আত্মহত্যাকে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে

0
21

দেশে চলছে আত্মহত্যার নীরব মহামারি। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেই কোনো উদ্বেগ। এখনো আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। অথচ একে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

গত শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা:হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ বিষয়ক ভাচু‌র্য়ালি সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীসামাজিক ও মানসিক স্বাস্হ্যবিষয়ক সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরে তরুণ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যাকারীদের ৬০ শতাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর আত্মহত্যার প্রবণতা নারী শিক্ষার্থীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে অনেক বেশি। দেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্হানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংখ্যাটি তুলে ধরেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়মেডিক্যাল কলেজপ্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আত্মহত্যার এক নীরব মহামারি চলছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের আগের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেনগত দেড় বছরে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আমাদের সব প্রচেষ্টা করোনা মহামারিকে নিয়ে। কিন্তু আত্মহত্যার মতো এমন একটি মহামারি সামলাতে সুচিন্তিতপরিকল্পিত কোনো প্রচেষ্টা নেই।

জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেনদেশের আইনে আত্মহত্যাকে এখনো একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ প্রতিবেশীসহ অনেক দেশে এটিকে একটি মানসিক স্বাস্হ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেনআত্মহত্যা ও আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে দেখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বেসরকারি সংগঠন ইনোভেশন ফর ওয়েলবিইংয়ের প্রতিষ্ঠাতা মনিরা রহমান বলেনআত্মহত্যার চিন্তা করাআত্মহত্য্যার চেষ্টা করা এবং আত্মহত্যা সম্পাদনকারীদের অনেক লক্ষ্মণ চিহ্নিত করা যায়। পরিবারের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগা সদস্যরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাদের এ সব লক্ষণ অন্য সদস্যদের বুঝতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সহমর্মিতা দিয়ে কাছে নিতে হবে। তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘পত্রিকা বিশ্লেষণ করে আমরা আত্মহত্যার কারণগুলো দেখে বুঝতে পেরেছিবাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছেসমস্যা তার চেয়েও গভীর। নতুন পরিস্হিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর শিক্ষা এই শিক্ষার্থীরা পায় নাবিধায় তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটা সামলাতে পারে না। আমরা যদি তাদের শিখাতে পারি যে ভালোমন্দ যা-ই ঘটুক না কেনতা জীবনেরই অংশ এবং একটা সময় পর ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে এই শিক্ষার্থীরা নিজেদের খারাপ সময়টাও কাটিয়ে উঠতে পারবে।

সম্মেলনে আরো উপস্হিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানঅভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করআঁচল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামিরা আক্তার সিয়াম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বুশরা পাটোয়ারী। মূল বক্তব্য উপস্হাপন করেন ফারজানা আকতার।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous article‘মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিনিয়োগ নিজেকে দেওয়া সেরা উপহার’
Next articleনিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন সিদ্দিকুর রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here