প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বব্যাপী সব পেশার মানুষের জীবনকে বিষাদগ্রস্থ করে ফেলেছে। আর এ বিষাদগ্রস্থতা মানসিক,শারীরিক ও সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। প্রভাব ফেলছে যানবাহন চালকদের জীবনেও।
যানবাহনের মধ্যে রিকশা আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার্য যোগাযোগ মাধ্যম, যার কারণে ঢাকা শহরকে রিকশার নগরী বলা হয়।আর এতো বিপুল সংখ্যক রিকশা চলাচল যখন দেখা যায় না তখন পরিবেশ যে স্বাভাবিক নেই তার বুঝার বাকি থাকে না।
লকডাউনের কারণে রিকশার পরিমান কম, এর মধ্যে যেসব রিকশা দেখা যায় তারা অনেকটা যাএীবিহীন সময় কাটাচ্ছে। এরকম একজন রিকশাওয়ালা কলিমউদ্দিন জানান, করোনা ভাইরাস তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ছয়জন সদস্য তার পরিবারে, সে নিজে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। রিকশা চালিয়ে বাসা বাড়া ও কোনরকম সংসার চালাতো। কিন্তু এখন তাদের পেট চালানোয় কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার দিনশেষে রিকশা জমা দেয়ার সময় ভাড়ার জন্য টাকাও জমা দিতে হয়। এসব কিছু মিলিয়ে সে চোখে শুধু অন্ধকার দেখছে।
সারাদিন হাতেগোনা কয়েকজন যাএী পায়, তার মধ্যে অনেকসময় পুলিশ রিকশা আটকে রাখে বা চলতে দেয় না। এসব কিছু তার জীবনকে কঠিন করে তুলছে। সামনে এরকম চলতে থাকলে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।
মরণঘাতী করোনা ভাইরাস ধনী গরিব কিছু বুঝে না,সকলের কাছেই আতংকের নাম। গরিবের কাছে আতংকের বিষয় না খেয়ে মরে যাওয়ার। ধনীরা লকডাউনের মধ্যেও ঘরে থেকে খেয়ে পড়ে ভালোমতই দিন কাটাতে পারছে, কিন্তু পেটের দায়ে গরিব রিকশাচালকদের ঝুঁকি নিয়ে ও বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে। এরকম ২ বছর আগে ঢাকায় আসা আরো একজন রিকশাচালক সাদিক আলী জানান, চারপাশ থেকে ভাইরাস সম্পর্কে সে শুনেছে, সচেতন থাকা, বার বার হাত ধোয়ার ব্যাপারেও সে জানে।
সে জানায়, অনেক যাএী তো রিকশায় চড়ে, কেউ যদি সংক্রমিত থেকেও থাকে তাহলে তো বোঝার কোন উপায় নেই, কিন্তু রিকশা চালিয়ে তো আর বাসায় থেকে সচেতন থাকার মতো অবস্থা থাকে না। তার পরিবারেও ৫ জন সদস্য, ২ মেয়েকে গ্রামে পড়াশোনা করে তার স্ত্রী বাসা বাড়িতে কাজ করে আয় করতো,কিন্তু তার সাথে তার স্ত্রীর ও আয় বন্ধ এখন। সারাদিন যা আয় হয় তা দিয়ে খাবার জুটানোই এখন কষ্ট। সামনে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে পারবে কিনা, বাসা বাড়া এসব কিছু তাকে দিন দিন হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে, ভাইরাসের ভয় তো আছেই।
এরকম হাজারো রিকশা চালক আছে, যারা রিকশা চালিয়ে আয় করে।কিন্তু বর্তমান করোনা ভাইরাসের কারণে তা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মানসিকভাবে ও সবল থাকাটা হয়তো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।