কন্যা সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী হতে সহায়তা করবেন যেভাবে

0
137
কন্যা সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী হতে সহায়তা করবেন যেভাবে
কন্যা সন্তানকে বড় করে তোলার সময় কিছু বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে যেন তারা আত্মপ্রত্যয়ী এবং সাহসী হয়ে বেড়ে ওঠে।

যে কোন বয়সের নারীরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী করে তুলতে পারেন। এসব কিছুর জন্য প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অভিভাবকেরা কন্যা সন্তানদের বেড়ে ওঠায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারাই প্রথম সন্তানদের মাঝে আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণা প্রদান করেন। পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষাই পরবর্তী জীবনে তাকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করবে।

কৈশোর জীবন মেয়েদের জন্য সব থেকে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় শারীরিক, মানসিক, এবং ব্যক্তিসত্তার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে ওঠা যেমন কঠিন হয়ে ওঠে তেমনি তাদের জন্য অন্যদের আশা আকাঙ্ক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে ওঠাও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে অনেকেই মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ সময়ে অভিভাবকেরা যদি সহজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে কৈশোর বয়স থেকেই কন্যা সন্তানেরা এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে আত্মপ্রত্যয়ী, স্বনির্ভর, এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে।

১) শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, মনস্তাত্বিক উৎকর্ষকেও গুরুত্ব দিনঃ আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই মেয়েদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর সব থেকে বেশি গুরুত্বারোপ করে থাকে। কিন্তু এটা মনে রাখা প্রয়োজন, সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল মেয়েদের ব্যক্তিত্ববোধের বিকাশ ঘটান। তারা যেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে সেজন্য তাদের মানসিক সৌন্দর্যের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

২) বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে চারিত্রিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করুনঃ সন্তানের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করার সাথে সাথে তার চরিত্রের বিকাশের প্রতিও নজর দিন এবং তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করুন। বন্ধুদের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলতে বলুন এবং অন্যদের আবেগের মূল্য দিতে শেখান। অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে শেখান। বিভিন্ন সময়ে তাদের এসব কাজের প্রশংসা করুন।তাদের বোঝান যে, বাহ্যিক সৌন্দর্য জীবনের সব কিছু নয় বরং একজন ভাল মনের মানুষ হয়াই সব থেকে প্রয়োজনীয়।

৩) স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থায় উদ্বুদ্ধ করুনঃ বর্তমান যুগের এই ব্যস্ত সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা পরিমিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত আহার থেকে বিরত থাকি এবং ঘুমের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট গাফিলতি করি। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের উচিত সন্তানদের সাথে সাথে আমাদের নিজেদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং সবাই মিলে একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করা। পরিমিত ঘুম, আহার এবং শরীরচর্চা একজন কিশোরীকে যুবতী হয়ে ওঠার সময়কার শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

৪) সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করুনঃ অন্যের প্রতি সহমর্মিতা এবং সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার লক্ষে ইতিবাচক মন-মানসিকতার বিকাশ ঘটান প্রয়োজন। সব সময় সন্তানের ভুলভ্রান্তি গুলো তুলে না ধরে তার ভাল গুণ গুলোর দিকেও নজর দিন। সেগুলোর প্রশংসা করুন। এতে করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং বাহ্যিক চরিত্র গঠনের সঠিক দিক নির্দেশনা পাবে।

৫) সমাজের ক্ষমতাশীল এবং আত্মবিশ্বাসী নারীদের উদাহরণ দিয়ে আপনার সন্তানকেও উৎসাহিত করুনঃ আমাদের সমাজে এমন অনেক নারী আছেন যারা নিজ চেষ্টায় সমাজের সব বাঁধা কাটিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের আত্মবিশ্বাসের বলে সমাজে তারা যোগ্য সম্মান এবং স্থান পেয়েছেন। এ সকল নারীদের কথা বলে আপনার কন্যা সন্তানের মাঝেও সেই স্পৃহা জাগিয়ে তুলুন।

৬) ফলাফলের দিকে নয়, বরং সমগ্র প্রক্রিয়ার দিকে গুরুত্বারোপ করুনঃ জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা না করে আজকের দিনটিকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগাতে হবে।  আপনার কন্যাকে সকল বিপদ মোকাবেলায় মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখার শিক্ষা প্রদান করুন। প্রতিটা দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকার অনুপ্রেরণা প্রদান করুন।  আত্মবিশ্বাস অটুট রেখে জীবনের সকল উত্থান পতন সামলে নেওয়ার শিক্ষা দিন। ভবিষ্যতে যা এ হোক, আপনার আজকের শিক্ষাই আপনার কন্যার ভবিষ্যতে চলার পথের পাথেয়।

আজকের শিক্ষিত এবং আত্মবিশ্বাসী কিশোরীরাই আগামী দিনের আত্মপ্রত্যয়ী এবং সাহসী নারী নেতৃত্বের জন্ম দেবে। নিজের এবং নিজের কন্যা সন্তানের বিশ্বাস অটুট রেখে সামনে এগিয়ে চলুন।

 

 

Previous articleসবসময় মনের মধ্যে অশান্তি কাজ করে
Next articleযৌন আসক্তি বলে কি সত্যিই কিছু আছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here