করোনাভাইরাস: বাইরে বেরিয়ে কীভাবে নিরাপদে থাকবেন?

করোনাভাইরাস: বাইরে বেরিয়ে কীভাবে নিরাপদে থাকবেন?
করোনাভাইরাস: বাইরে বেরিয়ে কীভাবে নিরাপদে থাকবেন?
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়গুলোর একটি হিসেবে বিশেষজ্ঞরা যে বিষযটির দিকে সবাইকেই খেয়াল রাখতে বলছেন, তাহলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অর্থাৎ অন্যদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে খানিকটা দূরে থাকা।

কিন্তু জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এলে তা কতটা মানা সম্ভব, তা একটি বড় প্রশ্ন হয়েই থাকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এমন মুহূর্তে যাদের বাইরে বের না হলে কোন ধরণের অসুবিধা নেই, এমন মানুষদের ঘরেই থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আর বের হতে হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বিকল্প নেই বলেও মত তাদের। বিবিসির এক প্রতিবেদনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে –

১. মাস্ক যথাযথভাবে পরা

ভিড় বা জনসমাগমে যেতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরার কোন বিকল্প নেই।
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে যেতে হয় এমন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যদি এন-৯৫ মাস্ক না থাকে, তাহলে তারা সার্জিক্যাল মাস্ক এক সাথে দু’টি পড়তে পারেন। এমনকি তিনটিও পরা যেতে পারে। দু’টি বা তিনটি সার্জিক্যাল মাস্ক একটি এন-৯৫ মাস্কের বিকল্প। তবে এন-৯৫ মাস্ক থাকলে একটি পরলেই হবে। অচেনা মানুষের সামনে বা বাইরে গেলে এক সাথে দুটো মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।
তবে যে মাস্কটি পরা হচ্ছে, সেটি সঠিক নিয়মে পরতে হবে। নাক-মুখ পুরোপুরি ঢেকে দিতে হবে। নাকের সাথে মাস্কের মাঝখানে যাতে কোন শূন্যস্থান না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাস্কের ভেতরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নাক বা থুতনি বাইরে বেরিয়ে থাকলে দুটি মাস্ক পরেও কোন লাভ হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, প্রয়োজন হলে ঘরে তৈরি করা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, এ ধরণের মাস্ক এক বার ব্যবহারের পর সেটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

২. গন্তব্যে যাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতবার সম্ভব হাত ধোয়া

বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব সাবধান থাকতে হবে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। সেটি না হলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যতবার সম্ভব সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন বিভিন্ন অফিস, দোকান, ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে। এগুলো ব্যবহার করে বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া হাত না ধুয়ে কোনভাবেই চোখ, মুখ ও নাকে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. সাবান দিয়ে গোসল করা

শুধু কাপড় পরিষ্কার করা বা হাত-মুখ ধুলেই হবে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে, বাইরে থেকে আসার পর পুরো শরীরে সাবান মেখে গোসল করে নিতে হবে। এর আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে যাওয়া যাবে না। পরিবারে বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. পরিহিত পোশাকটি ধুয়ে ফেলা

বাইরে বের হওয়ার পর বাসায় ফিরলে পরিহিত পোশাকটি সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর এটি ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনকি পরিহিত জুতা জোড়াও ঘরের বাইরে রাখতে হবে এবং সেগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫. চশমাগ্লাভসপিপিই’র ব্যবহার
শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, যেহেতু চোখের মধ্য দিয়েও করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তাই এটি ঠেকাতে সতর্কতার অংশ হিসেবে জিরো পাওয়ারের গ্লাস বা চশমা পরা যেতে পারে। এতে করে চোখ সরাসরি ড্রপলেটস থেকে দূরে থাকবে বলে জানান তিনি।
তবে মুশতাক হোসেন বলছেন, বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে গ্লাভস বা পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক) পরাটা জরুরী নয়। কারণ গ্লাভস পরলে সেটা যদি পরিবর্তন করে আরেকটি পরা না যায়, তাহলে সেটি কোন কাজে আসে না।
এর চেয়ে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়াটা অনেক বেশি নিরাপদ। পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার ক্ষেত্রেও তিনি একই কথা  বলেছেন । তার মতে, যাদেরকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবহন, মরদেহ সৎকার কিংবা চিকিৎসা দেয়ার মতো কাজ করতে হয় না, তাদের পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার দরকার নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে – বিশেষ করে যখন বাংলাদেশে সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে তখন – ব্যক্তিগত সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: বিবিসি
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকরোনার নতুন উপসর্গ: শরীরের অবসন্নতা ও ক্লান্তি
Next articleশৈশবের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ থেকে হতে পারে মানসিক সমস্যা:গবেষণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here