আলঝেইমার মোকাবেলা সহায়ক হতে পারে গ্রিন টি: গবেষণা

বাঙালিরা চা রসিক বলে পরিচিত। তবে গ্রিন টি এখনো সে রকম জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। অথচ সবুজ চা আলঝেইমারের মতো রোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এক জার্মান বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করছেন।

মলিকিউলার বায়োলজিস্ট এরিশ ভাংকার প্রতিদিন বড় এক কাপ সবুজ চা খেতে বড় ভালবাসেন। বছর দশেক আগে তিনি এই অভ্যাস করেছেন। তখনই তিনি এক বিশেষ অণু নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন, যার নাম ইজিসিজি। গ্রিন টি-র মধ্যে সেটা পাওয়া যায়। ভাংকার বলেন, ‘এক পরীক্ষার সিরিজ থেকে কাকতালীয়ভাবে বিষয়টি চোখে পড়ে। আমরা গ্রিন টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলাম না। নেহাতই আচমকা আমরা তাতে গ্রিন টি-র উপকরণ ইজিসিজি নামের পদার্থের সন্ধান পাই।

কয়েক হাজার প্রাকৃতিক পদার্থ পরীক্ষার পর গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেল। সে সময়ে এরিশ ভাংকার আলঝেইমারের মতো রোগ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কে প্রোটিন ভুলভাবে ভাঁজ করা থাকলে এই রোগ হতে পারে। তাঁদের ধারণা, এমন প্রোটিন জটলা পাকিয়ে অ্যাগ্রিগেট সৃষ্টি করে নিউরনের ক্ষতি করতে পারে। ভুল করে সৃষ্টি হলেও সেই প্রোটিন অ্যাগ্রিগেট শরীরের উপর খারাপ প্রভাব রাখতে পারে। তাদের কাঠামো কিন্তু বেশ মজবুত। ভাংকার সেগুলি নিউট্রাল করার পথ খুঁজছিলেন। তিনি গ্রিন টি-র এজিসিজি দিয়ে সেগুলি ভরিয়ে দিয়েছিলেন।

যে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, অর্থাৎ বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা বা কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি করে, তাদের বুড়ো বয়সে আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রম হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এই তথ্য জানা গেছে জার্মানির লাইপসিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে।

এজিসিজি শুধু অস্বাভাবিক প্রোটিন অণুর জটলা খুলে দিল না, সেগুলি ভেঙে দিতে শুরু করলো। তাহলে কি আলঝেইমার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রিন টি একটা ভিত্তি হতে পারে? এরিশ ভাংকার বলেন, ‘আমার মনে সংশয় ছিল। এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হলেও সেগুলির মান তেমন ভালো নয়। অবশ্যই এসোটেরিক লেখাও আছে, যা একজন বিজ্ঞানীর জন্য অত্যন্ত ভীতিকর।

বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও ভাংকার এই গবেষণা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। একটি টেস্ট টিউবে পরীক্ষার পর তিনি প্রাথমিক ফলাফল পেলেন। সেই ফলাফল কি জীবন্ত কোষেও দেখা যেতে পারে? একটি মিশ্রণে জীবন্ত প্রাণীর কোষ ও ভুল ভাঁজ করা প্রোটিন রয়েছে। প্রোটিন ‘ডাই› করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রিন টি কোনো পরিবর্তন আনলেই তা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। ইজিসিজি যোগ করা হলো। গবেষকরা ২৪ ঘণ্টার জন্য সেই মিশ্রণ রেখে দেবেন। তারপর তাঁরা প্রোটিনের মধ্যে পরিবর্তন হলো কিনা, তা খতিয়ে দেখবেন।

তুলনার খাতিরে গবেষকরা প্রথমে ইজিসিজি যোগ করার ঠিক পরেই একটি নমুনা দেখছেন। তাঁরা সরাসরি কোষের মধ্যে উঁকি মারছেন। কোষের নিউক্লিয়াই নীল রঙের। ভুল করে ভাঁজ করা প্রোটিন হলো লাল বিন্দু। গ্রিন টি কাজ করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা কমে যাবে। ২৪ ঘণ্টা পর কোষগুলি কেমন দেখতে হবে? ফলাফল খুবই ভালো। লাল বিন্দুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। এরিশ ভাংকার বলেন, ‘ইজিসিজি এক অসাধারণ অণু, তাদের প্রভাবও অসাধারণ। দেখতে পাচ্ছি, আলঝেইমার রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ ভাঁজ করা প্রোটিন কীভাবে ভেঙে যাচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত এমন ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোনো অণু পাওয়া যায়নি। এরিশ ভাংকার এখন ইজিসিজি-র মতো সমান প্রভাবশালী অণু তৈরি করার আশা করছেন। সেগুলি আরও ছোট ও আরও স্থিতিশীল হবে। সামান্য এক চায়ের গাছে তৈরি কম্পাউন্ডের উপর ভিত্তি করে নতুন সুপার-মলিকিউল হবে সেটি।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

 

Previous articleকরোনা দুশ্চিন্তা থেকে আত্মহত্যা বাড়ছে ভারতে
Next articleকরোনাভাইরাস: আইসোলেশনে থাকলে মেনে চলবেন যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here