবে আমাদের অদূর বাস্তবতা। তাই এই মহামারীর দুঃসময়ে মনকে অবসাদাচ্ছন্ন করলে চলবেনা, আত্মবিশ্বাস হারালে চলবেনা। সাহস রাখতে হবে এই দুঃসময়ে লড়ে যাওয়ার। আর আত্মবিশ্বাসী হৃদয়ে কখনো অবসাদ বাসা বাধেনা, মন সদা প্রফুল্ল থাকে।
আমরা হয়তো চোখের নিমিষে কঠিন সময়কে বদলে দিতে পারবোনা, কিন্তু যখন দুঃসময়ে নিজের মন ভার মুক্ত রাখতে পারবো, অবসাদ মুক্ত থাকতে পারবো, ততো দ্রুত আমরা বদলের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। আমাদের মনের ইতিবাচক ভাবনাই আমাদের নতুনের পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে। তাই মন ভালো রাখুন, প্রাণ খুলে বাঁচুন, এবং করোনাকে পরাজিত হতে দেখুন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে