আগামী প্রজন্মকে নতুন একটি পৃথিবীর সন্ধান দিতে চাই : মাসুদ সেজান

[int-intro]দেশের এই সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার ও নির্মাতা মাসুদ সেজান। শৈশব থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংস্কৃতিক চর্চায়। ছাত্ররাজনীতি, আবৃত্তি ও নাট্যর্চচা করে তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের সংস্কৃতি-অঙ্গনের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি নাটকের সাথে যুক্ত। সম্প্রতি তিনি নিজের নাটক, সাংস্কৃিতিক র্কমকাণ্ড, নিজের মন ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মনের খবর-এর সাথে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মামুন মিজানুর রহমান।
[/int-intro]
[int-qs]কীভাবে আপনার সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]স্কুলে পড়াকালীন সময়ে স্কাউট দলে যুক্ত হয়েছিলাম, বিভাগীয় সমাবেশের একটি অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়েই আমার সাংস্কৃতিক চর্চার শুরু বলা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তীতে আবৃত্তি করেছি। ছাত্র রাজনীতির সময়টাতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পথনাটক রচনা করি এবং নির্দেশনা দিই। কলেজের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নের সময়, জয়পুরহাট লাইব্রেরী অ্যান্ড ক্লাবের সদস্য হয়ে আমি বিশ্বসাহিত্যের ভুবনে প্রবেশ করি। বলা যেতে পারে, আমার লেখালেখি এবং সাংবাদিক জীবনের শুরুটা হয়েছিল তখন।[/int-ans]
[int-qs]শৈশবে কী হতে চেয়েছিলেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]তখন সম্ভবত সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন জেলা শিক্ষা অফিসার আমাদের স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন, তিনি সবাইকে এক এক করে প্রশ্ন করছিলেন, বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও? স্কুলে আমার সহপাঠীদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পাইলট হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেও আমার মনে আছে, আমি বলেছিলাম, বড় হয়ে আমি পরিচালক হতে চাই। তখন মাত্র সিনেমা দেখা শুরু করেছি, কেন আমি নায়ক না হয়ে পরিচালক হতে চেয়েছিলাম, তার ব্যাখ্যা এখনও আমার কাছে অস্পষ্ট।[/int-ans]
[int-quote]যখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি; আমি কবিতা পড়ি, কবিতা আমার মন ভালো করার প্রধান খাদ্য। এছাড়া আমার ছেলেকে সময় দেই, আমার মন খারাপ হলেই তাকে নিয়ে ঘুরতে যাই। সবারই নিশ্চয় একটি নিজস্ব পৃথিবী আছে, নানা হট্টগোলে সেটা আমরা ভুলে যাই। মাঝে মাঝেই নিজের পৃথিবীতে ডুব দিতে হয়। দেওয়া ভালো, নিজেকে চেনার জন্য। আপনি নিজেকে যত বেশি ভালোবাসতে পারবেন, আপনার মন তত ভালো থাকবে।[/int-quote]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন? কী ধরনের স্বপ্ন?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]স্বপ্নই একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, আমি অবশ্যই স্বপ্ন দেখি। আমি খুব করে কামনা করি, মানুষের মনের কালিমাগুলো দুর হয়ে যাক। মানুষের মধ্যে শুভচিন্তা উদয় হোক। হিংসা, লোভ, লালসা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা দূর করে মানুষ হয়ে উঠুক সত্য ও সুন্দরের পূজারি।[/int-ans]
[int-qs]রাগেন? কী ধরনের পরিস্থিতিতে রাগেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”] অনিয়ম, নীতি ও নৈতিকতার বিপরীতে কোনো কিছু দেখলেই আমার রাগ হয়। সেটা গরীব কিংবা ধনী বলে কোনো কথা নেই, একজন রিকশাওয়ালা যদি ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা চান, তাহলেও রাগ করি, আবার একজন শিল্পপতি যদি প্রভাব খাটিয়ে আমাকে আমার ন্যায্য পাওনা থেকে ঠকানোর চেষ্টা করেন অথবা হয়রানি করেন তাহলেও রাগ করি। একবার তো এক অফিসে গিয়ে এক কর্মকর্তার গায়ের ওপর তারই টেবিলে চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছিলাম।[/int-ans]
[int-qs]কীভাবে রাগ দমন করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]একটা সময়ের পর, হয়তো কিছুটা সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে, এছাড়া লক্ষ করেছি, আমি যে পয়েন্টে রাগ করছি, সেটা আশেপাশের কেউ আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নিতে পারছে না, তারা ঘটনাটি দেখছে, দেখে আমাকে একটি নেগেটিভ জায়গায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, ভেতরের ক্ষতটা খুঁজে বের করবার প্রয়োজন মনে করছে না। বলতে পারেন, সত্যের পথে না এসে, তারা বরং আমার দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। আমাকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এগুলো আমি বুঝি, তারপরও রাগটাকে পুরোপুরি দমন করতে পারি না, ওই যে বললাম, কোনো অনিয়ম দেখলে, নীতিহীনতা দেখলেই মাথার মধ্যে কী যেন একটা হয়ে যায়।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতায় ভোগেন, কী ধরনের স্মৃতি?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]স্মৃতি তো জীবনেরই একটা পার্ট। আমার জীবনের ভালো এবং খারাপ, সব ধরনের স্মৃতির প্রতিই আমার দুর্বলতা আছে। কারণ আমি মনে করি, আমার জীবনের প্রতিটি ঘটনাই এক একটি অভিজ্ঞতা, যে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার ওপর দাঁড়িয়েই আমি আজকের মাসুদ সেজান হতে পেরেছি। তবে একেবারে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো, যেমন- বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, আব্বার সাথে মাছ ধরতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যায়। আমি আবার সেই সময়টাতে ফিরে যেতে চাই।[/int-ans]
[int-qs]আপনি তো আবৃত্তির সাথে যুক্ত ছিলেন, নতুন আবৃত্তি ও নাট্যশিল্পীদের কীভাবে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]শিল্পের শটকার্ট কোনো পথ নেই, শিল্প একটি চর্চার নাম। পড়তে হবে, শুনতে হবে, দেখতে হবে, ভালো ও মন্দের পার্থক্য বুঝতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।[/int-ans]
[int-qs]আপনি মনের যত্ন কীভাবে নেন? এক্ষেত্রে অন্যদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]যখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি; আমি কবিতা পড়ি, কবিতা আমার মন ভালো করার প্রধান খাদ্য। এছাড়া আমার ছেলেকে সময় দেই, আমার মন খারাপ হলেই তাকে নিয়ে ঘুরতে যাই। সবারই নিশ্চয় একটি নিজস্ব পৃথিবী আছে, নানা হট্টগোলে সেটা আমরা ভুলে যাই। মাঝে মাঝেই নিজের পৃথিবীতে ডুব দিতে হয়। দেওয়া ভালো, নিজেকে চেনার জন্য। আপনি নিজেকে যত বেশি ভালোবাসতে পারবেন, আপনার মন তত ভালো থাকবে।[/int-ans]
[int-qs]হতাশায় ভোগেন? হতাশা কাটাতে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]হ্যাঁ, ভুগি তো। মাঝে মধ্যেই মনে হয়, কোথায় আছি, কাদের সঙ্গে আছি, কী করছি এইসব। আমি হতাশা কাটাতে আবারও কাজে মন দেই। আমি বিশ্বাস করি, আমার কাজের মধ্য দিয়েই একদিন সব সত্য উদঘাটিত হবে। বিভ্রান্তরা সুস্থতার পথে ফিরে আসবে।[/int-ans]
[int-qs]সুস্থ মনের জাতি গঠনে আমাদের করণীয় কী?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]প্রথমেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পাশ্চাত্য বা নকল সংস্কৃতি নয়, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির দিকে ফিরতে হবে। সর্বোপরি, একটি ন্যায় বিচারের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আমার ধারণা, তাহলেই যারা অসুস্থ, তারা এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্য দিয়েই সুস্থ হয়ে উঠবেন।[/int-ans]
[int-qs]এই মুহুর্তে কী নাটক নির্মাণ করছেন? এছাড়া নতুন কোনো কাজ?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]এনটিভিতে প্রতি সোম ও মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০মিনিটে ‘ডুগডুগি’ নামে আমার একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাভিশনে আমার অারো একটি ধারাবাহিক নাটক ‘খেলোয়াড়’ এর প্রচার শুরু হবে, মূলত এই দুইটি কাজ নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। এর বাইরে আগামী ঈদের জন্য দু’একটি কাজ করতে পারি, তারও প্রস্তুতি নিচ্ছি।[/int-ans]
[int-qs]আপনার জীবনের লক্ষ্য কী?[/int-qs]
[int-ans name=”মাসুদ সেজান”]খুব ছোট্ট করে বললে, আমি আমার জীবনে যা দেখলাম, শিখলাম, বুঝলাম তা নিয়ে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই, যার মধ্য দিয়ে আমি আমাকেই পেছনে ফিরে দেখব এবং আমার আগামী প্রজন্মকে নতুন একটি পৃথিবীর সন্ধান দেব।[/int-ans]

Previous articleবাংলাদেশে অটিজম চিকিৎসার আদর্শ কেন্দ্র ইপনা
Next articleশৈশবের মানসিক অবহেলা যেভাবে পারস্পরিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here