এবারের পহেলা বৈশাখ ও কোভিড-১৯

0
60
পহেলা বৈশাখ ও কোভিড-১৯
পহেলা বৈশাখ ও কোভিড-১৯

আমাদের এই উপমহাদেশের গ্রাম অঞ্চলে সম্রাট আকবরের শাসন আমল থেকে পালিত হয়ে আসছে পহেলা বৈশাখ। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে শহর অঞ্চলেও পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি চালু হয়েছে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে যায় পহেলা বৈশাখ পালনের প্রস্তুতি।
গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো পুরাতন বছরের জরাজীর্ণতা কে পিছনে ফেলে দেনাপাওনা মিটিয়ে নতুনবর্ষ কে বরণ করতে নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামে ও শহরে মেলা বসে মেলা দুই থেকে তিন দিন থাকে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে ছোট বড় অনেক বাবসায়ী নানান রকম জিনিসপত্র তৈরি করেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।
কোভিড -১৯ এবারের পহেলা বৈশাখের আনন্দকে বিষাদে পরিণত করেছে। ফলে যে সকল বাবসায়ী পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে অপেক্ষা করছিলেন, প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, দিন গুনছিলেন তাদের এখন মাথায় হাত। বর্তমানে তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং আশার আলোয় আজ তারা হতাশগ্রস্ত।
আমাদের দেশের মানুষের পহেলা বৈশাখের একটি বিশেষ দিক হলো সকালে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত অথবা চেপা শুটকী ভর্তা দিয়ে পান্তা ভাত খেয়ে দিন শুরু করা। গ্রামে আজও একটা কথা প্রচলিত আছে যে, বছরের প্রথম দিনে মাছ দিয়ে খেতে পারলে সারা বছর মাছ দিয়ে খাওয়া যাবে । তাই এই দিনে প্রত্যেকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট বা বড় মাছ কেনার চেষ্টা করে। আর যাদের মাছ কেনার সামর্থ্য নেই তারাও এই দিনটি কে কেন্দ্র করে চেপা শুটকী হলেও কিনে আনে।
আজ বাংলা চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ। আর একদিন পর পহেলা বৈশাখ ১৪২৭। বর্তমানে কোভিড -১৯ এর কারণে সারা দেশ লকডাউন । দেশের শ্রমজীবি মানুষ আজ কর্মহীন। কর্মহীন মানুষ গুলো তাদের চাহিদা মতো খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছে না।
১২ এপ্রিল একটি সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম জামালপুরের অভাব গ্রস্ত মানুষ খাবার না পেয়ে ত্রানবাহী ট্রাকের খাদ্য সামগ্রী জবরদস্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা একটি ছবির কথা আমার মনে এলো। সেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন , মানুষ আর কুকুর খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে।
এই মহাবিপর্যয়ের মাঝেও কিছু মানুষ খাদ্য সামগ্রী অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ না করে নিজের ঘরের মাটির নিচে লুকিয়ে রাখছে ! মানসিক বিকার গ্রস্ত না হলে কি পৃথিবীর,দেশের,দেশের মানুষের চরম দুর্দিনে এই রকম গর্হিত কাজ কোন মানুষ করতে পারে!
লকডাউন অবস্থায় আমরা আমাদের যার যার শক্তি, সামর্থ্য অনুযায়ী একজন অন্যজনের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি। আগে যেখানে তিন বেলা খেতাম সেখানে দুই বেলা খেয়ে একবেলার অর্থ আমরা আমাদের নিজ নিজ দুর্বল আত্মীয়দের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, তাদের মনের খবর নিতে পারি।
আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যেখানে শাড়ি, জামাকাপড়,মেসিং অলংকার,বড় ইলিশ মাছ,ঘুরতে যাওয়া বাবদ খরচ ইত্যাদি এগুলো বর্তমানে আমরা যার যার অভাব গ্রস্ত পরিচিত,বাসার দারোয়ান,ড্রাইভার,বুয়া তাদের পাশে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি।
যে যার অবস্থানে থেকে একটি করে যদি ভালো কাজ করতে পারি তাহলে কি যে এক মানসিক ভালো লাগার শান্তি! তা শুধু ঐ ভালো কাজটি করার পরই (পরম শান্তির) অনুভূতি উপলব্ধি করা যাবে।
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আমাদের মানুষ হিসেবে সবার নিজের ইনসাইড (আমার ভিতরের আমি ) নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সব সময় কমফোর্ড জোনে (আরামের স্থানে) থাকতে চাই তাই আমরা নিজের সাথে নিজে দাড়াতে চাই না, ভয় পাই। আমার ইনসাইড ভালো না হলে আমি নিজে কে কখনোই ভালো ভাবে চিনবো না। আর নিজের ইনসাইড কে চেনার বা যাচাই করার এখনই ভালো সময়।
আর কিছুদিন পর আসবে পবিত্র রমজান মাস। এই পবিত্র রমজান মাসে আমরা সবাই রোজা রাখবো,বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করবো,আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইবো, তিনি যেন আমাদের সবাইকে কোভিড -১৯ এর ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করেন , সমস্ত অন্ধকার কাটিয়ে আমরা সবাই আবারও হাসি ভরা মন,হাসি মাখা মুখ নিয়ে সকাল বেলার সূর্যের স্নিগ্ধ আলো উপভোগ করতে পারি।
লেখক: আয়শা আখতার বানু ফেনসী, সাইকোলজিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,রংপুর। 

Previous articleকোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এন্টিম্যালেরিয়ালস
Next articleনালন্দা স্কুল শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি ভাবছে: বহ্নি বেপারী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here