স্কটল্যান্ড সরকার ২০২২ সালের মধ্যে দেশের আত্মহত্যার পরিমাণ ২০ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেখানের মানসিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ‘ক্লেয়ার হহি’ এই লক্ষ্যে একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু, আত্মহত্যা প্রতিরোধ দাতব্য সংস্থ্যা ‘সামারাতিয়ান্সে’র মতে স্কটল্যান্ড সরকার আত্মহত্যার বিষয়টিকে প্রয়োজনীয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না।
মিস হহি জোর গলার সাথে দাবী করছেন যে, স্কটল্যান্ড ‘আত্মহত্যার দ্বারা মৃত্যুর পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে। এই ব্যাপারে আরো অনেক কিছু করা বাকি আছে’।
সরকার জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লিডারশীপ দল করার পরিকল্পনা করেছে। যার প্রধান হিসেবে থাকবে স্কটল্যান্ড পুলিশের সাবেক ডেপুটি চিফ রোজ ফিটজপ্যাট্রিক। তার তাহবিল ফান্ড আছে ৩ মিলিয়ন ডলার/ইউরো।
২০১৭ সালে স্কটল্যান্ডে মোট ৬৮০ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। যা প্রতি লাখে ১২.৫ জন। এই সংখ্যাটা গত কয়েক বছর ধরেই অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। ২০০২ সালের প্রতি লাখে ১৮ জন থেকে এই সংখ্যা ক্রমাগত কমে আসছে। যা কিনা ১৫ বছরে প্রায় ২০ শতাংশ কমে যাওয়ার সমান। মন্ত্রীরা আশাই করছেন আগামী বছরে এর মাত্র আরো কমে যাবে।
পরিকল্পনায় যে সকল কাজের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে-
১. ২০১৯ সালের মে মাসের মধ্যে এনএইচএস কর্মীসহ সকল সরকারী ও বেসরকারী সেক্টরে নতুন করে মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদাণ করা।
২. আত্মহত্যার মাধ্যমে সংঘটিত সকল মৃত্যুকে পুনরায় পরীক্ষা করা, যাতে করে তা থেকে শিক্ষা লাভ করা যায়।
৩. সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে একটি নতুন জাতীয় লিডারশিপ দল তৈরি করা।
৪. ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৫. জনগনকে সচেতন করার জন্য ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করা।
সরকারের পূর্বের আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশল ২০১৬ সালে শেষ হয়। এরপর বিপক্ষ পার্টি এবং স্বাস্থ্য দলগুলো নতুন পরিকল্পনা করার জন্য লেগে পরে।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে একটি খসড়া পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সাথে সাথেই তা হয় তীব্র সমালোচনার শিকার। সামারাতিয়ানসের জেমস জপলিং, হলিরুড হেলথ কমিটিকে বলেন এই পর্যায়ে এসে ‘গ্রুপটা খুবই হতাশাজনক ছিল’। তিনি মন্ত্রীদের আরো বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে বলেন।
তবে পরিকল্পনাটি সমাপ্ত হওয়ার পর তা উষ্ণ অভ্যর্থনা পায়। স্কটল্যান্ড এসোসিয়েশন অফ মেন্টাল হেলথ (এসএমএইচ) বলেন ‘ইহা আত্মহত্যাকে একটি জাতীয় ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেখায়’।
কার্যনির্বাহী কমিটির প্রধান বিলি ওয়াটসন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আত্মহত্যার সংখ্যা কমানোর বিষয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি, তা সত্ত্বেও আমাদের আত্মসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। যখন কেউ আত্মহত্যায় মৃত্যু বরণ করে তখন এটার প্রভাব আর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না’।
মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন স্কটল্যান্ডের প্রধান লি নিফটনও এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বলেছেন, ‘এখন এটাকে বাস্তবে পরিণত করতে হবে। যে দুঃখ এবং হতাশা একটা মানুষকে তার নিজের জীবন নিয়ে নিতে বাধ্য করে তা কোনো সমাজেরই সহ্য করা উচিত নয়। এখনই সময় স্কটল্যান্ডকে আত্মহত্য প্রতিরোধে বিশ্ব নেতা হিসেবে তুলে ধরার’।
মিস হহি আগে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবিকা ছিলেন। জুন মাসে মরিন ওয়াটের কাছ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদটি গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন ‘প্রতিটা জীবনের মূল্য আছে এবং আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বা অনিবার্য হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। গত কয়েক দশকে স্কটল্যান্ড আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে আরো অনেক কিছু করা বাকি আছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি স্কটল্যান্ড চাই যেখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য এবং যেখানে আত্মহত্যার চিন্তা করছে বা কাছের কাউকে হারিয়েছে এমন কেউ প্রয়োজনীয় সব রকম সাহায্য পায়’।
এ বছরের শুরুতে স্কটল্যান্ড পুলিশ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন মিস ফিটজপ্যাট্রিক। তিনি বলেন, ‘নতুন লিডারশীপ গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করাটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। আমি এই দলটির তাৎপর্য এবং একটি পরিসরের সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো। এ বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী, আমরা সবাই মিলে একটা পরিবর্তন ঘটাতে পারবো’।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
অনুবাদক: মাঈশা তাহসিন অর্থী।