আপনি অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন!

সমস্যা: আমি প্রায় ২০ বছর ধরে নিন্মোক্ত সমস্যাগুলোতে ভুগছি-
(১) বিষন্নতা
(২) মানুষকে অহেতুক ভয় পাই, মানুষের কোলাহল, শব্দ, শুনলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
(৩) প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, দিনের শুরু থেকে দিন বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা বাড়তে থাকে।
(৪) কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না,একাকি থাকতে ভালো লাগে।
(৫) শুচিবায়ু
(৬) সব সময় মানসিক ভাবে দুর্বল ও কাহিল লাগে।
(৭) মানসিক ভাবে তো বটেই শারীরিক ভাবেও দুর্বল লাগে। কোনো কাজ করতে
ইচ্ছে করে না।
আমার এই সমস্যাগুলোর সমাধান দিলে উপকার হয়।
-মেহেদি হাসান।
পরামর্শ: ধন্যবাদ আপনার প্রশ্ন এবং রোগের বিবরণের জন্য। আপনি আপনার অসুস্থতা এবং এর থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে বেশ সচেতন, বোঝা যাচ্ছে। আপনি বেশ কিছু উপসর্গের কথা উল্লেখ করেছেন। রোগ নির্ণয় এবং কার্যকরী চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে এ ব্যাপারে আরও একটু বিস্তারিত জানার প্রয়োজন রয়েছে।
যেমন- আপনার রোগটি কোন উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়েছিল, তখন আপনার বয়স কত ছিল, আপনার শুচিবায়ু কি ধরনের (অর্থাৎ যে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা, আচরণ, বস্তু বা প্রতিকৃতি আপনার মাঝে অস্বস্তি তৈরী করছে তার বিবরণ,আর তা রোধ করতে আপনি যা করে থাকেন তার বিবরণ), কোনো চিকিৎসা নিয়েছেন কিনা, যদি নিয়ে থাকেন কি ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন এবং তাতে কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা? পরিবারে কারও মানসিক রোগ আছে কিনা? শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিনা? প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পাওয়ার ইতিহাস আছে কিনা? আপনার মাদকদ্রব্য গ্রহণ করার ইতিহাস আছে কিনা? আপনি কি বিশ্বাস করেন যে কেউ আপনার ক্ষতি করতে পারে, মেরে ফেলতে পারে? অন্য কেউ যা দেখে না বা শোনে না কিন্তু আপনি দেখেন বা শোনেন (চেতন অবস্থায়)এমন মতিভ্রম হয় কিনা?…ইত্যাদি।
তবে, আপনি যতটুকু বিবরণ দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনি অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। কারণ, দীর্ঘদিন এ রোগটিতে ভুগলে অবশেসন এবং কম্পালসনের কারণে রোগীর মাঝে প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরী হয় , যার ফলস্বরূপ আনুষঙ্গিক কিছু শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ যেমন; মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে সমস্যা, খাবারে অরুচি, ভুলে যাওয়া, দুর্বল লাগা, ক্লান্তবোধ করা, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, বিষন্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
সঠিক এবং নিয়মিত চিকিৎসায় রোগটি মোটামুটি নিরাময়যোগ্য। রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, কারও কারও ক্ষেত্রে সারাজীবনব্যাপী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। ওষুধ, সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা আপনার সুস্থতার জন্য একান্ত প্রয়োজন। আপনি আপাতত Cap Fluoxetine 20 mg সকালে ১টা করে ৭ দিন, তারপর ২টা করে সকালে ১৪ দিন খান। সাথে Tab.Clonazpam .5 mg সকালে ১টা ও রাতে ২টা করে খান এবং যত দ্রুত সম্ভব মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে থেকে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
আপনি জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা এর ওসিডি ক্লিনিক অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা এর ওসিডি ক্লিনিক থেকে সরকারি পর্যায়ের সেবা নিতে পারেন।


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।
এমএ/এমএসএ

Previous articleস্বাগত ২০১৮
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন আইন: থাকছে জেল-জরিমানা
সহকারি অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here