কভেড সিনড্রোম: পুরুষের গর্ভধারণ!!

অবাক হচ্ছেন নিশ্চই। ভাবছেন এটি পাগলের প্রলাপ বৈ আর কিছুই নয়। লেখার বিষয়বস্তু নিঃসন্দেহে অকল্পনীয়, অবাস্তব। সহসাই প্রশ্ন জাগে মনে, পুরুষ কি তবে গর্ভধারণ করতে পারে?

কভেড সিনড্রোম (Couvade Syndrome) বা প্রেগন্যান্ট ড্যাড সিনড্রোম (Pregnant Dad Syndrome) পুরুষের এমন এক ধরনের অভিজ্ঞতা যেখানে সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর স্বামী তার নিজের মধ্যে সন্তান ধারণের লক্ষণগুলো দেখতে পায়। এই ক্ষেত্রে স্বামী তার মধ্যে গর্ভ ধারণের লক্ষণগুলো দেখতে পেলেও বাস্তবিক অর্থে তিনি গর্ভ ধারণ করেন না।

কভেড সিনড্রোম ফরাসী শব্দ Couver থেকে আগত যার অর্থ করলে বোঝায় পাখি যেমন করে বাচ্চা জন্মের পূর্বে তার ডিম আগলে রাখে।

সাধারণত স্ত্রীর গর্ভ ধারণের শেষ পর্যায়ে স্বামীর মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভ ধারণের প্রথম পর্যায়েও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে উন্নত বিশ্বে এই সমস্যা বেশি। সেখানে সাধারণত ২৫ থেকে ৬১ শতাংশ পুরুষ এই সমস্যায় ভোগে। থাইল্যান্ডে এই হার ৬১ শতাংশ আর সুইডেনে ২০ শতাংশ।

লক্ষণসমূহ

শারীরিক- বমি বমি ভাব, কখনও কখনও বমি হওয়া, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, ক্ষুধামন্দা, মাথা ব্যথা, দাঁত ব্যথা, পায়খানা শক্ত বা নরম হওয়া, ঘুম কম হওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেবার পেইনের মতো তীব্র ব্যথা হতে পারে।

মানসিক- অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা, বিষণ্নতা।

কভেড সিনড্রোমের কারণ

এই সমস্যার কারণ হিসেবে নানাবিধ ব্যাক্ষ্যা প্রচলিত। ইউরোপিয়ানদের মতে এটি মানসিক সমস্যা। স্ত্রী গর্ভবতী হলে স্বামীর মধ্যে হিংসা বা অপরাধবোধের সৃষ্টি হতে পারে, যেখান থেকে এই সমস্যার উৎপত্তি।

গর্ভবতী নারীর সহচার্যে সবচেয়ে বেশি তাঁর স্বামীই থাকেন। এই নিবিড় শারীরিক ও মানসিক বন্ধন থেকেও এটি তৈরি হতে পারে।

বাবা হতে যাওয়ার দুশ্চিন্তা, পারিবারিক চাপ এবং ভয় থেকেও শারীরিক এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

কানাডিয়ান এক গবেষণায় দেখা গেছে এসব লক্ষণের সময় নারী হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন (Enstrogen) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষ হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন (Testostarone) এর মাত্রা হ্রাস পায়।

এ রোগের চিকিৎসা

স্ত্রী সন্তান প্রসব করার সাথে সাথেই সাধারণত এই সমস্যা দূর হয়ে যায়। তাই সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবে ব্যাক্ষ্যা করা ও আশ্বস্ত করা।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা এবং ভবিষ্যৎ মা ও বাবা হিসবে নিজেদের অনুভূতিগুলো আদান-প্রদান করা।

স্বামীকে গর্ভবতী স্ত্রীর পরিচর্যা, চিকিৎসা ও সন্তান প্রসবের যাবতীয় ব্যবস্থার মূল ভূমিকা রাখা।

এছাড়া যোগ ব্যায়াম, আদা ও পিপারমেন্ট চা উপকারে লাগতে পারে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleশিশুর বিকাশ পর্ব ৭- আট থেকে এগারো বছর
Next articleবাইপোলার ডিসঅর্ডার-এর উপসর্গ
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here