আমারা শিশুদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করতে পারিনি: ফুটবলার জুয়েল রানা

[int-intro]তারকা ফুটবলার তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বেই এসেছে সাফ ফুটবলের একমাত্র স্বর্ণপদক। পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে তিনি এখন যুক্ত আছেন ফুটবল কোচিং-এ। তিনি জুয়েল রানা। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ইচ্ছার কথা, ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আল্লাহ্‌র রহমতে ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]কোন বিষয়গুলো আপনাকে বেশি ভালো রাখে?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]প্রথমত নিজে সুস্থ থাকা, দ্বিতীয়ত আমার পরিবার ভালো আছে তো আমি ভালো আছি।[/int-ans]
[int-quote]আপনি যদি আপনার সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান তাহলে ভালো ডাক্তার বা ভালো ইঞ্জিনিয়ার না হোক চেষ্টা করলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারবেন এবং পেশা হিসেবে একটা নিশ্চয়তা পেতে পারবেন। কিন্তু খেলাধুলার ক্ষেত্রে সে নিশ্চয়তা নেই। কারণ খেলাধুলা অনেক বেশি প্র্যাক্টিক্যাল। এখানে প্রতিনিয়ত পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে টিকে থাকতে হয়। এবং অনেক বেশি খেলোয়াড় পেশাদার খেলায় যুক্ত থাকতে পারবে এমন পরিস্থিতিও আমাদের দেশে নেই। যার কারণে খেলোয়াড় বানানোর চিন্তাটা আমাদের মধ্যে না আসাটাই স্বাভাবিক।[/int-quote]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]মন ভালো অথবা খারাপ থাকাটা তো মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ থাকলে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]সেটা নির্ভর করে কেন মন খারাপ তার উপর। যেমন, কারো সাথে ঝগড়ার মাধ্যমে মন খারাপ হতে পারে, খেলায় হেরে যাওয়ার কারণে মন খারাপ হতে পারে, কারো দূর্ঘটনার খবর শুনেও মন খারাপ হতে পারে। একেক ধরনের কারণে একেক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। [/int-ans]
[int-qs]রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]মন খারাপের মতো রাগ হওয়াটাও মানুষের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।[/int-ans]
[int-qs]অনেকের মৃদু অনুযোগ আছে যে আপনি নাকি রাগী ও গম্ভীর?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]এটা মনে হয় ঠিক না। প্র্যাক্টিসের সময় বা কোচিং-এর সময় বা অন্য কোনো সময় কোনো কারণে টুকটাক রেগে গেলেও খেলার মাঠে আমি কখনও রাগিনি। ঘটনা যেমনই হোক না কেন, খেলতে নেমে কেউ আমাকে কখনও রাগতে দেখেনি বা আমি রাগিনি।  [/int-ans]
[int-qs]কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]খেলার সময় প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ভালো খেলতে হবে। খেলার প্রতি মনোযোগটা যে পুরোপুরি রাখতে পারবে সে ভালো করবে। রাগ সবকিছুর প্রতি মনোযোগ নষ্ট করে এবং মূল উদ্দেশ্য থেকে সরিয়ে আনে। এছাড়া ব্যক্তি জীবনেও আমি নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ বলেই মনে করি, তবে হ্যাঁ, কখনও রেগে গেলে সেটি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। [/int-ans]
[int-qs]আর গাম্ভীর্য্যের ব্যাপারটি?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আমার একটি সমস্যা হলো নতুন কারো সাথে মিশতে আমার অনেক সময় লাগে। নতুন কারো সাথে আমি সহজে মিশতে পারিনা। যার কারণে অনেকে আমাকে গম্ভীর স্বভাবের মনে করে। তবে যাদের সাথে মিশে যাই তাদের কেউ আমার নামে এই অভিযোগ করতে পারবে না। (হাসি)  [/int-ans]
[int-qs]খেলায় রাগ নিয়ন্ত্রণ বা মেন্টাল স্কিল ডেভলপমেন্টের কোনো প্রশিক্ষণ রয়েছে কি?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আমরা সেভাবে কিছু পাইনি। যতটুকু করেছি নিজের চেষ্টাতে। [/int-ans]
[int-qs]একজন ভালো খেলোয়াড়ের কী কী গুণাবলি থাকা প্রয়োজন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রমের মানসিকতা, নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ ইত্যাদি বেশি প্রয়োজন।[/int-ans]
[int-qs]একজন অধিনায়কের ক্ষেত্রে গুণাবলীগুলো কি কি?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]সততা, স্যাক্রিফাইস। এছাড়া আচরণ, কথাবার্তা এবং কাজের মাধ্যমে সহখেলোয়াড়দের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আদায় করে নিতে হবে। [/int-ans]
[int-qs]খেলোয়াড়ি জীবন এবং প্রশিক্ষক জীবনের মধ্যে পার্থক্য কি?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]যখন খেলতাম তখন নিজেকে নিয়েই বেশি ভাবনা ছিলো। আমার খেলা, আমার প্রশিক্ষণ, আমার ডায়েট ইত্যাদি। আর এখন চিন্তাভাবনার অধিকাংশটাই সামষ্ঠিক। এখন আমার টিমে যদি চল্লিশজন খেলোয়াড় থাকে তাহলে সেই চল্লিশজনকে নিয়েই আমার চিন্তা করতে হচ্ছে। [/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/03/jewel-rana-3.jpg[/int-img]
[int-qs]আমাদের অভিবাবকরা সন্তানদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাইলেও খেলোয়াড় হবে এমনটা চিন্তা করে না। কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে এখনও ঐ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি যেখানে একজন অভিবাবক চাইবে যে তাঁর সন্তান খেলোয়াড় হোক। আমাদের রাষ্ট্র বা সমাজ যেভাবেই হোক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা এ ধরনের পেশার জন্য একটা অবকাঠামো তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু খেলাধুলার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। যার কারণে অভিভাবকদের মধ্যেও এ চিন্তাটা আসে না যে তাঁর সন্তান একজন পেশাদার খেলোয়াড় হতে পারে। [/int-ans]
[int-qs]অর্থনৈতিক দিক থেকে যদি দেখি তাহলে কিন্তু প্রথম সাড়ির একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের আয় বেশ ভালোই?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আপনি যদি আপনার সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান তাহলে ভালো ডাক্তার বা ভালো ইঞ্জিনিয়ার না হোক চেষ্টা করলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারবেন এবং পেশা হিসেবে একটা নিশ্চয়তা পেতে পারবেন। কিন্তু খেলাধুলার ক্ষেত্রে সে নিশ্চয়তা নেই। কারণ খেলাধুলা অনেক বেশি প্র্যাক্টিক্যাল। এখানে প্রতিনিয়ত পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে টিকে থাকতে হয়। এবং অনেক বেশি খেলোয়াড় পেশাদার খেলায় যুক্ত থাকতে পারবে এমন পরিস্থিতিও আমাদের দেশে নেই। যার কারণে খেলোয়াড় বানানোর চিন্তাটা আমাদের মধ্যে না আসাটাই স্বাভাবিক। [/int-ans]
[int-qs]আগের চাইতে বাচ্চাদের এখন খেলাধুলার সুযোগও তো অনেক কম?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]এটার জন্য দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। আমারা শিশুদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করতে পারিনি। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন কখন বাইরে গেলাম কোথায় খেলতে গেলাম এসব নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হতেন না। শুধু বাধ্যবাধকতা ছিলো যেখানেই যাই মাগরেবের আযানের আগে বাসায় ফিরতে হবে। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই। এখন একটা বাচ্চাকে একা ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয় না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে এই পরিবর্তনটা চলে এসেছে। [/int-ans]
[int-qs]আমাদের ঘরমুখী হওয়ার মূল কারণ কোনগুলো বলে মনে করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]দুটো কারণ আমার কাছে মুখ্য মনে হয়। প্রথমত ঘরের বাইরে অনিরাপদ পরিবেশ। দ্বিতীয় কারণ হলো প্রযুক্তির কল্যাণে তথ্য এবং বিনোদনের একটা বিরাট অংশ এখন ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণ আমাদের বাহির দেখার একটা বড় মাধ্যম হয়ে গেছে টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের পর্দা। [/int-ans]
[int-qs]এতে কি বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শারীরিক এবং মানসিক দু’দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বাইরে একটু দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলা একটা শিশুকে মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া ইদানিং কালের বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে চায় না, ঘুমাতে চায় না। এটার একটা বড় কারণ হলো তাদের শারীরিকভাবে শক্তিক্ষয়ের তেমন কোনো সুযোগ নেই। একটা বাচ্চা যদি সারা বিকাল মাঠে খেলে আসে বা দৌড়াদৌড়ি করে আসে তাহলে সে আপনা থেকেই ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত হবে। যেটা বাচ্চাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।  [/int-ans]
[int-qs]অবসরে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]অবসর সময়গুলোতে চেষ্টা করি পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। খেলা থাকলে হয়তো মাঝে মাঝে খেলা দেখি। এইতো। [/int-ans]
[int-qs]খেলোয়াড় না হলে কি হতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]সেভাবে ভাবিনি। আসলে পরিবেশ পরিস্থিতি এমনভাবে আমার সামনে এসেছে যে পেশাদার ফুটবলার হয়ে গেছি।  [/int-ans]
[int-qs]স্মৃতিকাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]আছে।[/int-ans]
[int-qs]কোন স্মৃতিগুলো বেশি কাতর করে?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]ছোটবেলার স্মৃতি। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন আমার সারা জীবনটাই বাল্যকালের মতো হলো না। [/int-ans]
[int-qs]সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো যে, আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। চেষ্টা করুন সবাইকে ভালো রাখতে। আপনার থেকে মানুষের কোনো অপকার যাতে না হয়। মানুষের জীবনে যেটা সবচাইতে বেশি জরুরি তা হলো সততা। আসুন আপনারা আমরা সবাই মিলে সততার চর্চা করি। [/int-ans]
[int-qs]অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মনেরখবর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য?[/int-qs]
[int-ans name=”জুয়েল রানা”]ধন্যবাদ মনেরখবরকেও।[/int-ans]

Previous articleসন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য শুধুমাত্র মা-বাবার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়
Next articleগত কয়েক মাস ধরে আমার প্রচন্ড অস্থির লাগে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here