করোনায় মানুষ কেন বাইরে বের হচ্ছে?

করোনায় মানুষ কেন বাইরে বের হচ্ছে?
করোনায় মানুষ কেন বাইরে বের হচ্ছে?

বিশ্বে করোনা ভাইরাস এই মুহূর্তে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এটা দ্রুতই মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাই অন্য যেকোন ভাইরাল সংক্রমণের চেয়ে এটি বেশি ভয়াবহ। এটি এখন যেকোন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতই। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে বড় উপায় জনবিচ্ছিন্ন থাকা। এই জন্য ভিন্নি দেশে লকডাউন ঘোষনা করা হচ্ছে। লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
আমাদের দেশেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বাড়িতে থাকে তবে তার মাধ্যমে বাড়ির লোক সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও তার দ্বারা বাইরের ব্যপক মানুষের সংক্রমিত হওয়া এড়ানো যায়। আবার বাইরে থাকলে একজন সুস্থ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার যে ঝুঁকি থাকে, বাড়িতে থাকার ফলে তা অনেকাংশেই কমে যায়।
করোনা এমন একটি ভাইরাস যা দ্বারা সংক্রমিত হলে সাথে সাথেই টের পাওয়া যায় না বা লক্ষণ দেখা যায় না, আর লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা অনেকে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আর আমাদের দেশে এখনও করোনা শণাক্তের পর্যাপ্ত কীট নেই, নেই প্রয়োজনীয় যথেষ্ট চিকিৎসা সরঞ্জাম, নেই আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ চিকিৎসক। আর যেহেতেু এই সংক্রমণে সেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেনও। তাই আমাদের দেশে করোনা এড়ানোর জন্য এই মুর্হূতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও তাই খাদ্য, ঔষদেল মত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে আহ্বান করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলোও বাইরে বের না হতে হতে বেশি বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অহেতুক ঘোরঘুরির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এর পেছনে একাট বড় কারণ হল অজ্ঞতা। আমাদের দেশে হতদরিদ্র, অশিক্ষিত এবং অসচেতন মানুষের সংখ্যা বিশাল। তারা করোনার ভয়বহতা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না। অনেকেই মনে করেন যে, প্রতিদিনই কত রোগে কত মানুষ মারা যাচ্ছে। এই রোগে মারা যাওয়াটাও তেমনই। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছে না যে, অন্যান্য রোগে মারা যাওয়ার মত করোনায় আক্রান্তেরা শুধু নিজের রোগে নিজে মারা যাচ্ছে না। করোনা রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি নিজে মরার আগে আরো অনেককে সংক্রমিত করে যায়। তাই এখন শুধু সরকারি ঘোষণা আর গণমাধ্যমে প্রচারে কাজ হবে না বলে মনে হয়। এখন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কিভাবে করোনার ভয়বহতার তথ্য তুলে ধরা যায়, বা সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় সেটি নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে।
আবার সবকিছু বোঝার পরও অনেক সচেতন মানুষকে খাদ্য, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক কিংবা জরুরী প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হচ্ছে। তাই বাইরে বের হলেই শাস্তি না দিয়ে তার প্রয়োজনটা জেনে তাকে বুঝিয়ে বলা দরকার। তাকে বোঝাতে হবে যে সে যদি বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে বাড়িতে যায় তবে সে বাড়ির লোকদেরকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
অনেকে আবার আতংকিত হয়ে কোথায় কি ঘটছে সেটা দেখার জন্য বাইরে বের হচ্ছে। তবে হতদরিদ্র এবং অসচেতন মানুষের সংখ্যাই বাইরে বেশি। তবে কেউই সেধে মরতে চাই না, তাই তাদেরকেও করোনার ভযবহতা বোঝাতে হবে।
অনেকে সময় আবরা আমরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও বাইরে বের হয়, এই বাইরে বের হওয়ার কারণগুলি বের করে সেগুলির সমাধান এখন খুব জরুরী। অনেকের মধ্যে আবার বিধি নিষেধ না মানার প্রবণতা কাজ করে। তাদেরকেও বোঝাতে হবে।
জাতিগতভাবে আমাদের মধ্যে নিয়ম না মানার প্রবণতা কাজ করে। আর বাড়িতে থাকার এই ধরণের নিয়মের সাথে আমরা মোটেই অভ্যস্ত না। তাই বাড়িতে থাকার গুরুত্ব প্রচারের সাথে সাথে বাইরে বের হওয়া না হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা করাটাও জরুরি।

Previous articleকরোনার দিনে বাচ্চাদের কিভাবে সামলানো যায়?
Next articleকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে ঝুঁকি আছে?
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here