করোনার সাথে ১৮ দিন! সেরে ওঠার অভিজ্ঞতা জানালেন এসিল্যান্ড

দুইটা শব্দের মধ্যে যে এত দূরত্ব হতে পারে তা আগে কখনো ভাবতেই পারিনি।এই দুইটা শব্দ মুহুর্তের মধ্যে আপনার শরীরে ও মনে যে পরিবর্তন নিয়ে আসবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। এই শব্দ দুটি- নেগেটিভ ও পজিটিভ।
দুইজন করোনা পজিটিভ এস আইয়ের সাথে ডিউটি পালন ও একসপ্তাহ যাবত সর্দি লেগে থাকায় টেস্ট করায়। গত ১৮ই এপ্রিল রাতে জানতে পারি আমার করোনা পজিটিভ।
প্রথমেই আমি যা করেছি তা হল মনোবলকে শক্ত রেখেছি। নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছি আগামী ১৫-২০ দিন কি করব,কি খাব এবং কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরব ইত্যাদি বিষয়ে। সেদিন রাতেই ঘুমানোর আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লিস্ট করে রাখলাম।

প্রথম দিন সকালেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ,ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার,দুধ,গরম পানির ফ্লাক্স,ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন,টিস্যুসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখলাম। শুরু হল বেঁচে থাকার জন্য অন্যরকম যুদ্ধ।

দ্বিতীয় দিন সকালে বাড়ি থেকে ফোন দিল কে বা কারা নাকি বলেছে আমি মারা গেছি।এক সিনিয়র স্যারের পরামর্শে ফোন ধরা(শুধুমাত্র পরিবার,ডাক্তার ও সিনিয়র স্যারদের ফোন ব্যতীত),ফেসবুক,টিভি নিউজ দেখা বন্ধ করে দিলাম (এসব তথ্য আপনার মনকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট)। কোনকিছু স্পর্শ করার আগে হেক্সিসল দিয়ে হাত রাব করা,বারবার হাত ধোয়া, বাইরের জিনিস ঢুকানোর আগে ব্লিচিং পাউডারের সলিউশনের স্প্রে করা যেন জীবনের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সকালে উঠেই সময়মত খাওয়া,খাওয়ার আগে মধু লেবুর গরম পানি খাওয়া,প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি খাওয়া,পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি নিয়ম করে ব্যায়াম ও ঘরের মধ্যে হাটাহাটি করেছি।

এবার আসি এসময়গুলো কিভাবে কাটিয়েছি:
মনটাকে ফ্রেশ রাখার জন্য মজার মুভি,মজার মজার সব ভিডিও দেখে, বাগানের গাছগুলো পরিচর্যা করে সময় কাটিয়েছি।এরমধ্যে পড়া হয়ে গেছে কয়েকটা বই। প্রতিদিন নিজের রান্না নিজেই করেছি,প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার,কাপড় ধোয়া সব নিজেই করেছি।

অবশেষে ৩০তারিখের প্রথম টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসল। আর গতকাল দ্বিতীয় টেস্টের রেজাল্টও নেগেটিভ আসল। সবার দোয়া,আশীর্বাদ ও আন্তরিক সহযোগিতাই আজ আমাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।

মনে রাখবেন।এই অসুখের এখনো পর্যন্ত কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই নিজের মনকে শক্ত রেখে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে পারলেই আপনিই পারবেন জয়ীর বেশে ফিরতে। আসুন সবাই ঘরে থাকি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। করোনাকে প্রতিরোধ করি।
লেখক: হিমাদ্রী খীসা, এসিল্যান্ড, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।

Previous articleকরোনাভাইরাস: ‘রেমডেসিভির’ উৎপাদনের অনুমতি পেলো বাংলাদেশের ৬ কোম্পানি
Next articleকরোনাকালীন রমজানের খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here