মহামারি করোনার এই দুঃসময়ে বিভিন্ন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
মহামারিকালীন সময়ে করোনাকে সব থেকে সামনে থেকে যারা মোকাবেলা করছেন এবং আমাদের সাধারণ মানুষকে মহামারি থেকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ প্রয়াস করছেন তারা হলেন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ। আর এ কারণে মহামারীর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতেও তারাই রয়েছেন।
করোনাকালীন সময়ে তারা আমাদের জন্য চব্বিশটা ঘণ্টা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। তাই তাদেরকে ভালো রাখাও আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। তারা যেন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে না পড়েন এবং তাদের মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এটি যেমন তাদেরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে, তেমনি একই সাথে তাদের সেবা প্রদানকেও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করবে।
মহামারিতে করোনা যেমন দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছে তেমনি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মাঝেও আশংকাজনক হারে বেড়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অক্টোবর ২০১৯-এ ন্যাশনাল একাডেমী অব মেডিসিনের করা একটি রিপোর্টে দেখা গেছে ৩৫-৫৪ শতাংশ নার্স এবং ডাক্তারদের মাঝেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এছাড়াও করোনাকলীন সময়ে মেডিকেল স্টুডেন্ট এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারীদের মাঝে এই হার প্রায় ৬০ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মাঝে সৃষ্ট এই মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা গুলোর মধ্যে রয়েছে বিষণ্ণতা, হতাশা, বিভিন্ন ধরণের ট্রমা, দুশ্চিন্তা সহ তীব্র মানসিক চাপ ইত্যাদি।
করোনাকালে এসব মানসিক সমস্যা এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করছে যে অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে এবং হারও অনেকটাই বেশি। এ ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আরও তীব্র আকার দিচ্ছে তাদের মানসিক চিকিৎসা সেবা না নেবার মনোভাব।
করোনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের একটি বড় অংশ তাদের মেডিকেল লাইসেন্স হারাবার ভয়ে তাদের নিজেদের মানসিক সমস্যাকে লুকিয়ে রাখছেন। আবার তাদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এর অভাব, সেবার অপ্রলতুলতা এবং সর্বোপরি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্বের অভাবে এই সমস্যাগুলো উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা নিরসনের জন্য সর্ব প্রথম প্রয়োজন তাদের প্রতি অধিক মনোযোগ এবং তাদের সমস্যাগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে যথেষ্ট পরিমাণ উদ্যোগের প্রয়োজন।
তাছাড়া করোনায় চিকিৎসক এবং নার্সদের জন্য কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা, যাতে তারা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে উৎসাহি হয়। অর্থাৎ সব পর্যায়ে সচেতনতা এবং সেবা নেওয়ার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিই হতে পারে এই সমস্যা সমাধানের মূল উপায়।
সব সময় মনে রাখা উচিৎ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা এই মহামারি করোনাকালীন দুঃসময়ে আমাদের সব থেকে বড় বন্ধু। তারা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেই আমাদেরকে যথাযথ সেবা প্রদান করতে পারবেন।
তাছাড়া করোনায় মানবিক দিক বিবেচনা করলেও তাদের সুস্থতা রক্ষায় আমাদেরকেই তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। তাই মহামারীর এই দুঃসময়ে তাদের মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করে সেসব সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/best-practices-in-health/202106/we-need-prioritize-mental-health-healthcare-workers
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা