আপনি সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারে ভুগছেন না তো!

ওডিনোফোবিয়া: ব্যথাজনিত ভয়

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার কি?
সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করার আগে সতীর্থ বা অপরিচিতদের সমালোচনার কথা ভেবে অনেকেরই উৎকণ্ঠা হয়। যেমন বক্তৃতা দেওয়ার আগে মানসিক চাপ অনুভব করা বা ক্লাসে সবার সামনে শিক্ষক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে পেটের মধ্যে সুড়সুড়ি অনুভব করা। এইধরনের উদ্বেগ অনুভব করা অস্বাভাবিক নয় এবং সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই এই অস্বস্তি-ভাব কমে যায়।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার বা সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণকে এতটাই ভয় পান যে ওই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে তাঁরা অত্যন্ত ভয় ভিত আর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এমন ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ সামাজিক কাজকর্ম, যেমন অফিসের বার্ষিক সম্মেলন বা সভায় যোগদান করা, বক্তৃতা দেওয়া, বিবাহ অনুষ্ঠান বা জনসমাগমে যোগদান করা, বন্ধুদের সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া ইত্যাদি, দৈনন্দিন কাজে তীব্র উৎকণ্ঠা অনুভব করেন।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের লক্ষণ:
সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ ধরনের শারীরিক আর চারিত্রিক উপসর্গ দেখা যায়। শারীরিক উপসর্গগুলো হল কাঁপুনি, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, গা গোলানো, কথা বলার সময় তোতলানো ইত্যাদি। এইসব উপসর্গ ব্যক্তিকে নিজের সম্বন্ধে আরও বেশি সচেতন করে দেয়। তাঁর মনে হতে থাকে যে চারিপাশের সমস্ত ব্যক্তিরা ওনার উপসর্গগুলো লক্ষ করে ওনাকে নিয়ে বিদ্রূপ করছেন এবং এই ভুল ধারনা তার মধ্যে অপমান আর লজ্জা বোধ বাড়িয়ে তোলে। নিজেকে নিয়ে এত বেশি সচেতন হয়ে পড়ার ফলে ব্যক্তির ব্যবহারে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ করা যায় –

  • অন্যদের সাথে কথা বলতে হবে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া
  • পারিবারিক এবং কর্মস্থলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এড়িয়ে চলা
  • সামাজিক পরিবেশে চোখে চোখ রেখে কথা না বলা

এই উপসর্গগুলো ব্যক্তির জন্য কষ্টকর এবং তাঁর সাধারণ জীবনযাপনে বাঁধা সৃষ্টি করে। যদি আপনার পরিচিত মহলে কারো মধ্যে এই উপসর্গগুলো লক্ষ্য করে থাকেন, তাঁর সাথে এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন আর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার কী কী কারণে হতে পারে:
সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার যেসব কারণে হতে পারে তা হল –

  • বংশগত কারণে – সাধারণত দেখা গিয়েছে যে এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার বংশগত সমস্যা, যদিও এটা এখন স্পষ্টভাবে জানা যায়নি যে উদ্বেগ জিন-বাহী সমস্যা না কি বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে পরিবারে সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে করে উদ্বেগে ভুগতে আরম্ভ করে।
  • পূর্ব অভিজ্ঞতা – শৈশবকালে বা স্কুলে অবমাননার ঘটনা বা উৎপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকতে পারে যা পরবর্তী সময়ে তাঁকে উদ্বেগ-গ্রস্ত করে তুলেছে।
  • শৈশবকালে সঙ্কেত – যে শিশুরা খুব লাজুক বা মুখচোরা হয়, কৈশোরকালে তাঁদের মধ্যে সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের চিকিৎসা:
সামাজিক উদ্বেগ বিকার রূপে রোগীকে খুবই বিচলিত করে দিতে পারে। চিকিৎসার সাহায্যে রোগী নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পান আর সামাজিক আড়ষ্টতার সাথে মোকাবিলা করতে পারেন। অন্যান্য উদ্বেগ বিকারের মতই সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের চিকিৎসা ওষুধ, সাইকোথেরাপি বা দুটো পদ্ধতির সম্মিলিত ব্যবহারে করা হয়। কগ্নিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপি (সি বি টি) সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপযোগী। ওষুধের সেবন রোগীর উদ্বেগ আর অস্বস্তি-ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কে কতদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে সেই সময়সীমা প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা, কিন্তু নিয়মিতভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের রোগীর পরিচর্যা:
আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের কোন উপসর্গ লক্ষ করেন, তাঁর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করুন। প্রথমেই এই রোগের ব্যাপারে বিষদে জানুন যাতে আপনি রোগীর সমস্যা ভাল করে বুঝতে পারেন। রোগীকে চিকিৎসা আর থেরাপির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানান এবং বিশেষজ্ঞয়ের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন। দরকার বুঝলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ওনার সঙ্গে যান। চিকিৎসা চলা কালীন রোগী যদি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন, তাঁর সাথে ধৈর্য-পূর্ণ ব্যবহার করুন। আপনার সহযোগিতা তাঁকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।

সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডারের সঙ্গে মোকাবিলা:
আপনার যদি মনে হয় যে আপনি সোশ্যাল এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার বা সোশ্যাল ফোবিয়ায় ভুগছেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধা অনুভব করেন, তাহলে আপনার বিশ্বস্ত কোন পরিচিত জনকে সব কথা খুলে বলুন এবং তাঁর সাথে চিকিৎসকের কাছে যান। নিজের জীবন শৈলীতে কিছু পরিবর্তন আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে। সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বিশেষজ্ঞয়ের মতামত অনুযায়ী একটা দিনলিপি নির্ধারণ করে সেটা মেনে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করা আর পরিযাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো সুস্থ থাকর জন্য একান্তভাবে জরুরী। একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তাঁদের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা বলুন। অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসার ভালো ফল পেতে অনুমানিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। আশা ছেড়ে দেবেন না। চিকিৎসা চালিয়ে যান।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু মজাদার টিপস
Next articleকরোনা পরবর্তী কী মানসিক পরিবর্তন হতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here