আত্মহত্যা কি?
আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই নানা রকম সমস্যা থাকে। তার কোনটা ছোট সমস্যা আবার কোনটা বড় বা বেশী সমস্যা। বেশি সমস্যা যখন হয় তখন আমরা নানাভাবে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া করি। কেউ সমস্যা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন, কেউ সমস্যা মোকাবেলা করে, আবার কেউ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য নিজের জীবনই শেষ করে দিতে চায়। যারা সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য জীবন শেষ করে দেয়ার ব্যাপারে ভাবে তারা সাধারণত কিছুটা দুর্বল মনের অধিকারী হয় এবং তাদের বুদ্ধির তুলনায় আবেগ বেশী কাজ করে। তবে কিশোর কালে ছেলেমেয়েরা এমনিতেই বেশী আবেগপ্রবণ থাকে তাই তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশী দেখা যায়।
আত্মহত্যার কারণসমূহ-
মানসিক সমস্যা: অনেকে মানসিক রোগের কারণে সুস্থ মনে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাই বিভ্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করে বা করার চেষ্টা করে।
চরম অর্থনৈতিক সমস্যা: ক্রমাগত অত্যন্ত অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে এবং সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ খুঁজে না পেলে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারলেও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঝগড়া/মারামারি: বাড়িতে কোন কারণে খুব বেশী ঝগড়া/মারামারি হলে মানুষ উত্তেজিত হয়, রাগ হয় বা প্রচন্ড কষ্ট পায়। এসব আবেগের ফলে অহসায় বোধ করে, বিষণ্ণতায় ভোগে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
যৌন নির্যাতন: যৌন নির্যাতন বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার একটি বড় কারণ। কোন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে। নিজের শরীরকেই অপবিত্র মনে করে। মনে করে সে আর কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবে না এবং তাঁর ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। এই ধরনের চিন্তার ফলে সে চরম অহসায় বোধ করে এবং ভাবে আত্মহত্যা ছাড়া তার আর কোন রাস্তা নেই।
পড়ালেখায় অসফলতা: লেখাপড়ায় ব্যর্থ হলে বা অসফল হলে মানুষ আত্মহত্যা করতে চায়। কিশোর কিশোরীদের মধ্যে এটা বেশী দেখা যায়। খারাপ ফল হওয়ার কারণে বাবা/মা/ভাই/বোন কেউ বকা দিবে বা পরিবারে তাকে গ্রহণ করা হবে না অথবা নিজেই নিজের ফলাফল গ্রহণ করতে না পারার কারণে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
প্রেমে ব্যর্থতা: ভালোবাসার মানুষ প্রতারণা করলে বা অন্য কোন কারণে বিচ্ছেদ হলে এই অবস্থা মেনে নেবার মানসিকতার অভাবে অনেকে আত্মহত্যা করে বা করার চেষ্টা করে। কিশোর কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা অনেক বেশী দেখা যায়।
পারিবারিক নির্যাতন: ছেলেমেয়দের অতিরিক্ত শাসন, মারা ও নানাভাবে অপমানিত করার ফলে তারা অসহায় বোধ করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
শারীরিক নির্যাতন: অনেকে ছেলেমেয়েদের শৃঙ্খলায় আনার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে থাকে। আবার স্বামী-স্ত্রীও নিজেরা নিজেদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন করে থাকে। এ কারণেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়-
আত্মহত্যা করার মতো চরম সিদ্ধান্ত যাতে করে না নেয় তার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে, বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের, এবং অবশ্যই এক্ষেত্রে বাবা-মাকে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। আত্মহত্যা প্রবণতা বন্ধের জন্য যা যা করা যেতে পারে তা হল:
ছেলে-মেয়েদের সাথে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা।
শিশুকে গুরুত্ব দেয়া, প্রশংসা করা, কাজের দায়িত্ব দেয়া বা কাজে অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া প্রভৃতির মাধমে তার নিজের প্রতি ভালোবাসাকে জাগিয়ে তোলা।
শিশুকে অন্যের সামনে সমালোচনা না করে তার ভুল তাঁকে একান্তে (শুধু শিশুর সামনে) বুঝিয়ে বলা।
শিশুর আবেগের উপর যেন নিয়ন্ত্রণ থাকে সেজন্য শিশুর সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
শিশু কিশোরদের তাদের সমস্যা বলতে উৎসাহিত করা।
কিশোর কিশোরীদের সমস্যা শোনা, বোঝার চেষ্টা করা ও সমাধানের ব্যাপারে সাহায্য করা।
ছেলে মেয়েদের কিছু দিন ধরে মন খারাপ লক্ষ্য করলে কাউন্সেলিং সেবার সুযোগ গ্রহণ করা।
শিশু কিশোরদের পরিক্ষার ফলাফল খারাপ হলে তাকে বকাবকি না করা বা না মারা। বরং সে যাতে পরবর্তীতে ভালো ফলাফল করে তার জন্য তাঁকে উৎসাহিত করা ও সাহায্য করা।
শাস্তি দিয়ে নয় বরং ইতিবাচক শৃঙ্খলা শেখানোর উপায় ব্যবহার করে শৃঙ্খলা শেখানো।
কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হলে তাকে বুঝতে দেয়া যে সে দোষী নয় বরং যে নির্যাতন করে সে দোষী। নির্যাতিতের সামনে অস্থিরতা না দেখিয়ে বরং শান্ত থাকা, তার সাথে নরম ব্যবহার করা।
ছোটবেলা থেকেই শিশুদের life skills বা জীবন দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করা। স্কুলের সিলেবাসে এধরনের কার্যক্রম রাখা।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।