বর্তমান বিশ্বে আমরা এখন একটা তথ্য প্রযুক্তির গ্রামে বাস করছি। ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ কাজেই ইন্টারনেট এর ব্যবহার দিন দিন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন অসুবিধার জন্য আমরা ইন্টারনেট এ খোঁজ করে থাকি। তার প্রমাণ আমরা মানসিক রোগের ডাক্তার হিসাবে প্রতিদিনই পাই। রোগীরা এসে বলেন আমার অবসেশান আছে, আমার ডিপ্রেশন আছে ইত্যাদি। আমরা যখন উপসর্গের খোঁজ করে রোগের মানদণ্ড অনুযায়ী সাজাতে যাই তখন দেখি বেশির ভাগেরই ইন্টারনেট দেখে নিজের নির্ণয় করা রোগের সাথে মিলে না। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, আমরা বা কোনো ডাক্তার সাহেব রোগের নাম বলে দেন এবং চিকিৎসা দেন তখন রোগীরা সেটা ইন্টারনেট এ কি আছে সেটা অনুযায়ী মেলাতে যান এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজের মনের মত করে চলা শুরু করেন। শহুরে, শিক্ষিত ও যুবক বয়সে বাস করা মানুষদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। ইন্টারনেটে রোগ দেখা, চিকিৎসার বিকল্প পদ্ধতি দেখা, আমরা কোনো ভাবেই নিরুৎসাহিত করতে পারি না। উন্নত দেশে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অনেক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেক রোগের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেট এ পাওয়া যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সাহায্যকারী নির্দিষ্ট সংস্থাও আছে। ইন্টারনেট মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সহযোগী হিসাবে কাজ করে ও করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় যারা ইন্টারনেট থেকে নিজের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে চান তাদের জন্য এটা সহায়ক বা ফলদায়ক হয়ে সাহায্য করে না। কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি যে ইন্টারনেট কখনোই একজন পেশাদারকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না, পেশাদারকে সাহায্য করতে পারে। আমরা যারা ইন্টারনেট থেকে সব কিছু মেলাতে চাই কয়েকটা দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। যেমনঃ
– ইন্টারনেট এর সব তথ্য সঠিক কিনা।
– ইন্টারনেট এ যা আছে তার অর্থ আমি সঠিকভাবে বুঝতে পারছি কিনা।
– ইন্টারনেট এর তথ্য আমার পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খায় কিনা।
– ইন্টারনেট এর তথ্য আদতেই আমার জন্য প্রযোজ্য কিনা।
– মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অপরিচিত শব্দের মর্মার্থ আমি বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পারি কিনা।
– আমার বোঝাটা কতটুকু সঠিক ও বাস্তব সম্মত।
– ইন্টারনেট এর তথ্য আমার জন্য উপকারী কিনা।
– এটা আমার জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রোগীরা নিজের ভালো মন্দ সুস্থতা অসুস্থতা বুঝতে চান না বা পারেন না এজন্য পরিবারের সদস্যদের এব্যাপারে নজর রাখা জরুরি।
যেসব জায়গায় প্রয়োজন সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তার সাহেবরাই বলে থাকেন এই তথ্য ইন্টারনেট থেকে দেখে নিতে। একজন ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী চলা ও ডাক্তার এর পরামর্শে ইন্টারনেট এর সহযোগিতা নিলেই ভালো ফলাফল প্রত্যাশিত। নিজে নিজে ইন্টারনেট থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা উপকারের চেয়ে অপকারই করে বলে দেখা গেছে। চিকিৎসার উপকার না পাওয়ার সাথে সাথে এটা অনেক সময় ইন্টারনেট আসক্তিরও কারণ হয়ে আসতে পারে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।