আসক্তি কী?
আপাতদৃষ্টিতে আসক্তি একটি সাধারণ শব্দ হলেও এই শব্দের ভেতরই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। আসক্তি শুধু মাদকেই নয়, আসক্তি আরো অনেক রকম হতে পারে, আরো অনেক কিছুতেই হতে পারে। খাদ্য থেকে শুরু করে অনেক কাজও আসক্তির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
আসক্তি হলো এক ধরনের অভ্যাস, আচরণ বা পরিণতি। যখন মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে, চিন্তায় বা আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যায়, যে কাজটি বা অভ্যাসটি থেকে বারবার চেষ্টা করেও বের হয়ে আসতে পারে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত জীবনে যে আচরণটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কাজটি করার জন্য মনের ভেতর এক ধরনের তোলপাড় চলতে থাকে, তখন সেটা আসক্তির পর্যায়েই পরে। নির্দিষ্ট সেই কাজ বা চিন্তাটি সম্পন্ন করার জন্য এক ধরনের প্রবল ইচ্ছা ভেতরে কাজ করে। এ ধরনের আসক্তিও সাধারণত ক্ষতিকরই হয়ে থাকে।
সে কাজটি করার পিছনে অনেক সময় নষ্ট হয়, এই কাজে সময় দিতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কাজটি সঠিকভাবে কিংবা সময়মতো কিংবা আদৌ করা হয় না। চিন্তার বা কাজের বেশিরভাগটাই সে কাজটির পিছনে চলে যায়, ধীরে ধীরে ব্যক্তি একা হতে থাকে, নিজের প্রতিও যত্ন কমে আসে, আগের ভালোলাগা বা পছন্দের কাজও কমতে থাকে, কথা দিয়ে কথা রাখতেও পারে না।
আসক্তি যেকোনো বয়সেই হতে পারে। শিশুদের যেমন হতে পারে, আবার বৃদ্ধদেরও হতে পারে। আচরণের ধরন-প্রকৃতি সাধারণত বয়সের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকে। অতিরিক্ত কার্টুন দেখা, পর্নাসক্ত, জুয়া, মাদক, এমনকি ক্ষতিকরভাবে সময় কাটানোও আসক্তির পর্যায়ে পড়তে পারে। তবে হ্যাঁ, সব আসক্তি সমান ক্ষতিকর নয়। কোনো ক্ষতি সাময়িক হতে পারে, কোনোটি আবার জীবনঘাতীও হতে পারে। জুয়া আসক্তি এবং মাদকাসক্তি এসবের ভেতর সবচেয়ে ক্ষতিকর।
মাদকাসক্তি ও অন্যান্য
মাদক শব্দটি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে মাদক হলো বিশেষ বিশেষ ধরনের কিছু কেমিক্যাল। যেসব কেমিক্যাল শরীরে ঢোকার পর কোনো না কোনোভাবে মানুষকে এক ধরনের মাদকতার অনুভূতি দেয়।
আর মাদকতা হলো এক ধরনের সাময়িক উত্তেজনা এবং ভালো লাগার অনুভব, যার রেশ শরীর কিংবা মন সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের অনেক কিছুই তখন তাকে স্পর্শ করে না। বিভিন্নজন এই অনুভতিগুলোকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেন। কেউ বলেন, ফিলিং। কেউ বলেন, হাইপ। কারো কারো ক্ষেত্রে বিষয়গুলো আবার বর্ণনারও বাইরে চলে যায়। তাদেরকে এক ধরনের ঝিম মেরে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
দু:খজনক হলো, মাদক ব্রেইনের কাঠামোগত ও কার্যক্ষমতা দু’-ধরনের পরিবর্তনই করে থাকে। ফলে মানুষের আচরণেও পরিবর্তন আসে। ইয়াবা বা এ জাতীয় কিছু কিছু নেশাবস্তু আছে, যারা ব্রেইনের ডোপামিন বহনকারী নিউরনের গঠন পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। এ ছাড়াও যেসব আসক্তি আছে- জুয়া খেলা, ইন্টারনেট আসক্তি, পর্ন-আসক্তি, ফেসবুক, শপিং, খাওয়ায় আসক্তি, ব্যায়ামে আসক্তি, আড্ডা ইত্যাদি।
এমন যেকোনো কাজ, যখন মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন জীবনের অব্যাহতভাবে ক্ষতি করে চলে, যখন মানুষ চেষ্টা করেও সে অভ্যাস থেকে সরে আসতে পারে না, সেটাকেই কোনো না কোনো মাত্রায় আসক্তি বলা যেতে পারে। তবে সেসবের নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও রয়েছে ।
উপরে উল্লেখিত যেকোনো আসক্তিই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কোনোটির জন্য সময় লাগে অনেক, কোনোটি আবার কম সময়ের ভিতরেই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তবে কথা হলো, যত তাড়াতাড়ি সচেতনতা আনা যায় বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, তত তাড়াতাড়িই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আসে।