করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির কোয়ারেন্টাইন এর দিনগুলো ভীষণ ভাবে কঠিন এবং কষ্টকর। কারণ পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে এই ভয়াবহ রোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করতে হয়।
এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে ও তার পরিস্থিতি কতোটা খারাপ হতে পারে সেটা নিয়ে অর্থাৎ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন কাটায়। এই শঙ্কার মাত্রা যখন বেশি হচ্ছে তখন সেটার বিরূপ প্রভাব পড়ছে তার মানসিক আচরণের উপর।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রাগ হওয়া এবং সেটার বহিঃপ্রকাশ সঠিক ভাবে করতে পারছে না মানুষ। ফলে পরিবার পরিজনদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে দেখা যাচ্ছে। যার প্রভাব করোনা পরবর্তী সময়েও থাকছে।
করোনা আক্রান্ত প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যেমনঃ জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যাথা, দুর্বলতা, মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্ণতা, হতাশা, মানসিক চাপ, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, চিন্তা করতে দীর্ঘ সময় লাগা বা ব্রেইন ফগ, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, কান ব্যাথা, শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা, ঘুমের সমস্যা, ফুসকুড়ি ইত্যাদি।
করোনায় আক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তিই প্রায় ১৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়টি লাগছে চার সপ্তাহেরও বেশি। তারা লং কোভিড এ আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্তের ফলে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাব দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে ভিটামিন ডি।
করোনাকালীন সময়ে সুষম খাবার গ্রহণ করা বিশেষ জরুরী। এ সময়ে সুষম খাবার ব্যক্তির শারিরীক ও মানসিক উভয় প্রকার স্বাস্থ্য ভাল রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিস্কের সঠিক কার্যক্রম যেমনঃ স্মৃতিশক্তি, চিন্তনীয় ও আবেগীয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ও খনিজ (মিনারেল) এর প্রয়োজন হয়।
আর বিষণ্ণতা ও মুড ডিসঅর্ডার এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি, আয়রণ এবং ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবের সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত অবস্থায় বিশেষ করে মনোযোগের অভাব, অল্পতে বিরক্তি, বিষণ্ণতা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, ব্রেইন ফগ এই সমস্যাগুলো আসলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির ফলেই ঘটছে। তাই করোনাকালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদের এই বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।
করোনার প্রভাব অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুর উপরেই পড়েছে । আর এই ধাক্কা সামলিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য চাই শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা। সেইজন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরী। যেমন-
১। সুষম খাবার খাওয়া বিশেষ করে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
২। রাত জাগা থেকে বিরত থাকা ও প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো
৩। নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম করা, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট
৪। ধূমপান, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করা
৫। প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে থাকা
৬।পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা
৭। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট হলেও নিজেকে সময় দেয়া এবং সেই সময় নিজের পছন্দনীয় কাজটি করা
৮। মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করা
৯। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের একটি তালিকা করা ও তা সম্পাদনের জন্য সময় নির্ধারণ করে যথাসম্ভব সেই অনুযায়ী কাজ করা।
১০। নিজের জীবনের ইতিবাচক ঘটনাগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া ও যথাসম্ভব নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করা।
১১। কোনমতেই মানসিক চাপ সামলাতে পারছেন না এমন অনুভব করলে পেশাগত কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
সানজিদা আফরোজ
মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর
ল্যাবএইড হাসপাতাল, ঢাকা