বর্তমান বিশ্বে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এক আতংকের নাম। এ ভাইরাস এর উৎপত্তি ধরা হচ্ছে চীনের উহান প্রদেশের মানুষের কাছ থেকে, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে বতমান পর্যন্ত সারা বিশ্বে এর বিস্তার ঘটেই চলছে।
বিবিসি করোনা ভাইরাসের আবিষ্কারক সম্পর্কে যে তথ্য জানিয়েছে তাতে মানব দেহে সংক্রমন ঘটাতে সক্ষম করোনা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন আলমিডা ১৯৬৪ সালে। ভাইরাস ইমেজিংয়ের পথিকৃৎ এই নারী স্কটল্যানডের একজন বাস চালকের মেয়ে,স্কুল ছেড়েছিলেন ১৬ বছর বয়সে। করোনা ভাইরাস বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সবার কাছেই নতুনভাবে পরিচিত। প্রতিদিনই এর নতুন নতুন কিছু না কিছু তথ্য বের হচ্ছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এর সংক্রমণ ও প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তেমনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক করোনা ভাইরাসের আনবিক রহস্য বের করার দাবি করছেন। প্রি-প্রিন্ট অবস্থায় গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে জীববিদ্যা বিষয়ক গবেষণার বিশিষ্ট সংগ্রহশালা ‘বায়ো আর্কাইভ-এ’। গবেষণা পত্রটির নাম দেয়া হয়েছে, ডিকোডিং দ্য লেথাল ইফেক্ট অব সাস কভ-২( নভেল করোনা ভাইরাস) সেটইনস ফ্রম গ্লোবাল পাসপেক্টটিভঃমলিকুলার প্যাথোজেনেসিস অ্যানড এভোলিউশনারি দিভা জেনস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ চার গবেষক হচ্ছেন শুভম ব্যানাজি, পৃথা ভট্টাচার্য, শিরিনজনা ধর ও সন্দীপ ভট্টাচার্য। গবেষক দলের প্রধান শুভম ব্যানার্জি বলেন, আমরা দেখেছি যে করোনা ভাইরাসের চার থেকে পাঁচটি সেটন রয়েছে। চীন বলেছিল দুটি। কিন্তু তখন তাদের দেশেই শুধু ঘোরাফেরা করছিল ভাইরাস। সেই অনুযায়ী সঠিক।
কিন্তু বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর তারা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। খুঁজে পায় চার পাঁচ ধরনের স্ট্রেন। তারা গবেষণা করতে গিয়ে দেখছে যে, বিভিনন দেশে এর বিভিন্ন চরিত্র। সেগুলোকে ভাগ করে দেখা যাচ্ছে, ইতালি, স্পেন, আমেরিকায় এর মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি, ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ সবথেকে শক্তিশালী। চীন- জাপান এইসব দেশে এর শক্তি কম, ৬-৮ শতাংশ। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনাম এর মারণ ক্ষমতা সব থেকে কম,২-২.৫ শতাংশ। গবেষণা থেকে জানা গেছে মৃত্যুর হার র্নিভর করছে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর। মিউটেশনের সংখ্যা, রেয়ারিটি অব দ্য অ্যালেয়িক ভেরিয়েশন আর ফাংশনাল কনসিকোয়েনস অব দ্য মিউটেশন অ্যাট প্রোটিন লেভেল। এরপর তারা এই তিন ধরনের কোভিড-১৯ এর মিউটেশন নিয়ে গবেষণা করেন।
সেই গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন চীনে বা তার আশেপাশে যে মিউটেশন ছিল ভাইরাসের তা সি টু সি। ইতালি, সেপন, আমেরিকায় এর মিউটেশন এ টু টি,জি টু এ, টি টু এ। ভারত, অসটেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনামের মতো দেশে যেখানে মারণ ক্ষমতা সেখানে এই ভাইরাসের মূলত দুটি মিউটেশন রয়েছে। ডিলিটেশন মিউটেশন ও নন-সিনোনিমস মিউটেশন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চরিত্র যে ধারণ করছে ভাইরাস তা মিউটেশন থেকে বুঝা যায়। শুভম শুভম ব্যানার্জি বলেন, এর থেকেই স্পষ্ট তিন ধরনের মৃত্যু হার বিশিষ্ট দেশে তিন ধরনের ভ্যাকসিন লাগবে। যেটা ইতালিতে কাজ করবে সেটা চীনে কাজ করবে না,আবার যেটা চীনে কাজ করবে সেটা সেটা ভারতে কাজ করবে না। কিন্তু ভারতে যেটা কাজ করবে সেটা অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামে কাজ করবে। ইতালির ভ্যাকসিন কাজ করবে আমেরিকায়।
তাদের এই প্রাথমিক গবেষণার বিষয়টি এখনো কেউ বলেনি। তারা এখন প্রোটিন স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করছে। এর পরে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে। তাদের এ প্রাথমিক ধাপ প্রকাশিত হয়েছে ‘ বায়ো আর্কাইভ’ এ। সেখানে ১৪২ টি দেশের বিজ্ঞানিরা রয়েছেন। এটা দেখে নেওয়ার পর আরো দ্রত কাজ করবে উন্নত দেশের বিজ্ঞানিরা। আশা করা যায় এই গবেষণা দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে সাহায্য করবে।
কলকাতা টুয়েন্টিফোর অবলম্বনে লিখেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনা সোনিয়া